
অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মাহে রমজানের আজ দ্বিতীয় দিবস। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারস ... ‘হে আল্লাহ অবশ্যই আমি তোমার নিকট পানাহ চাই শ্বেতী, উন্মাদ, কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার কঠিন ব্যাধি থেকে।’ - (আবু দাউদ, তিরমিজি শরীফ)। মরণব্যাধি মানব বোমা করোনাভাইরাসে আজ বিপন্ন বিশ্ব, তছনছ সমাজ সভ্যতা, দৈনন্দিন ধর্মকর্ম। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার দাবিদারগণ দৌড়িয়ে হয়রান, কিন্তু মোকাবেলা করার শক্তি সামর্থ্য এখনও কেউ জোগাড় করতে পারেননি। অধিকাংশ চিন্তাশীল ও গবেষকদের মতে এটি সৃষ্টিকূলের প্রতি সৃষ্ট জীবের অপব্যবহারে স্রষ্টার পক্ষ থেকে অসন্তুষ্টির নিদর্শন এবং প্রকৃতির প্রতিশোধ। মহান আল্লাহ কোরানুল কারীমে ইরশাদ করেছেন : ‘জলস্থলে বিকশিত সমুদয় বিপর্যয় মানবজাতির হাতের কামাই...।’ -(সূরা রোম)। ওবাদা বিন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে- মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একদল সাহাবার সমাবেশে বললেন: ‘তোমরা আমার কাছে এ বিষয়ে বায়াত বা সংকল্পবদ্ধ হও যে, আল্লাহর সঙ্গে কোন কিছু শরিক করবে না, চুরি করবে না, যেনা করবে না, সন্তানদের হত্যা করবে না, পরস্পর মিথ্যা অপবাদ দেবে না, আর কোন ন্যায়ানুগ বিষয়ে অবাধ্য হবে না। যারা বিষয়গুলো মেনে চলবে আল্লাহর কাছে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান। আর যারা এসব বিষয় অমান্য করবে তারা এর শাস্তি ভোগ করবে দুনিয়াতেই।’ প্রিয় পাঠক! দেখুন কিছু পাপের প্রায়শ্চিত্ত দুনিয়াতেই মানবজাতিকে ভোগ করতে হবে বলে নবীজী দৃঢ়তার সঙ্গে বলে গেছেন। এখন এ পাপগুলো দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন আধুনিক নামে সভ্যতার অংশ ও পালনীয় বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আল্লাহ তা’য়ালা সভ্যতার বিশুদ্ধ ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য হালাল হারাম বা বৈধ অবৈধের সীমারেখা টেনে দিয়েছেন। মানবজাতি এ সীমারেখা ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। নিজেদের জন্য উপকারী হালাল বিষয়গুলো বেমালুম তরক করেছে আর দিব্যি হালাল করে নিয়েছে হারাম বা অবৈধ ক্ষতিকর দ্রব্য ও চরিত্রগুলো। পরিণামে আজ এমন পরিস্থিতি।
এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, উত্তীর্ণ হতে হবে। বাঁচার পথ হলো স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সুসম্পর্ক পুনর্প্রতিষ্ঠা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে বান্দার ফিরে আসা। তাওবা ইস্তেগফার অনুশোচনায় বিদগ্ধ হওয়া। ইমান আমলে তন্দুরুস্তি নিয়ে আসা। আবার এমন দেহ মনের অধিকারী হতে পারলে এ রোগে মরলেও শহীদ। আর যদি বেঁচে থাকি আমরা হবো খালিস গাজী বান্দা। আমাদের আত্মসচেতন হতে হবে। পরিশুদ্ধ হতে হবে। না হয় এ যিল্লতির ভয়াবহতা হবে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। আমরা কেউ এমন মৃত্যু মিছিল চাইনি। চীনের মহাপ্রাচীর ডিঙ্গিয়ে মানবতার এ আর্তনাদ এশিয়া ইউরোপ আমেরিকা আফ্রিকা সর্বত্র। কি মুসলিম অমুসলিম ধনী-গরিব শিশু-বৃদ্ধ নারী পুরুষ আশরাফ আতরাফ কেউ নিস্তার পাচ্ছে না। এ মরণ বায়ু আমার আপনার গায়েও যে কোন সময় ধাক্কা দিতে পারে। কত অস্বাভাবিক অপ্রত্যাশিত অভাবিতপূর্ণ এ মৃত্যু। যেখানে সঠিক দাফন নেই, কাফন নেই, জানাজা নেই, নেই প্রিয়জনদের উপস্থিতির সুযোগ।
আজ হুমকির মুখে পড়েছে হজ উমরাহ। পবিত্র হারাম শরীফের আঙ্গিনায় রোনাজারির দোয়া ফরিয়াদ। অথচ কোরানুল কারীমে বলা হয়েছে মান্ দাখালাহু কানা আমিনা... ‘যে ব্যক্তি এখানে প্রবেশ করবে সে হবে নিরাপদ।’ হারিয়েছি আমরা জুমা জামাত। হারিয়েছি লাইলাতুন নিফস মিন শাবান বা লাইলাতুল বারাতের জামাত। চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রহমত বরকত মাগফেরাতের মাস মাহে রমজানের শ্রুতিমধুর খতমে তারাবিহ। কী আছে কী থাকছে আর? আমরা আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের কথা শুনেছি, চেঙ্গিসের মস্কো অভিযান, নাদির শাহ’র দিল্লী হামলা, হিটলারি বর্বরতার গল্প শুনেছি। কেউই এভাবে শত্রু মিত্র না চিনে হামলে পড়েনি। একমাত্র নোবেল করোনাভাইরাস- কোভিড- ১৯; যে কিনা সর্বত্রই বেপরোয়া, অপ্রতিরোধ্য গতিতে ধাবমান।
এর পশ্চাৎ চিত্র হবে আরও ভয়াবহ। ধেয়ে আসছে দুনিয়াজুড়ে মন্দা, অভাব, অবিশ্বাস, দুর্ভিক্ষ, পারস্পরিক হানাহানির ঘনঘটা। এখন বঙ্গবন্ধুর মতো বলতে হবে তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো...। বাঁচতে হলে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্তত কিছু বিষয় আমাদের দৈনন্দিন আমলে অনুশীলনে নিয়ে আসতে হবে। ধর্মীয় ও আধুনিক উপদেশ পরামর্শ মেনে চলার কোন গত্যন্তর নেই। সাধনার এ মাসে আমরা যেন সুপরিকল্পিতভাবে নয়া জিন্দেগিতে খাপ খাইয়ে চলতে পারি সে অনুশীলন ও অনুধাবনের সময়।