ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে-

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ৯ ডিসেম্বর ২০১৯

 বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে-

বুড়িগঙ্গা বাঁচানোর শেষ সময় বয়ে যাচ্ছে। দূষণ রোধে দুটি সংস্থার ওপরই রয়েছে গুরুদায়িত্ব। এর একটি অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ এবং অন্যটি পানি বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াসা। বুড়িগঙ্গায় এখনও ৬৮ স্যুয়ারেজ লাইনে বর্জ্য পতিত হচ্ছে। ওয়াসা এর দায়িত্বপ্রাপ্ত, তাদেরই এটা বন্ধ করতে হবে। সম্প্রতি বুড়িগঙ্গা দূষণের কারণ নিয়ে একটি জরিপ পরিচালিত হয়েছে, যাতে দেখা গেছে, ট্যানারি কারখানা, সিমেন্ট, কাগজের মন্ড, টেক্সটাইল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, ব্যাটারি, ডাইং কারখানা, গার্মেন্টশিল্প, মনুষ্য বর্জ্য, শিল্পবর্জ্য, গৃহস্থালির অপরিশোধিত প্রায় সব বর্জ্যই পড়ছে নদীতে। সম্প্রতি ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে সাভারে স্থানান্তরিত হয়েছে। কিন্তু উপরোল্লিখিত এসব বর্জ্য পড়ায় বুড়িগঙ্গার দূষণ বিন্দুমাত্র কমেনি, বরং তা রয়ে গেছে আগের মতোই। ঢাকার চার নদীতে দূষিত তরল বর্জ্য পতিত হওয়া বন্ধে আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৩৪১ পয়েন্ট দিয়ে এসব বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। এসব বর্জ্যরে মধ্যে পয়োবর্জ্য ও সিটি কর্পোরেশনের দূষিত কঠিন বর্জ্যও রয়েছে, যা বুড়িগঙ্গা দূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া নদীতে চলাচলকারী জাহাজ থেকে পোড়া তেল, মবিল এবং এর তীরে গড়ে ওঠা জাহাজ শিল্পকারখানা থেকে দূষিত পদার্থ নদীতে মিশছে। স্যুয়ারেজ লাইন ছাড়াও বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানা ও জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের কারখানা থেকেও বর্জ্য নদীতে পড়ছে প্রতিদিন। নদীর বুকে প্রতিদিন কয়েক শ’ বড় বড় জাহাজ, ছোট নৌকা, কার্গো চলাচল করে। এসব জাহাজ থেকে নির্গত পোড়া তেল, মবিল, গ্রিজ ও মনুষ্যবর্জ্য অধিকহারে নদীদূষণ করছে। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকার চার নদী দূষণমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, বর্জ্য সরাসরি নদীতে না ফেলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ডাম্পিং করে সূর্যের আলো ও বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দূষণমুক্ত করতে হবে। পরে সেই বর্জ্য সার হিসেবে ব্যবহার করে শাকসবজি উৎপাদন ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও বর্জ্য নদীতে সরাসরি না ফেলে নদীর পাড়েই বর্জ্য ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী ভারত এমনকি লন্ডনের টেমস নদী দূষণমুক্ত করার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে যান্ত্রিক উপায়ে বর্জ্য শোধনের বিশাল ব্যয়ভার বহন না করেই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পরিশোধনের দিকে যাচ্ছে বিভিন্ন সভ্যতা। টেসা নাকি টেমস, কোন পরিণতি বরণ করতে আগ্রহী ঢাকা? হাঙ্গেরির নদী টেসা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে, যার দশা হয়েছিল আমাদের বুড়িগঙ্গার মতোই। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের টেমস নদীর ঘটেছে পুনর্জন্ম। বলা প্রয়োজন, ঢাকার আশপাশের চার নদ-নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ দূষণের শিকার হওয়ার পাশাপাশি অব্যাহতভাবে দখলের শিকার হচ্ছে। কলকারখানার রাসায়নিক দ্রব্য ও বর্জ্যে এসব নদীর পানি দূষিত হয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। একইভাবে ব্রহ্মপুত্র, রূপসা, ভৈরব, ময়ূরসহ অনেক নদ-নদী দূষণের শিকার হয়ে ধ্বংসের পথে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপরও পড়েছে নদ-নদীদূষণের প্রভাব। এসব নদ-নদী বাঁচাতে অবিলম্বে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। যেসব কলকারখানা নদ-নদী দূষণের জন্য দায়ী, সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ রক্ষায় নদ-নদী দূষণ ও দখলমুক্ত রাখার বিকল্প নেই। নদী বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।
×