ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনজীবনে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২৯ মার্চ ২০২০

জনজীবনে দুর্ভোগ

একটানা দশ দিন ছুটিতে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিও চরম বিপর্যয়ের মুখে। দেশে দেশে আমদানি-রফতানির যে বাণিজ্যিক সুষম ব্যবস্থা সেখানেও আঘাত হেনেছে এই প্রাণঘাতী মরণব্যাধি। প্রতিটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতা থেকে বৈশ্বিক দূরত্ব এতখানি তীব্র, যা যোগাযোগ ব্যবস্থায় এনেছে এক অবর্ণনীয় দুর্যোগ। দেশীয় এবং বহির্বিশ্বের চলমান অর্থনীতি গতিহীনতার আবর্তে। যার দুঃসহ দাম চুকাতে হচ্ছে অসহায় ও নিরীহ জনগোষ্ঠীকে। অবরুদ্ধতার এমন দুঃসময়ে মানুষ তার নৈমিত্তিক জীবন নির্বাহের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থেকেও অনেকটা বঞ্চিত। মানুষ এখন ঘর থেকে বের হতেও নিরাপত্তাহীনতায় আক্রান্ত হচ্ছে। সারা বিশ্বে এমন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় যে সাবধানতা আর সতর্কতা নেয়া হচ্ছে অবরুদ্ধ জীবনযাপনে, বাংলাদেশের মানুষও সে মাত্রায় নিজের সুরক্ষায় ঘরবন্দী সময় কাটিয়ে যাচ্ছে। পেশাগত প্রয়োজনে অনেককেই বাইরে আসতে হচ্ছে। শপিং মলগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। বিপন্ন অবস্থায় পড়তে হচ্ছে খেটে খাওয়া দিনমজুরদের। তারা প্রাত্যহিক কাজকর্মের বিনিময়ে যা আয় করে তা দিয়েই নিত্য সাংসারিক খরচ চালায়। এক জায়গায় আটকে থাকার কারণে তাদের প্রতিদিনের কর্মযোগও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সাংসারিক ব্যয়ভার সামলানো এখন একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এ হতদরিদ্র দিনমজুরদের অর্থ ও খাদ্য সঙ্কট এখন নিত্য দুর্ভোগের পর্যায়ে চলে গেছে। এই ক্ষতিগ্রস্ত, দুস্থ মানুষের জন্য খাদ্য, ওষুধ এবং ন্যূনতম চাহিদা মেটানো এখন জরুরী হিসেবে বিবেচনায় আনতে হবে। দেশের সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে অসহায় ও বিপন্ন মানুষকে বিনামূল্যে নিত্যপণ্য যোগান দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাস্তায় মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ার কারণে রিক্সা, বেবিট্যাক্সি, সিএনজি চালিত ক্ষুদ্র যান, ভ্যান চালকরা কর্মহীন জীবন কাটাচ্ছে। ফলে নিত্য শ্রমমজুরি থেকে বঞ্চিত এসব হতদরিদ্র মানুষ দীনহীন অবস্থার চরম দুর্ভোগের কবলে। এ ছাড়া কুলি, ফেরিওয়ালা এবং ফুটপাথের দোকানেও তৈরি হয়েছে এক ধরনের স্থবিরতা। সাধারণ জনগোষ্ঠীর দুরবস্থা মোকাবেলা করতে কিছু সাহায্য, সহযোগিতা, আর প্রণোদনাও এই মুহূর্তে আবশ্যক। করোনা আক্রান্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সরকারও নগদ আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এমন সঙ্কট সামলাতে হলে নগদ প্রণোদনা অত্যন্ত জরুরী। এমন দুরবস্থায় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তাৎক্ষণিক সহায়তা সময়ের যৌক্তিক দাবি। সুতরাং ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থায় আর্থিক প্রণোদনা দেয়া এই মুহূর্তে আবশ্যক। শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আর্থিক অনুদানে পুরো ব্যবস্থাপনায় সচলতা ফিরে এলে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও আগের জায়গায় চলে আসবে। সরকার ইতোমধ্যে গরিব মানুষের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে, যা স্বস্তিদায়ক ও বাস্তবায়নের অপেক্ষায়।
×