ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোগীদের ভোগান্তি কমছে

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মিলছে ডিজিটাল চিকিৎসা সুবিধা

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ১৭ অক্টোবর ২০২০

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মিলছে ডিজিটাল চিকিৎসা সুবিধা

বশিরুল ইসলাম ॥ করোনা রোগী চিকিৎসা, নমুনা সংগ্রহ এবং সুস্থ হয়ে যাওয়া করোনা রোগীদের ফলোআপ চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এই হাসপাতালে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা প্রদানও স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ভোর থেকে লাইন পড়ে যায় আউটডোরের টিকেট কাটতে। কেউ দাঁড়িয়ে থাকে এক থেকে দুই ঘণ্টা। সাধারণ মানুষের সেই ভোগান্তি কমাতে ইতোমধ্যে হাসপাতালে চালু করা হয়েছে ডিজিটাল টিকেট সিস্টেম। বহির্বিভাগের টিকেট কাটতে ছবিসহ রোগীর রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন কার্ডে থাকছে ‘বার-কোড।’ এই ‘বার-কোড’ ব্যবহার করে রোগী ট্রিটমেন্ট, ওয়ানস্টপ সার্ভিস, প্যাথলজি সেবা সবই পাচ্ছে সহজে। পরবর্তী সময়ে টিকেট কাটতে এলে শুধু ওই কোড বললেই হবে। এর ফলে সময়ও বাঁচবে রোগীদের। ভয়েস ল্যাব, ড্রাই ল্যাবসহ অনেক উন্নতমানের ল্যাবরেটরি রয়েছে হাসপাতালে। বিশেষ করে ল্যাসিক ল্যাব নামে একটি ল্যাবরেটরি রয়েছে। যার মাধ্যমে দৃষ্টিহীন রোগীদের অপারেশন ছাড়া চোখের দৃষ্টি ভাল করার চিকিৎসা করা হয়। ইতোমধ্যে এ সেবার মাধ্যমে সহ¯্রাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাছাড়াও হসপিটালজুড়ে রয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ডিজিটাল টিকেট সিস্টেম এবং ডিজিটাল ট্রিটমেন্ট সিস্টেম। সমাজের গরিব ধনী যে কোন ব্যক্তি চিকিৎসার এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, বহির্বিভাগে ডিজিটাল টিকেট সিস্টেম সেবা চালু করা হয়েছে। বহির্বিভাগের টিকেট কাটতে ছবিসহ রোগীর রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদান করা হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন কার্ডে টোকেন নাম্বার, ব্লক এবং কত নাম্বার কক্ষে রোগীকে যেতে হবে সব কিছুই উল্লেখ আছে। আপাতত মেডিসিন ওয়ার্ডে-এ সেবা চালু করা হলেও তা ধীরে ধীরে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা থেকে শুরু করে সেবা নিয়ে রোগীর চলে যাওয়া পর্যন্ত যত প্রক্রিয়া আছে এর সবটাই আমরা অটোমেশন পদ্ধতির আওতায় আনতে চাই। এজন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন পরিচালক। পরিচালক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া আরও বলেন, সরকারী হাসপাতাল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদাসিনতা রয়েছে। আমরা এই অচলায়তন ভাঙতে চাই। এখানে ৩৮ বিভাগে নিয়মিত রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। হাসপাতাল ৮৫০ বেডের হলেও এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৪শ’ রোগী ভর্তি থাকে। বেড সেবা নিশ্চিত করতে না পারলেও বিদ্যমান সীমাবদ্ধতার মাঝেই চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সবাইকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সম্প্রতি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে কথা হয় হাসপাতালের কর্মচারী মোঃ রায়হান উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সিস্টেম চালুর ফলে রোগীদের অনেক ভোগান্তি কমে গেছে। এক সময় রোগীদের টিকেট কেটে লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টার দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। এখন এ সিস্টেমের ফলে রোগীরা সহজের কার্ডে লেখা রুমের সামনে গিয়া বসে থাকে। সিরিয়াল এলে ডাক দেয়া হচ্ছে। কুমিল্লা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা দ্বীন ইসলাম (৩৫) বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে কয়েকবার এসেছি। তখন এ সিস্টেম দেখিনি। কিছু দিন ধরে এই সিস্টেম চালু হয়েছে। তবে এইটা ভাল সিস্টেম। টিকেট কাউন্টারের লোকেরা বলছে, এই কার্ড রেখে দিতে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই কার্ড নিয়ে এলে কম্পিউটারে কার্ডের নাম্বার (রেজিস্ট্রেশন নাম্বার) দিলেই আবার সব তথ্য চলে আসবে। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগের নারী ও পুরুষদের আলাদা কাউন্টারে ৫টি করে মোট ১০টি এবং জরুরী বিভাগে একটি করে মোট ১১টি ওয়েব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রোগীদের ছবিসহ রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বর্তমান পরিচালক আসার পর আমাদের নিয়ে প্রায় সময় জরুরী মিটিং ডাকা হয়। কখন কোথায় কিভাবে সেবা দিতে হবে এবং সেবার মান কিভাবে উন্নত করে মানুষের ভোগান্তি দূর করা যায় তা নিয়েই পরিচালকের চিন্তা চেতনা। তিনি আসার পরপরই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের রূপ পাল্টে গেছে। এমন আধুনিকায়ন সেবা মনে হয় না দেশের অন্য কোন হাসপাতালে পাওয়া যাবে। সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা বজায় ও চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট কেয়ার (কেইসি) নামে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমে চিকিৎসক, নার্স ও ক্লিনার নিয়ে ওয়ার্ড, ইউনিট বিভাগ ও কেবিন সমন্বয়ে ৪৩টি কমিটি রয়েছে।
×