ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পেঁয়াজের দরের ফারাক ৪০ টাকা

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৮ অক্টোবর ২০১৯

পেঁয়াজের দরের ফারাক ৪০ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রান্না-বান্নার নিত্যপণ্য পেঁয়াজ; যার দাম এখন লাগামহীন। পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দরের ফারাক ৪০ টাকা। বেশি দামে পণ্যটি কিনতে গিয়ে, নাভিশ্বাস অবস্থা সাধারণ ক্রেতাদের। শ্যামবাজার রাজধানীতে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত। ২২ অক্টোবর এখানে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয় প্রায় ৮০ টাকা কেজি দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ ৮৮ থেকে ৯০ আর মানভেদে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৮২ টাকায়। এদিকে শ্যামবাজারের সঙ্গে রাজধানীর কাওরানবাজারে খুচরা বিক্রিতে দামের পার্থক্য কেজিতে প্রায় ২০ টাকা। অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন মহল্লার খুচরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কিংবা তারও বেশি। অর্থাৎ পাইকারির সঙ্গে দামের পার্থক্য কেজিতে কমপক্ষে ৪০ টাকা। শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, কাঁঠাল বাগান কাঁচা বাজার, মালিবাগ বাজার, মালিবাগ রেলগেট বাজার ঘুরে পেঁয়াজের এ বর্ধিত দাম দেখা যায়। বাজারে দেশী পেঁয়াজ কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়লেও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশী পেঁয়াজের সঙ্কট আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে না আসায় এ বাড়তি দাম। এসব বাজারে এক সপ্তাহ আগে খুচরা প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা মিসর ও মিয়ানমার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা এবং ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে। অথচ সপ্তাহ যেতে না যেতেই সরবরাহ কমেছে এমন অজুহাতে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকা। একইভাবে পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৬ টাকা। এসব বাজারে খুচরা দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। রাজধানীর কাওরান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আলতাফ আহম্মেদ বলেন, পেঁয়াজ ছাড়া তো তরকারি খাওয়া মুশকিল। শুনেছিলাম সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে পেঁয়াজের দাম কমবে। কিন্তু আমরা এখনও তার বাস্তবতা দেখছি না। এদিকে সরকারের নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারী বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা প্রতিকেজি পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ২০ টাকা। আর দেশী পেঁয়াজে বেড়েছে ১০ টাকা। কাওরান বাজার, মানিকদী বাজার, মালিবাগ, কচুক্ষেত বাজার, রামপুরা বাজার, মহাখালী বাজার, আজমপুর বাজার ও উত্তরা বাজারের তথ্য সংগ্রহ করে টিসিবি বলছে, শুক্রবার বাজারগুলোয় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা এবং দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। টিসিবি বলছে, গত সপ্তাহে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকায়। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গতবছরের ২৫ অক্টোবর অর্থাৎ এক বছর আগে খুচরা বাজারে এই পেঁয়াজের মূল্য ছিল মাত্র ২৫ টাকা। তবে পেঁয়াজের বাজার অচিরেই স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে এমনিতেই বাজার স্বাভাবিক হবে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ চেষ্টা চলছে বলেও হুমায়ুন কবির উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা মহানগরীর প্রতিদিন ৩৫ জায়গায় ট্রাকে করে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারত রফতানি বন্ধের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মিয়ানমার থেকে ১২ হাজার ৮৪৯ টন, ভারত থেকে ৮ হাজার ৫৬৮ টন (নিষেধাজ্ঞার আগে এসব পেঁয়াজের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল), মিসর থেকে ৫৬২ টন এবং চীন থেকে ৫২ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। সব মিলিয়ে এই ২০ দিনে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৬২ হাজার টন। আমদানি হয়েছে ২২ হাজার টন। ব্যবসায়ীদের ধারণা অনুযায়ী প্রতিবছর চাহিদার ৭০ শতাংশ পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয়। বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টনের মতো। উৎপাদিত এ পেঁয়াজের ৩০ শতাংশ আবার সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তাতে চাহিদা পূরণ না হওয়ায় আমদানি করতে হয় ৭ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন। স্বল্প দূরত্ব আর সহজলভ্যতার কারণে আমদানির বেশিরভাগটা ভারত থেকেই হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে এই উৎপাদনের হার প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন। ভারত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পেঁয়াজ রফতানি করেছে। যার একটি বড় অংশ এসেছে বাংলাদেশে। এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকেও একবার ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে নূন্যতম রফতানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজিতে পাওয়া গেলেও দেশী পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
×