ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৌসুমি ফল ও সবজি বিপণনে ১৭ দফা সুপারিশ

প্রকাশিত: ০০:৩১, ২১ মে ২০২০

মৌসুমি ফল ও সবজি বিপণনে ১৭ দফা সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা মহামারীর মধ্যে মৌসুমি ফল বাজারজাতকরণের নানা উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এই সময়ে ফল বাজারজাতকরণে বিভিন্ন সমস্যার আলোকে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ১৭ দফা সুপারিশ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করছে মন্ত্রণালয়। আর সুপারিশগুলো সঠিক বাস্তবায়ন হলে মৌসুমি ফল বাজারজাতকরণে কোন সমস্যা থাকবে না একই সঙ্গে চাষীরাও মূল্য পাবে। জানা গেছে, করোনা মহামারীর মধ্যেও ফসল উৎপাদনের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে কৃষি মন্ত্রণালয় নিরবচ্ছিন্নভাবে নানা বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে নিরলসভাবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নও করা হচ্ছে। হাওড়ের ধান ভালভাবে ঘরে উঠার পরপরই সামনে আসে মৌসুমি ফল সঠিকভাবে বাজারজাত করা। এজন্য সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয় সাবেক মন্ত্রী, বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী অন্য জনপ্রতিনিধি ও অর্থনীতিবিদসহ ফল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। এ বৈঠক থেকে মৌসুমি ফল ও সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের পথে বাধাগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং এসব ত্রুটি, দুর্বলতা ও বাধা অপসারণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মোঃ হামিদুর রহমানের মতে সভা থেকে যেসব সুপারিশ এসেছে তা করোনাকালীন স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মপরিকল্পনার আওতায় এনে নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় উপর্যুক্ত সুপারিশগুলোর আলোকে দশটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে বলেও জানান। জানা গেছে, ওই বৈঠকে মৌসুমি ফল ও সবজি বিপণনে ত্রুটি দুর্বলতা ও বাধাসমূহের মধ্যে ২০টি কারণ উঠে আসে। এর মধ্যে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া, সরকারী নির্দেশ সত্ত্বেও কৃষিপণ্য সরবরাহ চেইনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান/ ব্যক্তির সংযোগ ছিন্ন হওয়া, পরিবহন হয়রানি, বড় পাইকারি বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা স্বল্পতা, ভোক্তা পর্যায়ে অনাগ্রহ, বিদেশী ফলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ইত্যাদি সমস্যা উঠে আসে। সমস্যার আলো বিভিন্ন সুপারিশও দেয় বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রতিনিধিরা। ১৭ দফা সুপারিশের উল্লেখযোগ্য হলো, সরবরাহ চেইন ভেঙ্গে যাওয়া। লকডাউন পরিস্থিতির কারণে কেনাবেচার আড়ত সঙ্কুচিত হয়েছে, ১. পরিবহন ব্যবস্থা বিঘিœত হয়েছে এবং বাজারজাতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনবলের অংশগ্রহণ কমেছে। এই চেইন মেরামত করা অর্থাৎ চেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে। ২. বোরো ধানের উৎসাহব্যঞ্জক মূল্য নির্ধারণ করে তা প্রকৃত কৃষক হতে ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩. পণ্যের সরবরাহ বেশি অথচ চাহিদা কম এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় গ্রাম ও শহরের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানো অর্থাৎ আয় বাড়ানোর জন্য অবিলম্বে কর্মসৃজনের উদ্যোগ নিতে হবে। ৪. কৃষিপণ্য পরিবহনে যেসব বাধা বিপত্তি রয়েছে তা দূর করতে হবে। খালি ট্রাক ফেরার সময় টোল মওকুফের ব্যবস্থাসহ আর্থিক সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। ৫.কৃষিপণ্য যেহেতু দ্রুত পচনশীল সে কারণে রেলওয়ে ও সড়ক উভয় পথে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় পরিবহন করতে হবে। ৬. ইলেক্ট্রনিক বিপণন পদ্ধতি বা ই-কৃষি বিপণন ব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে হবে। ই-পণ্য ব্যবহারের যানবাহনের চলাচলে বাধা দূর করতে হবে। পরিবহনের কাজে যুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সনদ প্রদান করতে হবে। ৭. ফলের বাজার সম্প্রসারণের জন্য- হাসপাতাল জেলখানা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর ডরমিটরি বা ক্যাম্পে পুলিশ ও বিজেপি সদস্যদের মৌসুমি ফল সরবরাহের প্রথা চালু করা। ৮.ফলের বহির্বাণিজ্য সম্প্রসারণে আন্তর্জাতিক মানদ-, ট্রেসাবিলিটি ও এ্যাক্রিডিটেশন প্রথা প্রবর্তন করে ফল ও সবজির বিশাল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হবে। ৯. ফল ও সবজি পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারী যানবাহন (ট্রাক, মিনিট্রাক, ভ্যান ইত্যাদি) ও যানবাহনসমূহের চালকদের পরিচয়পত্র দিতে হবে এবং ফিরতি খালি যানবাহনের টোল মওকুফের ব্যবস্থা করতে হবে। ১০. দেশী ফলের উৎপাদন মৌসুমে বিদেশ থেকে ফল আমদানি বন্ধ রাখতে হবে। ১১.ফলচাষীদের প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনতে হবে এবং ফলচাষী ও উদ্যোক্তাদের ৪% সুদে কৃষি ঋণ সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ১২. রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে এবং জেলা শহরগুলোতে কৃষকচালিত কৃষিপণ্যের বাজার সৃষ্টিতে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ফরমালিন ভীতি দূর করতে হবে প্রমুখ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বলয় সম্প্রসারণে কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে এবং সার্বিকভাবে জাতীয় অর্থনীতির আকার ও গতিশীলতা আনতে তা বিপুল অবদান রাখবে। সঠিকভাবে বাজারে আসবে মৌসুমি ফলও।
×