ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্পের আরেক মামলা খারিজ

পড়ে গিয়ে আহত বাইডেন, সুস্থতা কামনা বর্তমান প্রেসিডেন্টের

প্রকাশিত: ২২:২১, ১ ডিসেম্বর ২০২০

পড়ে গিয়ে আহত বাইডেন, সুস্থতা কামনা বর্তমান প্রেসিডেন্টের

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার পোষা কুকুরের সঙ্গে খেলতে গিয়ে আহত হয়েছেন। পা পিছলে পড়ে গিয়ে তিনি গোড়ালিতে চোট পেয়েছেন। বাইডেনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক কেভিন ও’কনোর এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বাইডেনের উদ্দেশে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। খবর সিএনএন ও এনবিসি নিউইয়র্কের। কেভিন ও’কনোর বলেন, বাইডেন তার পোষা কুকুরের সঙ্গে খেলতে গিয়ে পিছলে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছেন। এতে তার পায়ে চুলের মতো ফ্র্যাকচার হয়েছে। সিটি স্ক্যানের পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। চিকিৎসক কেভিন ও’কনোর বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের জন্য তাকে (বাইডেন) একটি ওয়াকিং বুট পরে থাকতে হবে। ট্রাম্পের আরেক মামলা খারিজ ॥ ডাকযোগে আসা ভোট বাতিল ও সরকারীভাবে ভোটের প্রত্যয়ন (সার্টিফিকেশন) বন্ধের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্য মাইক কেলিসহ রিপাবলিকানদের করা আরেকটি মামলা খারিজ করে দিয়েছেন পেনসিলভানিয়া সুপ্রীমকোর্ট। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার রাতে মামলাটি খারিজ করে আদালত। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের করা আরেকটি মামলা খারিজ হলো। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার সমর্থকেরা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। শুধু তাই নয়, বাইডেনের জয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে গিয়ে পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তারা। অভিযোগ তুলছেন নির্বাচনে কারচুপির। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেননি তারা। এই প্রেক্ষাপটে তাদের করা একের পর এক মামলা মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে। শনিবার খারিজ হওয়া মামলাটিও ছিল এমনই এক মামলা। শনিবার রাতে ট্রাম্পের করা মামলা সর্বসম্মতভাবে খারিজ করেন পেনসিলভানিয়ার আদালত। একই সঙ্গে ভোটের প্রত্যয়ন বন্ধ করা হবে না বলেও জানিয়ে দেয়া হয়। রায়ে সুপ্রীমকোর্টের বেঞ্চে থাকা সাত বিচারপতির পাঁচজনই লেখেন, এই মামলাটি অনেক দেরিতে করা হয়েছে। ডাকযোগে ভোটের নিয়ম অঙ্গরাজ্যটি এক বছর আগেই ঠিক করেছিল। আর মামলাটি করা হয়েছে ওই নিয়মের আওতায় লাখো পেনসিলভানিয়াবাসীর ভোট দানের কয়েক সপ্তাহ পর। পেনসিলভানিয়া সুপ্রীমকোর্টে খারিজ হওয়া মামলা নিয়ে রিপাবলিকানদের আর এগোনোর সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে রায়ে। এর আগে নিম্ন আদালত থেকে বলা হয়েছিল, ভোট গ্রহণের কয়েক সপ্তাহ পর করা এই মামলার কারণে কয়েকটি কাউন্টিতে ভোটের প্রত্যয়ন আটকে যেতে পারে। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের কাউন্টিগুলো এরই মধ্যে তাদের ভোটের প্রত্যয়ন সম্পন্ন করেছে। অঙ্গরাজ্যটিতে বাইডেন ট্রাম্পের থেকে ৮০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে পেনসিলভানিয়ার এক ফেডারেল বিচারক ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের করা অনুরূপ একটি মামলা খারিজ করেন। পেনসিলভানিয়ার লাখো ভোট বাতিলের জন্য ওই মামলা করা হয়েছিল। কিছুদিন আগে পেনসিলভানিয়ার মিডল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হওয়া আরেকটি মামলায় বিচারক এতই বিরক্ত হন যে, তিনি মামলাটি খারিজ করে দেয়ার রায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ বলে আখ্যা দেন। আর গত শুক্রবার পেনসিলভানিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়োগ দেয়া এক বিচারক যখন, একই ধরনের আরেকটি মামলা খারিজের সময় বলেন, এই মামলায় আনা অভিযোগের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই এবং সেই হিসেবে কোন ভিত্তিও নেই। ট্রাম্প এবার সুপ্রীমকোর্টে ॥ আইনজীবীরা নন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন ভোটাররা। মামলার নথি নয়, ভোটের ফল নির্ধারিত হয় ব্যালটে। এমনই মন্তব্য করে ট্রাম্পের পেনসিলভানিয়ার ভোট বাতিলের আর্জি স্রেফ খারিজ করে দিলেন ফেডারেল আপীল আদালতের বিচারকেরা। ফলে ভোট নিয়ে জট পাকানোর চেষ্টায় ট্রাম্পের ছক ফের ভেস্তে গেল মাঝপথে। যদিও ট্রাম্পের দুই আইনজীবী এবার দ্বারস্থ হচ্ছেন সুপ্রীমকোর্টের। দীর্ঘ সময় ধরে গণনার পর পেনসিলভানিয়ায় হেরেছেন ট্রাম্প। জয়ী বাইডেন। ভোটের ফল ঘোষণার পরেও তার ওপর ইনজাংশন জারির চেষ্টায় ছিলেন ট্রাম্প সমর্থকেরা। এর আগে সেই মামলা খারিজ হয় নিম্ন আদালতে। সেই রায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প শিবির ফের আর্জি জানায় তৃতীয় ইউএস সার্কিট কোর্ট অব আপীলে। শুক্রবার আগের রায়ই বহাল রেখেছেন সার্কিট কোর্টের বিচারকেরা। ফলে আরও একবার ব্যর্থ রিপাবলিকান শিবির। বিচারক স্টেফানোস বিবাস তার রায়ে বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের প্রাণশক্তি হলো অবাধ ও ন্যায়সঙ্গত নির্বাচন। যদি এই নির্বাচন নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে, তা হলে সেটা গুরুতর ব্যাপার বলেই ধরতে হবে। নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে বললেই তো প্রমাণ হয় না যে, জালিয়াতি হয়েছে। অভিযোগ সুনির্দিষ্ট হতে হবে। তথ্যপ্রমাণও দিতে হবে। এই মামলায় তেমন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। মনে রাখা দরকার, ভোটের প্রচার ও মামলা এক জিনিস নয়। বিচারক বিবাসের সঙ্গে একমত হন আরও দুই বিচারক ব্রুকস স্মিথ ও মাইকেল চাগারেস। চাগারেসকে একদা নিয়োগ করেছিলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। ট্রাম্পের দুই আইনজীবী রুডি জিউলিয়ানি ও জেনা এলিস অবশ্য হার মানছেন না। তাদের কথা হলো, আমরা সুপ্রীমকোর্টে চললাম। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, এর আগেও ট্রাম্প সমর্থকদের নানা মামলা কড়া ভাষায় খারিজ করেছে একাধিক আদালত। যদিও তৃতীয় সার্কিট কোর্টের মন্তব্য সবচেয়ে কঠোর। এই মামলার বিচারকেরা জানিয়েছেন, জনস্বার্থেই সব বৈধ ভোটারদের ভোটদান নিশ্চিত করা হয়েছে পেনসিলভানিয়ায় ও ইমেলে পাঠানো ভোটও গণনা করা হয়েছে। অথচ নির্বাচনের দিন থেকে বার বার একই মামলা করছেন ট্রাম্পের সমর্থকেরা। ১৪ ডিসেম্বর বৈঠকে বসবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্টোরাল কলেজ। নিয়মমাফিক সেইদিনই বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করার কথা। ট্রাম্পও জানিয়েছেন, ইলেক্টোরাল কলেজ বাইডেনকে মেনে নিলে তবেই তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়বেন। তিনি যে ভোটে পরাজিত, এ কথা এখনও স্বীকার করেননি ট্রাম্প। ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আইনী মারপ্যাঁচে গিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা জিইয়ে রেখেছেন তিনি। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ। আদালত নিয়ে ট্রাম্পের উষ্মা ॥ এবার আদালতের ওপর খেপেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো তিনি ফক্স নিউজকে সাক্ষাতকার দেন। প্রথম টিভি সাক্ষাতকারে তিনি বিচার ব্যবস্থাকে এক হাত নেন। ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, এ কোন বিচার ব্যবস্থা। তার এত চমৎকার মামলাটি কোন আদালত শুনতে চাইছে না। সব মামলা শুনানির আগেই ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের শরণ নিতে যাচ্ছেন। ট্রাম্প বলেন, প্রতিটি আদালতই বলছে এসব মামলার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার আবেদনের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। একে বিস্ময়কর আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প প্রশ্ন রাখেন, ‘এ কেমন আদালত?’ সর্বশেষ শনিবার বিকেলে পেনসিলভানিয়ার সুপ্রীমকোর্ট ট্রাম্প শিবিরের মামলা খারিজ করে দেয়। সে প্রসঙ্গ টেনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তার কাছে সুপ্রীমকোর্টে লড়াইয়ের জন্য ভাল ও দক্ষ আইনজীবী রয়েছেন। তারা ভাল যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবেন। প্রমাণ করতে পারবেন যে, ভোটে জালিয়াতি হয়েছে। মার্কিন সুপ্রীমকোর্টে এসব মামলা নিয়ে যাওয়া বেশ জটিল। এখন সুপ্রীমকোর্টকে এমন বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কোন কিছুর দিকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নজর নেই। তিনি এখনও জয়ের আশা দেখছেন। সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেন, কারচুপি আর জালিয়াতি নিয়ে রিপাবলিকান দল নড়েচড়ে না বসলে মার্কিন সিনেটে আর কখনও কোন রিপাবলিকান প্রার্থী জয়ী হতে পারবে না। জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে অনড় ট্রাম্প ॥ নির্বাচনের পর দেয়া প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাতকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার কথিত ভোট জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। ২৯ নবেম্বর ফক্স নিউজকে দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেছেন, তার মন ছয় মাসেও পরিবর্তন হবে না। ট্রাম্প একটি সুন্দর ও বড় মামলা নিয়ে দেশটির সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী বাইডেনের কাছে নির্বাচনে হেরে যাওয়া ট্রাম্প অবশ্য আদালত নিয়েও হতাশ হয়ে পড়েছেন। ট্রাম্পের ভাষ্য, এত এত প্রমাণ থাকার পরও কোন আদালত তার কথা শুনছে না। সুপ্রীমকোর্টে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ উপস্থাপন কঠিন হবে বলে মনে করছেন ট্রাম্প। সুপ্রীমকোর্টে যেতে পারলে তার সেরা আইনজীবীরা ভোট জালিয়াতি প্রমাণের পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরার সুযোগ পাবেন বলে মনে করছেন তিনি। সুপ্রীমকোর্টে যাওয়াটা একটা কঠিন কাজ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাচনের ফল নিয়ে তার লড়াই চালিয়ে যাবেন। অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে একের পর এক মামলা খারিজ হওয়ার পরও ট্রাম্প তার সাক্ষাতকারে বলেছেন, আমাদের প্রমাণগুলো উপস্থাপনেরই সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। আদালত বলছেন, কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। সুপ্রীমকোর্টে যাওয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, আমি একটি সুন্দর ও বড় মামলা দায়ের করতে চাই। মামলায় ভোট জালিয়াতি ছাড়াও অনেক কিছু বলার আছে বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। মামলার সমর্থনে তার কাছে হাজারো এ্যাফিডেভিট রয়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প প্রশ্ন রাখেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার কি কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই? এসব কেমন আদালত? ট্রাম্প আদালত ও বিচারকদের নিয়ে তার হতাশা প্রকাশ করেন। তার অভিযোগ, ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ও এফবিআই তাকে সহযোগিতা করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পরিচালিত হয় প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের স্থানীয় আইন অনুযায়ী। নির্বাচন সংক্রান্ত কোন মামলা নিয়ে সরাসরি সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার সুযোগ নেই। ট্রাম্প শিবিরের অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের প্রায় সব মামলাই ইতোমধ্যে খারিজ হয়ে গেছে। তারপরও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।
×