ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২২:৫০, ৩০ অক্টোবর ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ করোনাকাল অব্যাহত আছে। এরই মাঝে হাসি আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে এসেছিল শারদীয় দুর্গোৎসব। মূলত এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব। তাই বলে অন্য ধর্মবিশ্বাসের মানুষেরা সবাই ঘরে বসে কাটিয়েছেন, এমন নয়। তারাও উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। ‘ধর্ম যার যার/উৎসব সবার।’ সবার উৎসবকে এবারও আপন করে নিয়েছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। সারাদেশের মতো বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল উৎসবের রং। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই উৎসব উদ্যাপিত হয়েছে। এবার একটু দেরি করে এসেছিলেন দেবী দুর্গা। আশ্বিনে আসার কথা ছিল, তা তো ছিলই। কিন্তু ওই এক মাসে পড়ে গেল দুটি অমাবস্যা। শাস্ত্রমতে, এক মাসে দুই অমাবস্যা হলে সেটি মল মাস। এ মাসে কোন শুভ কাজ করা থেকে সাধারণত বিরত থাকার রীতি প্রচলিত আছে। একই কারণে পিছিয়ে যায় দুর্গোৎসব। এবার কার্তিকে বরণ করে নেয়া হলো দশভুজাকে। অবশ্য এরপরও নির্বিঘ্ন ছিল না আয়োজন। কী যে বৃষ্টি হলো পূজার কয়েকদিন! বৃষ্টিতে ভিজেই ভিজেই চলে উৎসব উদ্যাপন। প্রথম কয়েকদিন ধারেকাছের ম-পে মন্দিরে অঞ্জলি দিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় পুজারিদের। অবশেষে নবমী ও দশমীর দিন মেঘ কেটে যায়। তাতেই দারুণ জমে ওঠে সব কিছু। নবমীর দিন আয়োজনগুলো বিশেষ দৃশ্যমান হয়েছে। নতুন পোশাকে সেজে নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সকলেই বের হয়েছিলেন। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা। এবার ঢাকার মণ্ডপগুলোতেও খুব বেশি সাজসজ্জা করা হয়নি। সব কিছুই সীমিত আকারে করা হয়। ম-পের ডিজাইন, প্রতিমার ফর্ম একেক জায়গায় ছিল একেক রকম। দেখতে বেশ লেগেছে। মণ্ডপে মণ্ডপে শুধু নয়, পূজা উপলক্ষে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে তাদের। সব মিলিয়ে একেবারে উদ্যাপনহীন যায়নি এবারের দুর্গোৎসব। অন্যপ্রসঙ্গ। করোনার নিউ নর্মাল সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরই মাঝে খুলে দেয়া হয়েছে সিনেমা হল ও শিল্পকলা একাডেমি। প্রাথমিকভাবে ঢাকার কয়েকটি সিনেমা হলে ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। দর্শক কম হলেও শুরুটা যেহেতু হয়েছে, ক্রমে এ সংখ্যা বাড়বে বলেই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিল্পকলা একাডেমির নাট্যায়োজনেও ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এসবের ধারাবাহিকতায় আগামী রবিবার থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে জাতীয় জাদুঘর। করোনা সংক্রমণের একেবারে গোড়ার দিকে গত ২৬ মার্চ সরকারী এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর কিছুকাল পর অফিস খুলে দেয়া হলেও, দর্শনার্থীদের বন্ধই ছিল জাদুঘরের দরজা। এভাবে টানা ২২০ দিন বন্ধ থাকার পর এসেছে নতুন সিদ্ধান্ত। সীমিত পরিসরে খুলে দেয়া হচ্ছে শাহবাগে অবস্থিত জাদুঘর। সে লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে বাড়তি প্রস্তুতি। জাদুঘরে প্রবেশের মুখে দুটি সংক্রিয় জীবাণুনাশক টানেল স্থাপন করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। দর্শনার্থী সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। জাদুঘরের কিপার শিহাব শাহরিয়ার বলছিলেন, স্বাভাবিক সময়ে ৩ থেকে ৪ হাজার দর্শনার্থী জাদুঘর পরিদর্শন করেন। করোনাকালে সংখ্যাটি ৫০০ থেকে ৮০০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। টিকেটের জন্য বাইরে যে দীর্ঘ লাইন দেখা যেত সেটিও আর দেখা যাবে না। টিকেট সংগ্রহ করতে হবে অনলাইনে। ভেতরে প্রবেশের পরও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে দর্শনার্থীদের। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য থাকবে আলাদা কমিটিও। জাদুঘরের আরেক কর্মকর্তা নাসির খান বলছিলেন, গ্যালারিতে অবস্থান করার সময়ও দর্শনার্থীদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ৪৫টি গ্যালারির প্রায় সবক’টিতে তিন ফিট দূরে দূরে দাঁড়ানোর জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। নতুন রং করা দেড় ফিট বাই দেড় ফিট টাইলস এ দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের সহায়তা করবে। তাহলে তো হয়েই গেল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবার পরিদর্শন করে আসুন জাতীয় জাদুঘর।
×