ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারী ও কিশোরীর সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করি

প্রকাশিত: ২০:০১, ১১ জুলাই ২০২০

নারী ও কিশোরীর সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করি

সুব্রত বিশ্বাস (শুভ্র) ॥ আজ ১১ জুলাই, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। প্রতি বছর জাতিসংঘ তথা সারা বিশ্ব নানা রকম আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ দিনটি পালন করে থাকে। বিশ্বায়নে জনসংখ্যা-চ্যালেঞ্জ ও পরিকল্পিত পরিবারের সুবিধাসমূহের ব্যাপারে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এ দিবস পালনের লক্ষ্য। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালিত হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘মহামারী কোভিড-১৯ কে প্রতিরোধ করি, নারী ও কিশোরীর সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করি।’ ধারণা করা হয় ১৯৮৭ সালের ১১ জুলাই বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে উন্নীত হয় এবং পরবর্তী সময়ে ইউএনডিপির গভার্ন্যান্স কাউন্সিল প্রতি বছর এই দিনটিকে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হিসাবে পালন করার প্রস্তাব করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করে আসছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপি) প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৮০৪ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি। এর দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছিল ১২৩ বছর। অর্থাৎ ১৯২৭ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ২০০ কোটিতে। এরপর ১৯৫৯ সালে অর্থাৎ ৩২ বছরে জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩০০ কোটিতে। এর ১৫ বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৪০০ কোটিতে। বিশ্বের জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে পৌঁছাতে সময় লেগেছিল আরও কম। মাত্র ১৩ বছরে ১৯৮৭ সালে সংখ্যাটি ৫০০ কোটিতে পৌঁছায়। এরপর প্রতি ১২ বছরে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়েছে ১০০ কোটি করে। ১৯৯৯ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০০ কোটিতে। আর ২০১১ সালে তা ৭০০ কোটিতে পৌঁছায়। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৭৭১ কোটি। এই হারে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই জনসংখ্যা বেড়ে ১০০০ কোটি অতিক্রম করবে। একটি রাষ্ট্রের যে কয়েকটি মৌলিক উপাদান রয়েছে তার মধ্যে জনসংখ্যা অন্যতম। আর এই জনসংখ্যা কোন দেশের জন্য সম্পদ আবার কোন দেশের জন্য বোঝা। কোন কোন দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা না করে বোঝা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে প্রযুক্তি ও উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অতিরিক্ত জনসংখ্যা দক্ষ করতে পারলে তা সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে তাকালে দেখা যায় অপুষ্টি, পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাব, বেকারত্ব, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। আর এসব বিষয়কে সামনে রেখে জনসংখ্যা বিষয়ক সমস্যাগুলো সকলকে অবহিত করা এবং তা গুরুত্ব সহকারে সমাধানের প্রচেষ্টা করাই হলো দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যান আলোচনা করে দেখা যায় যে, ১৮৬০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ২ কোটি। ১৯৪১ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৪.২০ কোটি। অর্থাৎ ৮১ বছরে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বাড়ে মাত্র ২.২০ কোটি। আবার ১৯৬১ সালে জনসংখ্যা ছিল ৫.৫২ কোটি যা ১৯৯১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১১.১৫ কোটিতে। অর্থাৎ ৩০ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১২ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৫.২৭ কোটি। ২০১৬ সালের জুলাইতে এই জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬.০৮ কোটি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ২০২০ সালের ১ জুলাইতে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৭৪ লাখ ৩০ হাজার। এ হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে ২০৫০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২২ কোটি ২৫ লাখে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে প্রতি মিনিটে বিশ্বে প্রায় ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে। আর বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করে প্রায় ১০টি শিশু। সংস্থার আর এক জরিপে দেখা গেছে যে, বর্তমানে জন্ম নেয়া ১০০ জন শিশুর মধ্যে ৯৭ জন জন্মগ্রহণ করে তৃতীয় বিশ্বের তথা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। যে দেশগুলোতে এমনিতেই অধিক জনসংখ্যার দেশ। তাই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে করোনাভাইরাস মহামারী রূপ ধারণ করেছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা পৃথিবী স্থবির। তাই এবার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে উক্ত বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে মহামারী কোভিড-১৯ কে প্রতিরোধ করে নারী ও কিশোরীর সুস্বাস্থ্যের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩ কোটি ৬০ লাখ কিশোর-কিশোরী রয়েছে। যারা এদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২২ শতাংশ। বাল্য বিয়ের উচ্চ হারের কারণে বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালে অনেক মেয়ে গর্ভধারণ, সহিংসতা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকে। বর্তমানে ২০ থেকে ২৪ বছর বয়স নারীদের মধ্যে ৫৩ শতাংশেরই বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগে। এই বয়সে তারা প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে তেমন সচেতন থাকে না। এই অবস্থার কারণে বাংলাদেশে অনেক নবজাতকের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়াতে বিষয়টি এখানে অনেক প্রাসঙ্গিক। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের জনসংখ্যার হার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও সেটা এখনও বেশ উদ্বেগজনক। বিবিএস ও ইউএনএফপি এর তথ্যমতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর হলো ঢাকা শহর। দেশের মোট ১০ শতাংশ লোক এই ঢাকা সিটিতে বাস করে। ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর গ্লোবাল সিটিস ইনস্টিটিউশন পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ২০৫০ সাল নাগাদ ঢাকা হবে বিশ্বের তৃতীয় জনসংখ্যা বহুল শহর এবং একই সময়ে জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখে। পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। নতুন আর কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায়, কিংবা কিভাবে মানুষের ভোগান্তি কমিয়ে আনা যায়, এসব আরও একবার হিসেব-নিকেশ করার জন্যই আজকের এই দিনটি। লেখক : কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় [email protected]
×