ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কমিউনিটি পুলিশ

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৯

 কমিউনিটি পুলিশ

শনিবার ছিল কমিউনিটি পুলিশিং ডে-১৯। দেশে রাজধানীসহ প্রায় সর্বত্র কমিউনিটি পুলিশিং কাজ করলেও তাদের কাজটা হয়তো তেমন সক্রিয় ও দৃশ্যমান নয়। যেমন নয় গ্রাম পুলিশ, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, নৈশ প্রহরীসহ কতিপয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যকলাপ। তাই বলে একটি আধুনিক দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা ও অবদান অস্বীকার করা যায় না কোন অবস্থাতেই। বিশেষ করে সেই সময়ে যে সময়ে দেশে খুন-খারাবি, চুরি-চামারি, ছিনতাই, ডাকাতি ও লুটপাট, ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক হানাহানি, অস্থিরতা, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ-প্রতিহিংসা, জিঘাংসাসহ অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা, সড়ক ও রেল দুর্ঘটনা ইত্যাদি ক্রমবর্ধমান। এর সর্বশেষ জ্বলন্ত উদাহরণ হলো ভোলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে নিছক একটি ধর্মীয় গুজব ছড়ানোকে কেন্দ্র করে সংঘটিত কিছু মানুষের সহিংস ক্ষোভ-বিক্ষোভ এবং তা নিয়ন্ত্রণে নিতান্ত বাধ্য হয়ে পুলিশের গুলিবর্ষণে চারজন নিহতসহ শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা। এটিকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে এক শ্রেণীর দুর্বৃত্ত কর্তৃক সংখ্যালঘুদের পাড়ায় হামলাসহ ব্যাপক লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে, যা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা, গ্রাম পুলিশ তথা আনসার বাহিনী এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিবসটি পালন উপলক্ষে এই কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের। তিনি বলেছেন, জনসাধারণ যাতে সহজে বিভ্রান্তÍ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের। প্রায় সব ক্ষেত্রেই তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই করে দেখা আবশ্যক। এর বাইরেও বর্তমানের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম, মাদক, চোরাচালান ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রেই ভূমিকা রাখতে পারে কমিউনিটি পুলিশ বাহিনী, যা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে। বর্তমানে গড়ে ৮০০ নাগরিকদের জন্য একজন পুলিশ রয়েছে। পুলিশের সীমিত জনবল, আধুনিক পর্যাপ্ত যানবাহন ও অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, তথ্যপ্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা, মাত্রাতিরিক্ত খাটুনি ইত্যাদি অস্বীকার করা যায় না। বর্তমান সরকারের আমলে তাদের সুযোগ-সুবিধা এমনকি বেতন-বোনাস বর্ধিত করা হয়েছে বহুলাংশে। বর্তমানে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগও তুলনামূলকভাবে কম। ২০০৯ সালে পুলিশ ও জনসংখ্যার অনুপাত ছিল ১ : ১৩৫৫। বর্তমানে তা ১ : ৮০১। পুলিশ বাহিনীতে আরও পঞ্চাশ হাজার সদস্য নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে সেভ ঢাকা সিটি প্রজেক্ট। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক নির্মূল ও প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনীর সাফল্য উল্লেখ করার মতো। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বে এখন রোল মডেল। অধুনা এর সঙ্গে নিরাপদ সড়ক ও খাদ্যের জন্য আন্দোলনও যুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে সাফল্যের এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে যে কোন মূল্যে। কমিউনিটি পুলিশিং এক্ষেত্রে সহায়ক শক্তি। ইদানীং রাজধানী ও দেশের অন্যত্র খুন-ধর্ষণ-সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়েছে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীকে আরও তৎপর ও নজরদারি বাড়াতে হবে। সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে বহুলাংশে। পুলিশের এক্ষেত্রে সবিশেষ করণীয় রয়েছে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধসহ জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তা প্রশংসিত হয়েছে। জনসাধারণকে নানা কারণে অহেতুক হয়রানির অভিযোগটিও প্রায় ওপেনসিক্রেট। গণমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যে সময় সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করে না, তা নয়। সেক্ষেত্রে জনসাধারণকে হয়রানিমুক্ত সেবার পাশাপাশি সর্বস্তরে পুলিশের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।
×