ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ১১ অক্টোবর ২০১৯

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত

স্বাধীন হয়েছি কত বছর? মাত্র ৪৮। তার আগে ২৩ বছর আমরা শোষিত-নির্যাতিত পেটে-ভাতে খেয়ে-পরে কোনমতে বেঁচে থাকা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাসিন্দা ছিলাম। ১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো। সে সময় বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার কোন উপায় ছিল না। পাকবাহিনী গোটা দেশটাকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। বঙ্গবন্ধু দিশেহারা হয়ে ছুটছিলেন, কিভাবে দেশের মানুষকে বাঁচানো যায়, দেশটাকে গড়ে তোলা যায়। কিন্তু তাঁকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। ১৯৭৫ সালে ইতিহাসের নজিরবিহীন বর্বরতায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ’৭৫ থেকে ২০১৯ সাল ৪৪ বছর। এর মাঝে কুড়ি বছরের বেশি সময় গেছে দেশটাকে লুটেপুটে খাওয়ার মহোৎসবে। ’৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে সরকার গঠন করলে নতুন যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ৫ বছর পর আবার ব্যাঘাত ঘটে। ২০০১ সালে আবার লুটের রাজ্যে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এর পরে যায় ১/১১-এর অধীনে। ২০০৮ সালে আবার আওয়ামী লীগ মহাজোট করে ক্ষমতায় আসে। বলা যায়, এখান থেকেই শুরু। ২০০৮ থেকে ২০১৯Ñ এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ আজ কোথায় চলে গেছে, দেশের বাইরে না গেলে কারও পক্ষেই তা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। বিশ্বের এমন কোন দেশ বা জাতি নেই যারা আজ বাংলাদেশকে জানে না, চেনে না। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রমাগত উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। সেই হিসাবে সমৃদ্ধির এই যাত্রা মাত্র কুড়ি বছরের। এই সময়ে বাংলাদেশের সাফল্য সারা বিশ্বে নজিরবিহীন। কুড়ি বছরে বঙ্গবন্ধুর ৫৪ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। এবার জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদানের সুযোগ হয়েছিল আমার। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে আমেরিকা গিয়েছিলাম। গিয়ে কি দেখলাম, কি বুঝলাম। সেটা বলার জন্যই এ লেখা। জাতিসংঘের এই অধিবেশনে সারা বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা যোগ দিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই গিয়েছেন নিজ নিজ দেশের বিভিন্ন পেশার শতাধিক সংখ্যারও বেশি লোকের বহর। সেখানে তুচ্ছ-তাচ্ছিলের বাংলাদেশের সরকারপ্রধান এবং তার সঙ্গীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হওয়ার কথা যেনতেন কোথাও। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন। নিউইয়র্কের ঐতিহ্যবাহী গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে বাংলাদেশীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মার্কিন প্রশাসন অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশীদের। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আবাস্থল ছিল অভিজাত হোটেল লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে। জাতিসংঘ সাধারণ অভিবেশন চলাকালে এই হোটেলেই অবস্থান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের শতাধিক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছিলেন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্মেলনে আসা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে জাতিসংঘ সদর দফতরে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেন সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ। নর্থ ডেলিগেটস লাউঞ্জের মধ্যাহ্ন ভোজে জাতিসংঘ মহাসচিব নিজ টেবিলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের নিয়ে বসেছিলেন। ওই টেবিলে ডোনাল্ড ট্রাম্প, এ্যাঞ্জেলা মের্কেলের পাশে বসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ এশিয়ার কোন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের জায়গা হয়নি ওই টেবিলে। এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতাও ওই টেবিলে আমন্ত্রিত হননি। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে নৈশভোজ দিলেন সেখানেও গুরুত্ব পেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হোটেলে সাক্ষাত করতে যান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধনী বিল গেটস। বিল গেটস ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত- আইসিসির প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রানডি এবং ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভাও আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার অসামান্য অবদান ও কৃতিত্বের কারণে জাতিসংঘ অধিবেশনে তার হাতে তুলে দেয়া হয় দুটি পুরস্কার। বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচীর সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করে গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন এ্যান্ড ইমিউনাইজেশন। এই পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতিমান এনগোজি ওকোনজো-আইয়েলা। এই এনগোজি ওকোনজো-আইয়েলা নাইজিরিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার অন্যতম বড় ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের পরিচালনা পর্ষদেরও সদস্য এনগোজি। পুরস্কার তুলে দেয়ার আগে এনগোজি ওকোনজো-আইয়েলা শেখ হাসিনাকে যে সব বিশেষণে প্রশংসা করলেন তা সত্যিই অবিস্মরণীয়। ভ্যাকসিন হিরো ছাড়াও তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননায় ভূষিত করে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ। এই দুটি পুরস্কার একসঙ্গে পাওয়া একটি বিরল ঘটনা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে প্রবাসী বাংলাদেশীদের যে মর্যাদা বেড়েছে তার প্রমাণ মেলে বহুমাত্রিকভাবে। আমেরিকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশী একাধিক লোককে দেখেছি স্বচ্ছন্দচিত্তে মার্কিনীদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে। তাদের আচার-আচরণে বাংলাদেশী সহকর্মীদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টিও প্রত্যক্ষ করেছি। অধিবেশনে যোগ দেয়া রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যে আগ্রহ দেখিয়েছেন, গুরুত্ব দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন খানিকটা দূর থেকে নিজের চোখে সব কিছু দেখেছি। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপচারিতায় শেখ হাসিনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে আমার কাছে নরেন্দ্র মোদি বা ইমরান খানের চেয়েও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী মনে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অধিবেশন চলাকালীন বিরতিহীন প্রোগ্রাম করেছেন। সফরসঙ্গী সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছুটতে ছুটতে টায়ার্ড হয়ে গেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একের পর এক কাজ করে গেছেন। তার এই বিরতিহীন ছুটে চলায় বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় একটু মূল্যায়ন করলেই পরিষ্কার হবে। মানুষের জীবন তো বায়বীয় কিছু না অথবা শুধু স্বপ্ন নয়, যদি তর্কের খাতিরে বাংলাদেশকে এখনও গরিব দেশ হিসেবে ধরে নেই তাহলে মূল্যায়ন করা দরকার কতটা গরিব? বাংলাদেশে কি নেই, বাঙালীরা কি পায় না, কি খায় না বা কি পরে না? বাংলাদেশের মানুষের কোন্্ সাধ-আহ্লাদটি অপূর্ণ? এসব বিষয়ের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৪৮ বছর আগে যে দেশের মানুষ এক বেলা খাবারের জন্য অমানুষিক শ্রম বিক্রি করত সে দেশের মানুষ দুনিয়ার যে কয়টি দেশের মানুষ স্বল্প বা সামান্য মূল্যে খাদ্য পায় বাংলাদেশ তাদের মধ্য অন্যতম একটি দেশ। প্রায় ১৭ কোটি মানুষের এই বাংলাদেশে নিজেদের উপার্জনে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা একটি বিস্ময়কর বিষয়। খোদ আমেরিকায় একটি বার্গার, কিছু সালাদ আর ঘাসটাস খেতে ন্যূনতন ১৫ ডলার লাগে। বাংলাদেশী টাকায় দাম পড়ে প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো। এমনিভাবে জীবনধারণের প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী। এ শুধু আমেরিকায় নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই এ অবস্থা। আমাদের পাশের দেশ থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, এমনকি ভারতে গিয়ে দেখেন খাবারসহ জিনিসপত্রের দাম কেমন। গালভরা গল্প করে মুখে ফেনা তোলা যায় সহজে; কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। আমার বাসার কাজের ছেলে-মেয়েরা কয়েকটি জিনিস আনতে লিখে দিয়েছিল। আমি আনিনি। আমার ড্রাইভারের জন্য একটি টি-শার্ট কিনতে গেলাম টাইম স্কোয়ারের একটি দোকানে। দাম চাইল ৩০ ডলার। মানে বাংলাদেশের আড়াই হাজার টাকারও বেশি। এটি মেড ইন বাংলাদেশ। ঢাকার যে কোন বাজারে এর সর্বোচ্চ দাম ৪-৫শ’ টাকা। বাংলাদেশের দোকানদাররাও লাভ করে জিনিসপত্র বিক্রি করে। তারপর যে টি-শার্টের দাম ৪-৫শ’ টাকা সেটা আমেরিকায় বিক্রি হয় আড়াই হাজার টাকায়। বাংলাদেশের মতো আমেরিকাতেও ফকির-মিসকিন আছে। আছে রিক্সাওয়ালা। আমেরিকায় রিক্সাও চলে। আমার হাঁটুতে একটু সমস্যা ছিল বলে একদিন ভাবলাম রিক্সায় যাই। ধরুন প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত পথের ভাড়া ৩০ ডলার। আমেরিকার রিক্সা তেল-গ্যাস বা ফুয়েল দিয়ে চলে না, আমাদের দেশের মতোই ব্যাটারিচালিত। কিন্তু ভাড়ার পরিমাণ বিবেচনা করুন। আমাদের মতো আরাম-আয়েসের জীবন আমেরিকানদের নয়। ওরা নিরন্তর ছুটে চলে। আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে শুকর গোজার করি না। কর্মস্পৃহা নেই। খালি ফাঁকিবাজি করে চলতে চাই। আমি এবারই প্রথম আমেরিকা গেলাম। আর একবারেই বুঝলাম আমেরিকা শুধু একটি দেশই নয়, আমেরিকা পৃথিবীর রাজধানী। প্রতিদিন সমগ্র পৃথিবী থেকে হাজার হাজার মানুষ আমেরিকা আসছে-যাচ্ছে। এই আসা-যাওয়ার মূল কারণ আমেরিকা সবার কাছেই স্বপ্নের দেশ। কিন্তু মার্কিনীরা আছে তাদের মতোই। তারা আবেগে গা ভাসায় না বা হুজুগে চলে না। তাদের কাজকর্ম-চিন্তা-ভাবনা সবকিছুতেই গতি। যেদিকে তাকাবেন দেখবেন মানুষ ছুটছে আর ছুটছে। কারও সঙ্গে কারও একদ- দাঁড়িয়ে কথা বলার ফুরসত নেই। হাঁটছে, খাচ্ছে, কাজে যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের লাখ লাখ জনশক্তি দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে কাজকর্ম করে খাচ্ছে। নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে বাংলাদেশী একজন ট্রলিবয় পেয়েছিলাম। তার বাড়ি সুনামগঞ্জে। ওখানে তার মতো পাকিস্তানী ও হিন্দুস্থানীরাও কাজ করে। দুবাই বিমানবন্দরেও একাধিক বাঙালী পেয়েছি। কাজ করছে। হোক না ছোট কাজ। যার যেমন যোগ্যতা। কিন্তু এই স্বল্প শিক্ষিত সাধারণ মানুষগুলো বিদেশে গিয়ে যে আত্মপ্রত্যয় আর সাহস নিয়ে জীবন সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করছে তাকে স্যালুট করতে হয়। এই মানুষগুলোর সাহসের আরেক নাম শেখ হাসিনা। আমেরিকার অনেক জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি। প্রথমত সময় কম, দ্বিতীয়ত আমি বেশি হাঁটতে পারছিলাম না। আমেরিকায় হাঁটতে হয়। তারপরও যেটুকু দেখার সুযোগ হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশী খাবার খেতে একদিন গেলাম জ্যাকসন হাইটসে। বলা যায় মিনি বাংলাদেশ। সেখানে আছে লাবলু আনসার। প্রবাসী সাংবাদিক। বাংলাদেশ প্রতিদিনের আমেরিকা প্রতিনিধি। আমি আর কাজী রশিদুল হক পাশা ভাই একসঙ্গে ছিলাম। লাবলু সারাক্ষণ লেগেছিল আমাদের দেখভাল করায়। প্রায় দিনই নিজে গাড়ি চালিয়ে আমাদের ম্যানহাটনের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে বলে গেছে আবার সকালে আসবে। জ্যাকসন হাইটসে কর্মরত বাংলাদেশী সাংবাদিকদের আন্তরিকতায় সত্যি আমরা মুগ্ধ। লং আইল্যান্ডে থাকেন আমাদের সকলের প্রিয় বাংলার বাণীর সাবেক চিফ রিপোর্টার দাউদ ভূঁইয়া। তিনি তার গাড়ি দিয়ে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম হেলাল ভাই এবং ওয়াশিংটনে নিয়োজিত প্রেস মিনিস্টার শামীম ভাই শত ব্যস্ততার মাঝেও হোটেলে গিয়ে আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। শামীম ভাই জ্যাকসন হাইটসে এসে দীর্ঘক্ষণ আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। নিউজ কভার করার জন্য বাংলাদেশ থেকে যেসব সহকর্মী বন্ধু এবার জাতিসংঘে গিয়েছিলেন তারা যে কি অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। সারাক্ষণ তাদের দৌড়ের ওপর থাকতে হয়েছে। তাও আবার হেঁটে। কারণ, আমেরিকায় আমাদের দেশের মতো যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করা যায় না। সাংবাদিকদের এই পরিশ্রমের বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর চোখ এড়ায়নি। তিনি সবদিকে খেয়াল রেখেছেন। সব সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে সাংবাদিকদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আমেরিকায় প্রবাসী বাঙালীদের আত্মপ্রত্যয় আর কর্মস্পৃহা দেখে অবাক বিস্ময়ে ভাবতাম সারা দুনিয়া থেকে বাংলাদেশীরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দেশে যে টাকা পাঠায় সে টাকা যদি সঠিক কাজে বিনিয়োগ করা হতো তাহলে দেশে যেমন ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হতো, তেমনি বাংলাদেশটা আজ কোথায় থাকত! কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো। ওরা টাকা পাঠায় আর এদেশের মুনাফাখোর লুটেরার দল সে টাকা পাচার করে দেয় বিদেশে। ফলে দেশে বিনিয়োগ হয় না। বেকারত্ব যায় না। সময় এসেছে রাষ্ট্রকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার। ২৮ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় এসডিজি বাস্তবায়ন বিষয়ে একটি আলোচনা সভা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। ওই অনুষ্ঠানে বিএফইউজের সভাপতি হিসেবে আমাকে বক্তব্য রাখতে হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য দুটি জিনিস অত্যাবশ্যকীয়Ñ একটি হচ্ছে দেশপ্রেমিক আমলাতন্ত্র, অপরটি দেশপ্রেমিক পুঁজি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বদলে যায়। কিন্তু আমলাতন্ত্র থাকে। পাশাপাশি পুঁজির কোন হেরফের হয় না। এই দুই শ্রেণীর দেশপ্রেমের পাশাপাশি সঠিক নেতৃত্ব থাকলে সে দেশ কিংবা জাতিকে দুুনিয়ার কারও সাধ্যি নেই পেছনে ফেলে রাখে। দেশে দুর্নীতির নামগন্ধও থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের পাশে এখন প্রয়োজন আমলাতন্ত্র ও পুঁজির দেশপ্রেম। আমেরিকা থেকে ফিরে আসার সময় আমার পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। একেবারেই হাঁটতে পারছিলাম না। সহযাত্রী সাংবাদিক ফারজানা রুপা এবং রিয়াজুল বাসার অনেক সহায়তা করেছে। বিশেষ করে রুপা দৌড়াদৌড়ি করে আমার জন্য ট্রলি সংগ্রহ করে দেয়ায় আমার ফিরে আসা সহজ হয়েছে। তাদের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন ওই সময় আমেরিকায় ছিলেন। তিনিও আমার খোঁজ-খবর রেখেছেন। দেশে ফিরে কোনমতেই মিলাতে পারছি না, বাইরে কোন্্ বাংলাদেশ দেখে এলাম আর দেশে এসে কি দেখছি! লেখক : সভাপতি, বিএফইউজে
×