ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈশ্বিক মহামারী ও দুই রানী

প্রকাশিত: ০৮:২২, ৩ এপ্রিল ২০২০

  বৈশ্বিক মহামারী ও দুই রানী

ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা আছে সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার ও এর বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইয়ের কথা। আজ যেমন কোভিড-১৯ নামের অজানা-অচেনা এক ভাইরাস পুরো পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে তেমনি করে ইতিহাসের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে বিভিন্ন নামধারী সংক্রামক ব্যাধি গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করেছে, শহরের লোকালয়কে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এসব মহামারী গরিবের ভাঙ্গা কুটিরে যেমন হানা দিয়েছে তেমনি রাজ-রাজড়াদের প্রাসাদের কড়া নাড়তেও দ্বিধা করেনি। ১৫৬৩ সালে যখন লন্ডনে ভয়ানক মহামারী বুবনিক প্লেগ বা ব্ল্যাক ডেথের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন সিংহাসনে ছিলেন রানী প্রথম এলিজাবেথ। সে সময় রাজা অষ্টম হেনরির কন্যা চির কুমারী রানী প্রথম এলিজাবেথের বয়স ছিল ৩০ বছর। তিনি তাঁর রাজসভা সেইন্ট জেমস প্যালেস থেকে উইন্ডসর ক্যাসেলে স্থানান্তরিত করেন। বুবনিক প্লেগের ভয়ে তিনি এতটাই ভীত ছিলেন যে তিনি সেখানে একটি ফাঁসির কাষ্ঠ স্থাপন করেন। তিনি চাননি এই সংক্রামক ব্যাধি নিজের রাজসভায় ছড়িয়ে পড়ুক। তাই তাঁর কড়া নির্দেশ ছিল লন্ডন থেকে কেউ আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে। এই প্লেগে লন্ডনের বিশ হাজারেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বলা হয়ে থাকে যে এতে লন্ডনের ২৪ ভাগ মানুষ সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এ সময় বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে। এরই মধ্যে এই আতঙ্ক স্পর্শ করেছে লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে। যুক্তরাজ্যের অবস্থা বেশি খারাপের দিকে মোড় নেয়ার আগে নিজেদের এই মহামারী থেকে সুরক্ষিত রাখার অংশ হিসেবে ৯৩ বছর বয়সী রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তাঁর স্বামী ৯৮ বছর বয়সী প্রিন্স ফিলিপ বাকিংহাম প্যালেস ছেড়ে উইন্ডসর ক্যাসেলে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। সেখানে তাঁরা নিরাপত্তার জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। যদিও একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে যে, রানী স্বাস্থ্য ভাল আছে কিন্তু তাঁর সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা তাঁর ভালর জন্য নেয়া হয়েছে। বাকিংহাম প্যালেস উইন্ডসর ক্যাসেল থেকে মাত্র ২৫ মাইল দূরত্বে অবস্থিত। কিন্তু এটি লন্ডন শহরের মধ্যখানে অবস্থিত হওয়ায় এবং এতে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর আনাগোনার কারণে এটি রানীর বাস করার জন্য নিরাপদ হবে না বলে মনে করা হয়েছে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ইতোমধ্যেই সামনের মাসগুলোর নির্ধারিত সব অনুষ্ঠান, যেখানে প্রচুর জনসমাগমের কথা ছিল, সব বাতিল কিংবা স্থগিত করেছেন।
×