ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হংকংয়ের লাইব্রেরিগুলো থেকে গণতন্ত্রের বই উধাও !

প্রকাশিত: ১২:৩৩, ৬ জুলাই ২০২০

হংকংয়ের লাইব্রেরিগুলো থেকে গণতন্ত্রের বই উধাও !

অনলাইন ডেস্ক ॥ চীন কর্তৃক আরোপিত বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর হংকংয়ের লাইব্রেরিগুলো থেকে সেখানকার গণতন্ত্রপন্থীদের লেখা বইগুলো উধাও হয়ে গেছে। লাইব্রেরি পরিচালনা কর্তৃপক্ষ বলছে, বইয়ের লেখাগুলো পুনপর্যালোচনা করে দেখা হবে যে তাতে নতুন নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘিত হয়েছে কিনা। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হচ্ছে, হংকংয়ের জন্য চীন প্রণীত নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা আইনে বিচ্ছিন্নতাবাদ, কেন্দ্রীয় সরকার পতন, সন্ত্রাসবাদ ও ‘জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাতমূলক যেকোনো কাজ’ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিরোধীরা বলছে, চীন প্রণীত এই আইন দেশটির আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের স্বাধীনতার অবক্ষয় ঘটানোর নিমিত্তে তৈরি। তবে বেইজিং বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে আসছে। কিন্তু ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে হংকংয়ের অধিকার পাওয়ার পর অন্তত ৫০ বছর স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বেইজিং। গত মঙ্গলবার হংকংয়ে কথিত এই নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে গণতন্ত্রপন্থী বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের ভূমিকা থেকে সরে এসেছেন। তাদেরই একজন যিনি এককালের ছাত্রনেতা এবং স্থানীয় আইনপ্রণেতা নাথান ল অঞ্চলটি ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়ে গেছেন। হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বরাতে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অন্তত ৯টি বই উধাও হয়েছে কিংবা ‘পুনঃপর্যালোচনাধীন’ নাম লেখা চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। এসব বইয়ের মধ্যে আছে বিশিষ্ট তরুণ গণতন্ত্রপন্থি কর্মী জোশুয়া ওং এবং গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিবিদ তানয়া চ্যানের লেখা বইও রয়েছে। পাবলিক লাইব্রেরির ওয়েবসাইট অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওং, চ্যান এবং স্থানীয় পণ্ডিত চিন ওয়ানের কমপক্ষে তিনটি বই আর পাওয়া যাচ্ছে না। শনিবার জোশুয়া ওং বলেন, নতুন আইনটিতে হংকংয়ে চীনা ধাঁচের একটি সেন্সরশিপের নিয়ম আরোপিত হয়েছে; যা আদতে বই নিষিদ্ধের পদক্ষেপ থেকে এক ধাপ দূরের পদক্ষেপ। সমালোচনা উপেক্ষা করেই চীনের পার্লামেন্টে কোনো কাটাছেঁড়া ছাড়াই সর্বসম্মতিক্রমে ৩০ জুন চূড়ান্তভাবে আইনটি পাস হয়। পাস হওয়ার পর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ওইদিনই আইনটিতে স্বাক্ষর করেন। এরপর মঙ্গলবার মধ্যরাতেই হংকং সরকারে গেজেট প্রকাশ করলে আইনটি কার্যকর হয় হংকংয়ে। আইনটি কার্যকর হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ এর আওতায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এই আইনের ফলে বেইজিংয়ের আইনসভা হংকংয়ের আদালতের যে কোনও রায় এবং দণ্ড বাতিল করতে সক্ষম হবে। এছাড়া চীনের নিরাপত্তা বাহিনী হংকংয়ে এখন প্রকাশ্যে একটি কার্যালয় খুলতে পারবে; যা তারা আগে পারত না। অনেক পশ্চিমা দেশ আইনটি নিয়ে নিন্দা জানিয়েছে; যাদের অভিযোগ ১৯৯৭ সালের ‘এক দেশ, দুই নীতি’র চুক্তির আওতায় ৫০ বছরের রুপান্তরকালে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও চীন কথিত জাতীয় নিরাপত্তার নামে এই আইন হংকংয়ের বাসিন্দাদের ওপর চাপিয়ে সেই প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে।
×