ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চামড়া শিল্প

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

চামড়া শিল্প

দেশের চামড়া শিল্প স্বনির্ভর হয়ে অদ্যাবধি দাঁড়াতে পারল না দূরদর্শিতার অভাবে। যে কারণে এ খাতে রফতানি আয় কমছে গত কয়েক বছর ধরে। এবার কোরবানির চামড়া নিয়ে যা হয়েছে তাও মূলত সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষীদের দূরভিসন্ধি ও কারসাজি বৈ কিছু নয়। শিল্প মন্ত্রণালয় ঈদ-উল-আজহার আগে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী এবং শিল্প মালিকদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে আগের বছরের পুরনো দর বেঁধে দিলেও দুঃখজনক হলো কোরবানির পরপরই একেবারে পড়ে যায় কাঁচা চামড়ার দাম। ফলে প্রায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ার উপক্রম ঘটে কাঁচা চামড়ার প্রধান হকদার এতিমখানা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের। চামড়ার দাম না পাওয়ায় কাঁচা চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলাসহ ফেলে দেয়ার খবরও আছে। এ নিয়ে কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকদের মধ্যে শুরু হয় চাপানউতোর খেলা। চামড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন যে, ট্যানারি মালিকরা তাদের আগের বছরের বকেয়া তথা পাওনা পরিশোধ না করায় এহেন শোচনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা পরে সত্য প্রমাণিত হয়। অথচ চামড়া কেনার জন্য চলতি বছরেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো আট শতাধিক কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে স্বল্পসুদে। যা হোক, মুদ্রার অপর দিকটি হলো এহেন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় সমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিকাশমান ও সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প। অন্যদিকে পরিবেশ দূষণসহ বুড়িগঙ্গা সুরক্ষায় বহু দেনদরবার এবং সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পর পুরান ঢাকা থেকে সাভারে ১৯৯ একরের বেশি জমির ওপর চামড়া শিল্পনগরী গড়ে উঠলেও সেটির অবস্থা ভাল নয়। প্রথমত, নানা অজুহাতে সব শিল্প-কারখানা আজ পর্যন্ত স্থানান্তর হয়নি সেখানে। দ্বিতীয়ত, পরিবেশ দূষণ রোধে বিসিকের উদ্যোগে ৫৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে চীনের সহায়তায় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মিত হলেও তা অসম্পূর্ণ ও অপর্যাপ্ত। বাস্তবে কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও সেটি হয়নি অথবা কাজ করছে না। ফলে একদিকে যেমন কঠিন বর্জ্য স্তূপাকারে জমা হচ্ছে, অন্যদিকে তরল বর্জ্য তথা দূষিত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত পানি গিয়ে পড়ছে ধলেশ্বরীতে। ফলে বুড়িগঙ্গার মতো পরিবেশ দূষণ চলছেই। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি। এ নিয়েও চাপানউতোর খেলা চলছে চামড়া শিল্প মালিক ও বিসিকের মধ্যে। আসলে ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থা বিসিককে এরকম বড় একটি কাজের দায়িত্ব দেয়া ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি চরম অদক্ষতা ও অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। অন্যদিকে চৈনিক প্রতিষ্ঠনটিও যথেষ্ট দক্ষ ও অভিজ্ঞ নয়। ডিসেম্বরের মধ্যে বর্জ্য পরিশোধনাগার তথা সিইটিপি সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পরেই আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে আন্তর্জাতিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ অর্জনের জন্য নিরীক্ষার। অথচ ইতোমধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চামড়া রফতানির খাতে আয় কমেছে ৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, চামড়া বর্জ্যে প্রধানত থাকে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত লবণ, সালফিউরিক এসিড, ক্রোমিয়াম ও অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক, যা মানবদেহ, পশুপাখি, সর্বোপরি প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর ফলে চারপাশের ভয়াবহ পরিবেশ দূষণসহ জনস্বাস্থ্য হুমকিতে থেকে যায়। এখন তা হচ্ছে ধলেশ্বরীতে। এই অবস্থা কাক্সিক্ষত নয় কোন অবস্থাতেই। সাভারের চামড়া শিল্পনগরী পুরোপুরি চালু হলে অনেকটাই সহজসাধ্য হয়ে উঠবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের আন্তর্জাতিক বাজার আরও সম্প্রসারণ করা। মোট কথা, এই শিল্পটির সমূহ বিকাশে যা যা করণীয় সেসবই করা আবশ্যক জরুরী ভিত্তিতে।
×