ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হিলিয়ামের পরিবর্তে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহারে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩১ অক্টোবর ২০১৯

 হিলিয়ামের  পরিবর্তে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহারে  সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে

অনলাইন ডেস্ক ॥ শহর ও গ্রামের পথে-ঘাটে ছোট্ট একটি ভ্যানে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে বেলুন দৃশ্য প্রায়শই চোখে পড়ে। এসব বেলুন দেখে শিশু-কিশোরদের প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয়। গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি সে ভ্যানের দিকে তারা ছুটে যায়। কিন্তু এই গ্যাস সিলিন্ডার যে কোন সময় ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ। যেমনটা ঘটেছে বুধবার ঢাকার রূপনগরে বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে। সে বিস্ফোরণে সাতটি শিশু নিহত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক সুলতানা রাজিয়া বলেন, সাধারণত বেলুনে হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করার কথা। এই গ্যাস ব্যবহারে বিপদও কম। কিন্তু আজকাল বেলুন বিক্রেতারা হিলিয়াম গ্যাসের পরিবর্তে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করছেন। অধ্যাপক রাজিয়া বলেন, গ্যাস ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সিলিন্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিলিন্ডারের মান ভালো না থাকায় প্রায়শই সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যে সিলিন্ডারের ভেতরে হাইড্রোজেন গ্যাস থাকে সেখান থেকে যদি গ্যাস নির্গত হয় তাহলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু হিলিয়াম গ্যাস থাকলে বিপদ ততটা থাকেনা। "রাস্তাঘাটে যেভাবে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বেলুন বিক্রি করা হচ্ছে সেদিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। এসব সিলিন্ডার থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস লিকেজ হলে বিস্ফোরণ ঘটে, " বলছিলেন অধ্যাপক রাজিয়া। তিনি বলেন, সব ধরনের উচ্চচাপের গ্যাস সিলিন্ডার - হিলিয়াম, এলপিজি, সিএনজি এবং হাইড্রোজেন - সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। সিলিন্ডারের মান ঠিক আছে কিনা সেটি দেখভাল করে বাংলাদেশ বিস্ফোরক পরিদপ্তর। সংস্থাটির প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক সামশুল আলম বলেন, বাংলাদেশে এক শ্রেণীর হকার সিলিন্ডার পরিবর্তন করে বেলুন বিক্রি করে। তিনি বলেন, অনেকে এসব সিলিন্ডারে হাইড্রোজেন গ্যাস রিয়েক্টর তৈরি করে। ফলে বিপদের সম্ভাবনা আরো বেড়ে যায়। হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক আবিদা সুলতানা বলেন, হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম - দুটো গ্যাস বাতাসের চেয়ে হালকা। তবে হাইড্রোজেন গ্যাস বাতাসের চেয়ে বেশি হালকা। বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস ঢুকানো হলে সেটি ওড়ে বেশি। আবিদা সুলতানা বলেন, হাইড্রোজেন গ্যাস সহজে বানানো যায়। কিন্তু হিলিয়াম গ্যাস সহজে বানানো যায়না। তাছাড়া হাইড্রোজেন গ্যাসের দামও কম। " একটা হিলিয়াম গ্যাস সিলিন্ডারের দাম এক লাখ টাকা। অথচ একটি হাইড্রোজেন গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৬০-৬৫ হাজার টাকা," বলছিলেন আবিদা সুলতানা। পরীক্ষাগারে ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকৌশল বিভাগ হিলিয়াম গ্যাস করে। এই গ্যাস ক্রয় করতে হলে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় তাদের। অধ্যাপক রাজিয়া বলেন, হিলিয়াম গ্যাস ক্রয়ের করার ক্ষেত্রে সরবরাহকারীরা নিশ্চিত হতে চায় তাদের কাছে নিরাপদ এবং মানসম্পন্ন সিলিন্ডার আছে কিনা। প্রয়োজনে সরবরাহকারীরা সিলিন্ডারের মান যাচাই করে দেখে। অথচ রাস্তাঘাটে বেলুন বিক্রেতারা এতো অনায়াসে হাইড্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করছে কিভাবে? এ প্রশ্ন তোলেন অধ্যাপক রাজিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেক বেলুন বিক্রেতা বাসায় বসে অ্যালুমিনিয়াম, পানি এবং কস্টিক সোডার সমন্বয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করে। এর ফলে বিপদ আরো বহুগুণে বেড়ে যায় বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক রাজিয়া। নিরাপদ বেলুন চিনবেন কিভাবে : বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক বলছেন, যেসব বেলুন খুব উপরের দিকে উঠেনা সেগুলোর ভেতরে বাতাস কিংবা হিলিয়াম গ্যাস থাকে। হাইড্রোজেন গ্যাস ভর্তি বেলুন উড়ে যাবার প্রবণতা বেশি থাকে। সাধারণত রাস্তায় যারা বেলুন বিক্রি করে তাদের ভ্যানের সাথে কিছু বেলুন সবসময় আটকে রাখা হয়। যদি দেখা যায় যে সুতো দিয়ে বেঁধে রাখার পরেও বেলুনগুলো বেশি উড়ু-উড়ু করছে, তাহলে মনে করতে হবে এসব বেলুনে হাইড্রোজেন গ্যাস রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, সেই বিক্রেতার সিলিন্ডারে হাইড্রোজেন গ্যাস রয়েছে। প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক বলেন, এসব সিলিন্ডার এড়িয়ে চলতে হবে। তিনি বলেন, এসব সিলিন্ডারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×