ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা হাজী কামাল গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২ জুন ২০২০

মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা হাজী কামাল গ্রেফতার

শংকর কুমার দে ॥ লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনায় মানবপাচারকারী ও দালাল চক্রের অন্যতম হোতা কামাল হোসেন ওরফে হাজী কামাল এক নারীসহ গ্রেফতার হয়েছে ৪ জন। রাজধানী ঢাকা, ভৈরব, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে ৬টি। দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৬ জনকে। হাজী কামালকে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে এ পর্যন্ত ৪০০ জনকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছে। তার কাছ থেকে ১৯টি পাসপোর্ট, দুই শতাধিক ফোন নম্বরসহ একটি ডায়েরি উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এছাড়া ভৈরবে ও মাদারীপুরে গ্রেফতার হয়েছে আরও ৩ জন। লিবিয়ার ঘটনায় থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের পুলিশ সদর দফতর, র‌্যাব, সিআইডি, ডিবি, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট মানব পাচারকারী ও দালাল চক্রকে শনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্য তদন্তে মাঠে নেমেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। র‌্যাব-৩ এর সিনিয়র এএসপি আবু জাফর মোঃ রহমত উল্লাহ বলেন, লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশীকে হত্যার ঘটনায় মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা কামাল হোসেন ওরফে হাজী কামালকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর গুলশানের শাহজাদপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। ধৃত মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা কামাল হোসেন ওরফে হাজী কামালের পিতার নাম মোঃ জামাত আলী। কুষ্টিয়ার সদর থানা এলাকায় তার গ্রামের বাড়ি। তার কাছে থেকে পাচারকারী চক্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন ও পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশী নিহত হওয়ায় ঘটনায় মানবপাচারকারী হিসেবে কামাল হোসেনের নাম উঠে আসে। আজ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে। গত ২৮ মে লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদাহতে ২৬ বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করে একদল মানব পাচারকারী ও তাদের স্বজনরা। ওই ঘটনায় চার আফ্রিকান অভিবাসীও নিহত হন। লিবিয়ার সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের মিজদা শহরে ২৬ বাংলাদেশীসহ ৩০ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে আহত হয় আরও ১১ জন। বাংলাদেশীসহ ওই অভিবাসীদের লিবিয়ার মিজদা শহরের একটি জায়গায় টাকার জন্য জিম্মি করে রেখেছিল মানবপাচারকারী চক্র। এ নিয়ে একপর্যায়ে ওই চক্রের সঙ্গে মারামারি হয় অভিবাসী শ্রমিকদের। এতে এক মানবপাচারকারী নিহত হয়। তারই প্রতিশোধ হিসেবে সেই মানবপাচারকারীর লোকজন এই নৃশংস হত্যাকা- ঘটায়। ভৈরবে গ্রেফতার ও মামলা দায়ের ॥ কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানার ওসি মোঃ শাহিন মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, লিবিয়ার ঘটনায় থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সিআইডি, ডিবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মামলাটি তদন্তে সহায়তা করছে। মোঃ বাহারুল আলম ওরফে বাচ্চু মিলিটারি। তাকে ভৈরব থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত সাদ্দাম হোসেন আকাশের বড় ভাই মোবারক হোসেন বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে এ হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় ভৈরবের মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য তানজিরুলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঢাকার সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইম টিম ভৈরবে এসে মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেছে। মামলাটি তদন্ত করবে সিআইডি। সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মোঃ মিজানুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ভৈরবের শ্রীনগর গ্রামের মানবপাচারকারী তানজিরুলের বড় ভাই মোঃ বাহারুল আলম ওরফে বাচ্চু মিলিটারিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লিবিয়ায় মারা যাওয়া নিহতের স্বজনরা গণমাধ্যমকে জানান, স্থানীয় দালাল তানজিরুল, জাফরসহ অন্যান্য দালালের মাধ্যমে নিহতরা লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সংসারের সচ্ছলতা আনতে জমি-জমা বিক্রিসহ ধারদেনা করে ৪-৫ লাখ টাকা দালালদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ভৈরব এলাকার নিহতরা হলেন রাজন, সাকিল, সাকিব মিয়া, আকাশ, মোঃ আলী, মাহবুব ও মামুন।
×