ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাজেটে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যখাত ও সুপারিশ

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২২ জুন ২০২০

বাজেটে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যখাত ও সুপারিশ

বর্তমান স্বাস্থ্যসেবায় যে অগ্রগতি তা অবশ্য ক্ষমতাসীন সরকারের কৃতিত্ব। সাম্প্রতিক প্রণিত স্বাস্থ্যসেবার বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে করোনার সঙ্কট মোকাবেলা করে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে সবার জন্য সুলভ মানসম্মত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিত করে একটি সুস্থ-সবল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন এবং সেই জায়গাটিতে প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য বাজেটের বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’- এই প্রবাদটি সর্বজনস্বীকৃত এবং এটিকে সামনে রেখেই জাতিসংঘ প্রণীত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায় উল্লিখিত হয়েছে সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যেই সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে যেসব বিষয়ে অর্জন সম্ভব হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, টিকাদান কর্মসূচীর ব্যাপক সফলতা, গড় আয়ু বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি ইত্যাদি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশ হওয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবিধি (এউএইসসি) অর্জনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবায় শিক্ষা গবেষণা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য প্রশাসনের কাঠামোতে ঢাকাভিত্তিক কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে শুরু করে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত বিস্তৃত, উপজেলাভিত্তিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো আবার মেডিক্যাল কলেজভিত্তিক হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা প্রচলিত রয়েছে, যা দেশের বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত ৩১টি সরকারী ও ৭৪টি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে। তা ছাড়াও সারা দেশে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত রয়েছে। ট্রাকিং ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ ২০১৭ গ্লোবাল মনিটরিং প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবনযাত্রার মান নির্বিশেষে প্রত্যেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা পাবে, যার জন্য কোন আর্থিক দীনতায় পড়তে হবে না কাউকেই। কিন্তু ২০১৫ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ এ্যাকাউন্টের (এএনএইচএ) তথ্য মতে, স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে একজন রোগীকে জনপ্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ৬০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে, আর সরকার ব্যয় করছে জনপ্রতি ২৩ টাকা, দাতা সংস্থা ৭ টাকা এবং বাকিটুকু অন্যান্য সংস্থা। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে দেশের ৪.৫১ শতাংশ জনগণ। আর যাদের সামর্থ্য রয়েছে এরকম ২ লাখ ৫০ হাজার রোগী বছরে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা যদি বিগত ১১ জুন উপস্থাাপিত ২০২০-২১১ সালের জন্য প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য খাতের বাজেটকে মূল্যায়ন করি দেখা যায় যে, প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫.১৪ শতাংশ এবং জিডিপির ০.৯২ শতাংশ। অপরদিকে চলতি ২০১৯-২০ বছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বরাদ্দের ৪.৯১ শতাংশ এবং জিডিপির ০.৮১শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে টাকার অঙ্কে বাজেট বরাদ্দ ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা বাড়লেও শতাংশ হারে তা বেড়েছে ০.২৩ শতাংশ এবং জিডিপির হারে বেড়েছে ০.১০শতাংশ। অথচ বিশ্বব্যাংক স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মতে, একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ এবং জিডিপির কমপক্ষে ৫ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রস্তাবিত বাজেটে তা আছে জিডিপির ২ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ৫.১৪ শতাংশ। আমরা যদি প্রস্তাবিত উন্নয়ন বাজেট তথা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে সেখানে সার্বিক এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। সেখানে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬.৩৫ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের সূত্র মতে চলতি (২০১৯-২০২০) অর্থবছরে মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য ও সেবা খাতের বিভাগ ও মন্ত্রণালয় আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রেখেছে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা অর্থাৎ, আগের তুলনায় কমেছে ২২ কোটি টাকা ৪৭ লাখ টাকা। এর একটি কারণ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বলছে স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ ছিল তা সঠিক সময়ে ব্যয় হয়নি। স্বাস্থ্য বিভগের ২০১৯-২০ অর্খবছরে প্রথম নয় মাসে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিবার কল্যাণ বিভাগের বাস্তবায়নের হার মাত্র ২৬.৭১ শতাংশ, যেখানে জাতীয় বাস্তবায়নের হার ৪৫.০৮ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে এখনই দুধরনের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। যথা এক, বর্তমান করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যখাতে চলতি বিনিয়োগ ব্যয় এবং কাঠামোগত সংস্কার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ ব্যয়। কারণ স্বাস্থ্য খাতের মাধ্যমে দেশের অবস্থার উন্নতি হলে কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পর্যটন ও রেমিটেন্সের সুযোগগুলো দ্রুত কার্যকর করার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য মতে, চলতি বাজেটে দেশের জিডিপি ০.৭ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে স্বাস্থ্য খাতে এবং পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তা জিডিপির ১.৬ শতাংশে উন্নতি করার প্রস্তাব ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে এ খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১.৫ শতাংশ থেকে উন্নতি করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে ২০২১-২০২৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িতব্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়। এখানে উল্লেখ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবা ক্ষেত্রে সরকারের বিনিয়োগ তুলনামূলক পরিমন্ডলে সর্বনিম্ন এবং সামনে এগুতে হলে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ অবশ্যই বাড়াতে হবে, যা করোনা সঙ্কট আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে সকল প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন তা প্রায় জিডিপির ৩.২ শতাংশ। সরকার চাইলে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত উন্নতি করতে পারে, যার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ অঙ্গীকার প্রয়োজন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো কোভিড-১৯ বাংলাদেশের মানুষের জীবন এক ঝুঁকির মধ্যে নিয়ে গেছে, যার শেষ কবে তা আর বলা যায় না এবং এটি দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে এই বাজেটকে বলা হচ্ছে স্বস্তির বাজেট, যার উদ্দেশ্য করোনাকবলিত মানুষকে স্বস্তি দেয়া। তাই স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দের বাইরে থোক বরাদ্দ হিসেবে ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। তাছাড়াও জরুরী প্রয়োজন মেটানোর জন্য আরও ৫২৯ কোটি টাকা এবং করোনা ইউনিটগুলোতে চিকিৎসারত চিকিৎসকদের সম্মানী, হোটেল ব্যয় ও মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাছাড়াও চিকিৎসা গবেষণার জন্য ৩০০ কেিিট টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। করোনার মোকাবেলার জন্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার দুটি বৈদেশিক সাহায্য প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে একটি বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ১,১২৭ কোটি টাকার ও অপরটি হলো এডিবির সহায়তায় ১,৩৬৪ কোটি টাকার। তথ্য-উপাত্ত বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে বার্ষিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রয়েছে মাথাপিছু মাত্র ৩২ ডলার বা ২ হাজার ৬৫৬ টাকা। সেখানে নেপালে ৩৯ ডলার, ভারতে ৬১ ডলার ও শ্রীলঙ্কায় ১ হাজার ডলার। বাংলাদেশে ১৮৭১ জন মানুষের জন্য বরাদ্দ ১ জন প্রশিক্ষিত চিকিৎসক এবং ১০,০০০ জন মানুষের জন্য বরাদ্দ ২.৯ জন নার্স। সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ও মান সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কেবল শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের নিচে রয়েছে। গবেষণায় যে ১৯৩টি দেশের অবস্থানে তুলে ধরা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩, যেখানে ভারতের অবস্থান ১৪৫ ও পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৪। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। যারা বাংলাদেশের ৪৯ বছরের ইতিহাসে সরকার পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে মাত্র ১৯ বছরের কিছু সময় বেশি। দেশের প্রায় ১৫টি বছর সামরিক জান্তাদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিল সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। বর্তমান আওয়ামী সরকারের শেষ ১৬টি বছর শাসনকালে ছিল স্বর্ণযুগের। বর্তমান স্বাস্থ্যসেবায় যে অগ্রগতি তা অবশ্য ক্ষমতাসীন সরকারের কৃতিত্ব এবং এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। সেই জায়গাটিতে প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য বাজেটের অনেকাংশে বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়শীল দেশের পদযাত্রায় উন্নীত হয়েছে এবং আগামী ২০২৪ সালে তা চূড়ান্ত বহির্প্রকাশ ঘটবে। বর্তমান সরকারের (২০০৯-২০১০) থেকে ২০১৯-২০২০ সময়ের দৃশ্যত যে সাফল্যগুলো রয়েছে, তার মধ্যে বাজেট বৃদ্ধি, প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি ৯৪.৮ থেকে ৯৮ শতাংশ, শিশু মৃত্যুর হার ৩.৯ থেকে কমে ২.৮ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩,২৬৮ মেগাওয়াট থেকে ১৮,৩৫৩ মেগাওয়াট, গ্যাস উৎপাদন ১,৭৪৪ মি. ঘনফুট থেকে ২,৭৫০ মি. ঘনফুট, গড় আয়ু ৬৯.৯ বছর থেকে ৭২.৫ বছর, দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ থেকে ২০ শতাংশ, বৈদেশিক রিজার্ভ ৭.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩৮.২ বিলিয়ন ডলার, মাথাপিছু আয় ৭৫৬ ডলার থেকে বেড়ে ১৯৯০ ডলার, আমদানি বাণিজ্য ২২.৫ ডলার থেকে বেড়ে ৪৯ বিলিয়ন ডলার, রফতানি আয় ১৫.৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩৭.৮ বিলিয়ন ডলার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৫ থেকে ৮.২ শতাংশ উন্নীত ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হলেও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ তেমন বাড়েনি। অথচ গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ সরকারের অর্জন দৃশ্যত: অনেক। যেমন, মানবসম্পদ উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা, যা সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ১৩ হাজার ১২৬টি, যারা গ্রামীণ ৩৪টি ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের সরবরাহ করে থাকে। এখন যে কাজগুলো জরুরীভিত্তিতে করা প্রয়োজন তা হলো প্রথমত, গ্রাম-শহরের মধ্যে চিকিৎসাসেবার বৈষম্য কমিয়ে সমানুপাতিক সুযোগ বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যা বর্তমান উন্নয়ন বাজেট দিয়ে ব্যয় সম্পন্ন সম্ভব নয় বিধায় এডিপিতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী অর্থবছরে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন-অনুন্নয়ন মিলিয়ে যে মোট বরাদ্দ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা রাখা আছে, যার মধ্যে পরিচালনা ব্যয়ে যাবে ১৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা এবং বাকিটা যাবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে। অর্থাৎ, স্বাস্থ্য খাতের মোট বরাদ্দের ২২ শতাংশ ব্যয় হয় মেডিক্যাল শিক্ষায়। অথচ আধুনিক শিক্ষা উপকরণ, গবেষণা ও শিক্ষক প্রশিক্ষণে তেমন কোন বরাদ্দ নেই, যা অবশ্যই টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র মতে জানা গেছে, দেশের বর্তমানে কর্মরত ১০৫টি মেডিকেল কলেজের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেসিক সায়েন্স বিভাগে মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষক নেই। বেসরকারী মেডিকেল কলেজ শিক্ষার মান নিয়ে খোদ প্রশাসনিক দফতরই অসন্তুষ্ট রয়েছে। যেখানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কিংবা গবেষণার কোন ব্যবস্থা বা বরাদ্দ নেই বিশেষত প্রাইভেট প্রাকটিস মনোভাবের কারণে যা থেকে মুক্তি পাওয়া সময়ে দাবি। চতুর্থত, মেডিকেল শিক্ষা কারিকুলামে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি থাকলেও তার কার্যত কোন বহির্প্রকাশ চিকিৎসকদের আচরণের প্রতিফলন হচ্ছে না যার প্রভাব পড়ছে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার ওপরে। অথচ মেডিকেল ভর্র্তির পরপরই নাকি শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয় যে, আর্তমানবতার সেবায় তারা আত্মনিয়োগ করবে। একজন রোগীকে মানবিকতার আঁচলে বেঁধে তার রোগমুক্তি ঘটাতে হবে, ব্যবসার পণ্য হিসেবে নয়। পঞ্চমত, আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, একটি পরিবারে বা গোষ্ঠীতে যদি একজন প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তা, একজন চিকিৎসক কর্মকর্তা ও একজন পুলিশ কর্মকর্তা থাকে তাহলে তাদের কোন কিছুতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তার অর্থ দাঁড়ায় যে, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিচরণে এই তিন কর্মকর্তার সহয়োগিতা কিংবা প্রতিপত্তি সেই পরিবার কিংবা গোষ্ঠীকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। আবার এই তিন জনের মধ্যে চিকিৎসকের ওপর দাবিটা অনেক বেশি হওয়ায় সে এখন কোন দিকে যাবে? নিজের পরিবারের আর্থিক দৈন্য গোছাতে নাকি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে! এই ধরনের একটি সংঘাত বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছে, যার একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। ষষ্ঠত, জনস্বাস্থ্য এখন সঙ্কটে। কিন্তু বরাদ্দ বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে মাত্র ১৩.৬৩ শতাংশ এবং করোনার বাজেট ১০ হাজার কোটি টাকা কিভাবে খরচ হবে, তার একটা খাতওয়ারি বিভাজন প্রয়োজন। পরিকল্পনা কমিশন বলছে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বরাদ্দ খরচ হয় না। এর কারণ প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দক্ষতার অভাব। যেখানে স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ/চিকিৎসকগণ সময় দিতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থা না ঘোচাতে পারলে বাজেট বাড়িয়ে কোন সুফল পাওয়া যাবে না। লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ডিন, সিটি ইউনির্ভাসিটি
×