ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃধা আলাউদ্দীন

অল দ্য কোয়েট প্লেসেস

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২৩ অক্টোবর ২০২০

অল দ্য কোয়েট প্লেসেস

আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় ‘অল দ্য কোয়েট প্লেসেস’ নামের একটি কবিতার বই। লেখক শায়রা আফ্রিদা ঐশী। ঐশী ঢাকায় খুব কম থাকেন, তিনি থাকেন মেলবোর্নে। ওখানেই পড়াশোনা করেন। লেখেন ইংরেজীতে। এর আগেও আমি ঐশীর ‘অন ডেইস লাইক দিস’ বইটি পড়ে দুছত্র লিখেছিলাম এবং তা ছাপাও হয়েছিল ঢাকার কোন একটা জাতীয় দৈনিকে। শায়রা আফ্রিদা ঐশীর কবিতার চারপাশে ছড়িয়ে আছে নদীর ঢেউ, ভালোবাসা, আদর-আবদার, আচারের সুগন্ধ এবং একই সঙ্গে স্বাদ-গন্ধ-ধোঁয়া- অতীত-বৃদ্ধ দাদির কুসংস্কারও আছে কোথাও কোথাও আছে। আছে ছদ্মবেশী মানুষের কথোপকথন, মেলবোর্নের আকাশ-ধূসরতা, সমাজের নানা অনাচার-অহঙ্কার। ঐশীর উজ্জ্বল, মেধাবী শ্লোকগুলো নানা বর্ণালি রঙে আঁকা। ঐশীর অল দ্য কোয়েট প্লেসেস, পাঠকদের মধ্যে প্রচুর প্রশান্তি এনে দেবে বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। তার ছোটো ছোটো কবিতাগুলো আমাদের পেছনে, অতীতের কাছে নিয়ে যায়- যেখানে মানুষের মন প্রজাপতির রঙিন পাখার মতো ছড়িয়ে দিতে পারে নীলডানা। ঐশী তার কবিতায় এমন এক ভিন্নরকমের স্বাধীনতার মূল্য দেন যা মানুষের সৃজনশীল চিন্তা ও কল্পনা প্রকাশ করে এবং সংশয় ছাড়াই সেগুলো একাধিক ভূমিকা পালন করে পাঠককে তৃপ্তি দেয়। কখনো কখনো ঐশীর কবিতা উপাখ্যানীয় বা ধারাবাহিক গল্পের পরিবর্তে আমাদের টুকরো টুকরো গল্প শোনায়। ঐশী রৌদ্রের উষ্ণতা শুষে নিয়ে সাবলীল-সুন্দর একটা মোহময় হৃদয় এঁকে পাঠককে তাক লাগিয়ে দিতে পারেন। শায়রা আফ্রিদা ঐশী তার অল দ্য কোয়েট প্লেসেস কাব্যগ্রন্থের ‘লাইক’ কবিতাটিকে এভাবেই শেষ করেছেন- সূর্য ধীরে ধীরে নেচে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে ঝিকিমিকি, নিয়ন আলো। আর আমি দৌড়ে ছুটে যাব একটি ওয়াটার পার্কে। চেষ্টা করব সমস্ত রাইডগুলো দেখতে। অবশেষে শিহরিত আর ক্লান্ত হয়ে, সাঁতার শেষে ফিরে আসব ঘরে। জানি না, আমি কখন ঘুমিয়ে পড়লাম। ..... .... আমি কোনো ‘ত্যাগ’ করব না আমার মা আমার জন্য যথেষ্ট ‘ত্যাগ’ করেছিলেন আমার দাদিও যথেষ্ট ‘সিকরেড’ ছিলেন আমার মায়ের জন্য। আমি সেই পুরোনো প্রবাহ এখানে বন্ধ করব। আমি আমার স্বপ্নগুলোকে দেব না কারো ওপর নির্ভর করতে। - দ্যাট ইজ অল অই উইল গিভ হার পৃথিবীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সময় বদলে গেছে যথেষ্ট। মানুষ এখন আর দূরে বসে চাঁদের বুড়ির সঙ্গে গল্প করে না। সরাসরি চলে যায় চাঁদে বা মঙ্গলগ্রহে। অনলাইনে চলে তাদের লেখাপড়া। গ্লোবালাইজেশনে এই সময়ে পৃথিবীটা মানুষের হাতের মুঠোয়। এখন গোপন কিছু আছে বলে মানুষের মনে হয় না। উহানের ল্যাবে করোনাভাইরাস তৈরি হয়েছে কিনা- এটা জানা এখন মানুষের জন্য সময়ের ব্যাপার। পৃথিবীর মোড়ল এখন কে হবে চীন না আমেরিকা, এ তর্ক খুব বেশি দূর এগুবে না। যদি এই ভাইরাস আমেরিকার তৈরি হয়ে থাকে, তবে একটা পাখি অথবা একটা পিঁপড়েও শুনবে না তাদের কোন কথা। হুতামায় নিমজ্জিত হয়ে ধ্বংস হবে ওই আমেরিকা। ইউরোপ। ওআইসি আরব লিগ অথবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে ঘৃণা করবে সারা পৃথিবীর মানুষ।... শায়রা আফ্রিদা ঐশীরা সরাসরি কথা বলেন, এখন আর তাদের কাছে তেমন কিছু নেই। তারা যা বলেন সত্য বলেন। করোনা পরবর্তী পৃথিবী হবে আরও আধুনিক। সেখানে মিথ্যে বা ছলচাতুরির কোনো জায়গা থাকবে না। শায়রা আফ্রিদা ঐশীর ‘টেন্ট’ কবিতার একাংশ- আমি কি পাতার আড়ালে যাব? পৃথিবীটা দেখ, কেমন আছে এই বিশ্ব? অথবা, আমার দাবি পৃথিবীর মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ আমার নাম উচ্চারণ করবে দেখবে আমার মুখের কারুকার্যময় ভাস্কর্য এবং আমার মুখে লেগে থাকা রেডউডের রক্ত... আমি কি প্রকৃতির একটা অংশ? শেষ অবধি, আমার অবসন্নতা না আসা পর্যন্ত আমি নিজের সম্পর্কে কিছুই বলি না যা আমাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দেয়। ..... .... বিপর্যয় নিয়ে ঐশীর কবিতা ‘কিংডম দ্য সিম্পল পিপলস’। এতে কবি লেখেন- আকাশ আর সহ্য করতে পারে না পৃথিবীর ধুলো-বালু এবং একদিন সে এ্যাসিড বৃষ্টি নামিয়ে দ্যায় পৃথিবীতে।... সহজ-সরল মানুষগুলো রানির জন্য বানিয়েছেন মরীচিকাময় এক জ্বালানি মেসিন। গুরুত্বপূর্ণতা ভুলে গেছে সাধারণ সব মানুষ। শায়রা আফ্রিদা ঐশীর অল দ্য কোয়েট প্লেসেস কাব্যগ্রন্থটির সর্বশেষ কবিতাটির নাম ‘এ পোয়েট’। মাত্র বারোটা শব্দ দিয়ে কবি একটি দুর্দান্ত কবিতা তৈরি করেছেন। অল্প কথায় ব্যাপকভাব তৈরি করেছেন। শুধু বড় কবিরাই অল্প কথায় ব্যাপকভাব তৈরি করতে পারেন। ঐশী তার কবিতায় বলেন, ‘তারা (কবিরা) কি আর্থিকভাবে বড় নয়? বড় কোন জীবিকা নির্বাহ করে না? ভালো। বসবাসকারী হিসেবে তারাই যথেষ্ট।’ কবিতাটি একটি কাপলেটে পরিণত হয়েছে এবং পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আমরাও কবিতাটির বহুল প্রশংসা করছি। ঐশী তার অল দ্য কোয়েট প্লেসেস দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থটিতে মুন্সিয়ানার ছাপ রেখেছেন বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। বইটির প্রকাশক : মাজহারুল ইসলাম- অন্যপ্রকাশ। প্রথম প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রাজিব রায়। ডিমাই সাইজের ৫ ফর্মার চেয়ে একটু কম মূল্য ২৭৫ টাকা। বইটির বহুল প্রচার ও প্রসার কামনা করছি।
×