ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

চীনের আদলে ইভি বাসেই মুক্তি ঢাকাবাসীর, ঢাকায় যুক্ত হচ্ছে ৪০০ ইলেকট্রিক বাস!

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৭:৫৩, ১২ জুলাই ২০২৫

চীনের আদলে ইভি বাসেই মুক্তি ঢাকাবাসীর, ঢাকায় যুক্ত হচ্ছে ৪০০ ইলেকট্রিক বাস!

ছবি: জনকণ্ঠ

প্রতিদিন যানজট, দূষণ আর অসহনীয় কোলাহলে হাঁসফাঁস করছে ঢাকা শহর। আড়াই থেকে তিন কোটির মতো মানুষের বসবাস এ মহানগরীতে। সকাল থেকে রাত, গন্তব্যে পৌঁছাতে নাগরিকদের মুখোমুখি হতে হয় দীর্ঘ যানজট, কালো ধোঁয়া, কর্কশ হর্ন আর ক্লান্তিকর অপেক্ষার। শহরের প্রতিটি মোড় যেন একেকটি ভোগান্তির কেন্দ্র। তবে এই চিরচেনা হতাশার মধ্যে এবার দেখা দিয়েছে এক নতুন আশার আলো—ঢাকার রাস্তায় নামছে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক বাস।

এই উদ্যোগ নিছক একটি নতুন যানবাহনের সংযোজন নয়, বরং ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী রূপান্তরের সূচনা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পে ঢাকা মহানগরীতে যুক্ত হবে চার শতাধিক বৈদ্যুতিক বাস। প্রথম পর্যায়ে এসব বাস চলবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই বাসগুলোতে থাকবে উন্নত মানের আসন, ডিজিটাল টিকিটিং, লাইভ ট্র্যাকিং সিস্টেমসহ যাত্রীবান্ধব নানা সুবিধা। ধোঁয়া ও শব্দদূষণ মুক্ত এই বাসগুলো ঢাকার পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

 

সরকার জানিয়েছে, এই বাসগুলো আমদানির ক্ষেত্রে এবার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। অতীতে ভারতের কিছু বাস টেকশই না হওয়ায় এবার চীন, দক্ষিণ কোরিয়া কিংবা ইউরোপের মতো উন্নত দেশ থেকে মানসম্মত ব্র্যান্ড বাছাইয়ের চেষ্টা চলছে। শুধু বাস নয়, দক্ষ চালক, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা, টেকশই যন্ত্রাংশ নিশ্চিত করতেও নেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। পাশাপাশি গঠন করা হবে মোবাইল নির্গমন পরীক্ষা ইউনিট এবং আপগ্রেড করা হবে যানবাহন পরিদর্শন কেন্দ্র। চালকদের প্রশিক্ষণের কাজ শেষ করে চলতি বছরের আগস্ট নাগাদ চারটি রুটে বৈদ্যুতিক বাস চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকায় বৈদ্যুতিক বাসের আগমনকে এক সময়োপযোগী ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীনের সেনচেন শহরে ইতোমধ্যে ১৭ হাজারেরও বেশি ইভি বাস চলছে। ইউরোপ ও আমেরিকাতেও ব্যাপক হারে বৈদ্যুতিক গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রসার ঘটেছে। সেই তুলনায় ঢাকার এই উদ্যোগকে অনেকেই এক ‘নীরব বিপ্লব’ হিসেবে দেখছেন। এই প্রকল্পের আওতায় পূর্বাচল, ঝিলমিল ও নারায়ণগঞ্জে গড়ে উঠবে চার্জিং ডিপো। এ ছাড়া তিনটি আধুনিক ডিপো নির্মাণের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকার চায়, একক অপারেটর মডেলের মাধ্যমে পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা দূর করতে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শুধু যানবাহন নয়, নতুন এই বৈদ্যুতিক বাসগুলো হয়ে উঠবে পরিচ্ছন্ন, আধুনিক ও মানবিক ঢাকার প্রতীক। পাশাপাশি এটি দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনের পথও প্রশস্ত করবে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, নাগরিকদের সচেতন অংশগ্রহণ ও দায়িত্ববোধও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যাত্রীরা যদি এই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগকে ভালোবাসা, সঠিক ব্যবহার ও যত্নে গ্রহণ করেন, তবেই সফল হবে এই স্বপ্ন।

 

 

 

এই বৈদ্যুতিক বাস প্রকল্প ঢাকার পরিবহন ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে। সফল বাস্তবায়ন হলে এটি কেবল যানজট ও দূষণ কমাবে না, বরং নাগরিক জীবনের মানোন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা এবং আধুনিক নাগরিক সংস্কৃতির বিকাশেও অনন্য ভূমিকা রাখবে। একটি বাসযোগ্য, দূষণমুক্ত ও মানবিক ঢাকা গড়ার পথে এই প্রকল্প যেন হয় এক দৃঢ় পদক্ষেপ—এটাই প্রত্যাশা।

ছামিয়া

×