ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

* চাল, ডাল, তেল, ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল থাকলেও চড়া সবজির * বাড়ছে মসলাপাতির দাম

রূপালী ইলিশে ভর করে কমছে দেশী মাছের দাম

প্রকাশিত: ১৯:০৬, ১০ জুলাই ২০২০

রূপালী ইলিশে ভর করে কমছে দেশী মাছের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এবার আষাঢ় মাসে রূপালী ইলিশে ভরে উঠছে রাজধানীর মাছ বাজার। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশী মাছেও। ইলিশের উপর ভর করে কমছে সব ধরনের দেশী মাছের দাম। মাঝারি সাইজের প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৮০০ টাকায়। বড় সাইজ হলে কেজিতে ৯০০-১০০০ টাকা দাম পড়ছে। মাছ বিক্রেতারা বলছেন, এবার আগেভাগে সাগর ও নদীতে পাওয়া যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ ইলিশ। এছাড়া উৎপাদন বাড়ায় সারাবছর দেশের মানুষ নিতে পেরেছেন ইলিশের স্বাদ। মাছের সঙ্গে দাম কমেছে পেঁয়াজ রসুন ও ব্রয়লার মুরগির, তবে চড়া সবজির বাজার। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, আটা ও চিনির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। কোরাবানি ঈদ সামনে রেখে বাড়তে শুরু করেছে মসলা পাতির দাম। শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, কাপ্তান বাজার, মালিবাগ বাজার, খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, গুলশান কাঁচা বাজার থেকে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি’র হিসেবে মতে, এ সপ্তায় আলু ও লবঙ্গের দাম বেড়েছে। মোটা চাল আগের বেড়ে যাওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এদিকে, মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমায় ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। অন্যদিকে সবজির দাম না কমায় কষ্টে রয়েছেন নগরীর গরিব মানুষ। বাজারে গড়ে ৬০ টাকার নিচে কোন সবজি পাওয়া যাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে, দেশের বিভিন্ন নদী ও সাগরে ইলিশ ধরা পড়ায় রাজধানীর বাজার ভরে উঠেছে মাছে। গতবছর এ সময়টাতে বাজারে ইলিশের আকাল ছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম দেখছেন মাছ বিক্রেতারা। তাদের মতে, এবার হয়তো ইলিশের উৎপাদন ভাল হয়েছে। আর এ কারণে আগেভাগে এবার ইলিশ ধরা পড়ছে। মধ্য শ্রাবণ থেকে শুরু করে পুরো ভাদ্র মাস জুড়ে নদী ও সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে রূপালী ইলিশ। খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনছিলেন আরিফুর রহমান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ইলিশের দাম কমে গেছে দেড়শ থেকে ২০০ টাকা। বাজারে ইলিশ বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় দেশী জাতীয় কার্প ও চিড়িংসহ মলা ঢেলার মতো ছোট ছোট মাছের দাম কমে গেছে। তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় নদী ও সাগরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কোস্টগার্ডের নজর দারি বাড়ায় মাছের উৎপাদন বেড়েছে। এর সুফল মিলছে বাজারে। এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায়, কেজিতে ৩০ টাকা কমে প্রতিকেজি লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকায় আর সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়, ছোট সোনালী প্রতিহালি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতিকেজি দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকায়। ডিমের দাম আছে আগের সপ্তাহের মতোই। এসব বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম (আকার ভেদে) ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। এসব বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা, মহিষের মাংস ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা, বকরি ৭৫০ টাকা। এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম না বাড়লেও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে অধিকাংশ সবজি। বেশিরভাগ সবজির দাম আগের মতো থাকলেও দাম বাড়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে কাঁচামরিচ, মুলা, লেবু, লাউ ও জালি কুমড়া। অপরিবর্তিত আছে শাকের বাজার। সব ধরনের শাক আগের দামেই বিক্রি করতে দেখা গেছে। দাম বেড়ে প্রতিকেজি ডায়মন্ড আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা, ছোট আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, প্রতিকেজি টমেটো (ছোট) বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো (ফ্রেশ) ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এছাড়া দাম কমে বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ৩০ থেকে ৪৫ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা। প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। খোলা সয়াবিন বর্তমানে প্রতিলিটার বিক্রি হচ্ছে ৮৩-৮৬, পামওয়েল লুজ ৬৫-৭০ টাকা, চাল সরু নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫২-৬২,মাঝারি মানের পাইজাল ও লতা ৪৪-৫২ এবং স্বর্ণা ও চায়না ইরিখ্যাত মোটা চাল ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। বাড়ছে গরম মসলার দাম ॥ কোরবানি সামনে রেখে গরম মসলার দাম বাড়ছে। দারুচিনি, এলাচ ও লবঙ্গসহ প্রায় সব গরম মসলার দাম বাড়তে শুরু করেছে। কোনো কোনো মসলার দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এলাচ কেজিতে ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার ২০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরায় সাড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনির কেজি পাইকারিতে ৪০০ টাকা ও খুচরায় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আর লবঙ্গ পাইকারিতে ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা ও খুচরা বাজারে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাপ্তান বাজারের জামশেদ স্টোরের বিক্রেতা আবদুল গনি বলেন, গরম মসলার পাইকারি দাম বেড়েছে। এলাচি ৪০০-৫০০ টাকা কেজিতে বেড়েছে। আর দারুচিনি ও লবঙ্গের দাম বেড়েছে। তবে জিরার দাম বাড়েনি। গত সপ্তাহের চেয়ে দারুচিনি কেজিতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বেড়েছে। লবঙ্গ কেজিতে বেড়েছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা। কোরবানি সামনে রেখে মসলাপাতির দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ভোক্তাদের।
×