
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে বড় অঙ্কের শুল্ক গুনতে হয়
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে বড় অঙ্কের শুল্ক গুনতে হয় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপ কার্যকর হলে শুল্কের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে একক বাজার হিসেবে রপ্তানিতে শীর্ষ যুক্তরাষ্ট্রের বাজার হারানোর ঝুঁকি রয়েছে উদ্যোক্তাদের।
এ অবস্থায় দেশটির সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যাগ্রিমেন্ট) নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করে সমঝোতায় পৌঁছাতে ও বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় যোগ দিতে বুধবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।
এর আগে গত ২৬ জুন ইউএসটিআরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশের ওপর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কর আরোপের অনুরোধ করে বাংলাদেশ যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো গ্রহণ করেনি বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কম শুল্কহার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন দেশ ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) সঙ্গে জোর আলোচনা চালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাজ্যই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে শুল্কহার নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছে।
অথচ ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি এই তিন মাসের বিরতির সময় ৯০টি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। ভারতের মতো আরও অনেক দেশ চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকলেও বিশ্লেষকরা এসব চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, চুক্তিগুলোতে অনেক শর্ত জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত সেগুলোর বাস্তবায়ন কঠিন করে তুলতে পারে।
এদিকে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কারোপ করতে পারে এই আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের কারখানাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত একাধিক জরিপে উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠান এই অনিশ্চয়তা উপেক্ষা করেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের ওওপর পারস্পরিক শুল্কের চূড়ান্ত হার নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে এই হার ৩৭ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা পূর্বের ১৬ শতাংশের ওপর অতিরিক্ত হিসেবে আরোপ করা হয়েছে। ফলে, মোট হার দাঁড়িয়েছে ৫৩ শতাংশ।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন ইউএসটিআরের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে গেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগ দেবেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ওই সভায় বাংলাদেশের কাছে কোন্ কোন্্ পণ্যে শূন্য-শুল্ক সুবিধা চায়, তা জানতে ইউএসটিআরের কাছে একটি শুল্ক শিডিউল চেয়েছিল ঢাকা। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ট্যারিফ শিডিউল পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ শিডিউল (আমদানি বা রপ্তানিকৃত বিভিন্ন পণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্ক হারের আনুষ্ঠানিক তালিকা) না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ অ্যাগ্রিমেন্টের জন্য যে খসড়া বাংলাদেশকে দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই আলোচনা হবে। বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, আলোচনায় অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা শেষ সময় পর্যন্ত আলোচনা অব্যাহত রেখে সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করব। উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
পরে তা তিন মাসের জন্য কার্যকর স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন তিনি, যার মেয়াদ আগামী ৯ জুলাই শেষ হবে। আলোচনার বর্তমান স্থবির পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছেন খসড়া চুক্তি ও আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এক ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যবসায়ী জানান, অনেক দেশ এখনো খসড়া শুল্ক চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় এই সময় বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে যেসব কঠোর শর্ত দিয়েছে, তার বেশিরভাগই শুল্ক, প্যারাশুল্ক এবং জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে জড়িত।
চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে এসব শর্ত আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণের প্রয়োজন। তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া শর্তগুলো মোকাবিলা করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা চলছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, যেহেতু উভয়পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তাই চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে।আলোচনার সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে আরও সময় লাগতে পারে।
কারণ, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো একমত হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ খসড়া শুল্ক চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বহুপক্ষীয় বাণিজ্য সূত্র অনুসরণ করতে চায়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন পণ্য আমদানিতে দ্বিপক্ষীয় শুল্ক হ্রাস চায়। এক্ষেত্রে, সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ বা এমএফএন নীতির অর্থ হলো- যখন কোনো একটি দেশের জন্য শুল্ক হার কমানো হয়, তখন ওই একই শুল্ক হার অন্যান্য দেশের জন্যও প্রযোজ্য হবে।