ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ জীবন যেভাবে ফিরতে পারে

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ২৮ এপ্রিল ২০২০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ জীবন যেভাবে ফিরতে পারে

অবশেষে জীবন ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে। প্রশান্তপাড়ে এখন জীবন স্বাভাবিক হওয়ার পথে। কিন্তু কোন গড়িমসি বা ওজর আপত্তি শুনতে নারাজ সরকার। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মোটামুটি স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে সিডনিসহ গোটা দেশ। ইতোমধ্যে কিছু কিছু রাজ্য তার পথে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে সঠিক পরিকল্পনা আর নিয়ম মানার ফলে। নিয়ম না মানার সংস্কৃতি কিন্তু সব সমাজে সব দেশে চলমান। করোনার শুরুতে সিডনির বিশ্বখ্যাত বন্ডাই বিচ দুনিয়ার মিডিয়ায় নেগেটিভ শিরোনাম করেছিল এই দেশকে। নিষেধ অমান্য করে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ সমবেত হয়েছিল বিচে। পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর কড়া ধমক আর জরিমানার পরিমাণ বাড়ায় সুড়সুড় করে গর্তে ঢুকে গেল সবাই। বন্ধ হয়ে গেল বিচ কালচার। দেশে যিনি বা যারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের রাস্তায় নামিয়েছিলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে বলার পরও কি তারা দুঃখ প্রকাশ বা মাফ চেয়েছে? আজ আপনি দেশে করোনা রোগীর যে ক্রমবর্ধমান সংখ্যা দেখছেন, তা কিন্তু ওই পাপের ফল। বলছিলাম এদেশে বা যে সব দেশে নিয়ম মেনে এখন সব খুলতে শুরু করেছে তারা তো কোন ম্যাজিক করেনি। শুধু মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করেছে। বাধ্য করেছে সোশ্যাল দূরত্ব মানতে। যে সব জাহাজ যাত্রী এসেছে সব ক’টাকে হোটেলে রেখে তারপর রিপোর্ট নিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে। সহজ হিসাব। যারা মানবে না তারা অপরাধী এটাই নিয়ম। আমাদের মানুষগুলো বড় উটকো স্বভাবের। ইচ্ছেমতো রাস্তায় বেরুচ্ছে। এগুলো কি সরকারের দোষ? সরকার তো কোন ছাড়, স্বয়ং ঈশ্বরও এদের বাগে আনতে পারবেন না। সময় হাতে কম। এখন পরিস্থিতি খারাপ হতেই থাকবে। আর চাইলেও কোন সাহায্য পাওয়া হবে কঠিন। বিশ্ব বাস্তবতায় কেউ কাউকে সাহায্য করার জায়গায় নেই। নিয়ম মানা করোনা ঠেকাতে মানুষগুলোকে দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য করা না গেলে আরও জীবনহানি ঘটতে পারে। সরকারকে ঢালাও দোষারোপ করে লাভ নেই। তথ্যপ্রবাহ যেন সত্য ও ভয়হীন থাকে। না হলে আমেরিকা বা ইউরোপের মতো কিছু দেশের পরিণতি ডেকে আনা সহজ। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া তা গোপন রাখেনি বলেই আজ আশার আলো দেখছে। কথাগুলো বললাম এই কারণে ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়েও চলছে নানা ধরনের নেতিবাচক ও আতঙ্কজনক প্রচারণা। গতকাল জনপ্রিয় একটি টিভি চ্যানেলে কর্তব্যরত বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারদের সঙ্গে আলাপচারিতা দেখলাম। টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার যেই বললেন পিপিই পরে গরমে দশ মিনিটের বেশি থাকা মুশকিল আর তাঁদের কোন এসির ব্যবস্থা নেই, অমনি ক্যামেরা ঘুরে গেল অন্যদিকে। পরের জন তো আরও সাংঘাতিক কথা বলা শুরু করলেন। তিনি বলছিলেন ইন্টার্নিদের কথা। জরুরী হলেও তাদের কাজে লাগানো যায় না। কারণ তাদের হোস্টেলে খাবার নেই। খাবার বা বাজার করতেও যেতে পারছে না তারা। জনগণের একাংশ যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটা বন্ধ করে দিয়েছে ভয়ে। অমনি ক্যামেরা আবার ঘুরে গেল অন্যদিকে। না, এটা টিভি বা সাংবাদিকের অপরাধ না। সবাই জানেন কে কতটা বলে, বলতে পারে। আর কতটা পারে না। পশ্চিমবঙ্গে ওদের গবর্নর চেপে ধরায় মমতাদির থলের বেড়াল বেরিয়ে আসছে। গণতন্ত্র ও জবাবদিহি আছে বলে সত্য-মিথ্যা নিয়ে তর্ক চলছে সেখানে। এটুকু বুঝি ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্য কর্মীরা ভাল না থাকলে করোনায় আক্রান্তের হার কমবে না। মানুষের দুর্ভোগ ও জীবনের ঝুঁকি বাড়বে। পবিত্র রমজান মাসে তথ্য ও বাস্তবতার পবিত্রতা রক্ষা হোক। মনে রাখা দরকার, নানা কারণে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখনও তেমন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি। এটা বজায় রাখা না গেলে একদিকে রোগে, আরেকদিকে অভাব অনটনে দেশের সর্বনাশ হয়ে যাবে। সেটা কারও কাম্য হতে পারে না। মারী মহামারী পেরিয়ে আজ সিডনি পৌঁছে যাচ্ছে আলোর বন্দরে। আফসোস থাকবে একটাই, এ যাত্রায় এখনও বহু দেশ বহু মানুষ সঙ্গী হতে পারছে না। আমাদের মাতৃভূমিও না। আমরা চাই বাংলাদেশ আলোর পথ দেখুক। মানুষ ফিরে আসুক স্বাভাবিক জীবনে। নিয়ম মানাটা বড়ই জরুরী। [email protected]
×