ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘টিকটক’ নামের ২ লাখ ভিডিও অপসারণ

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘টিকটক’ নামের ২ লাখ ভিডিও অপসারণ

ফিরোজ মান্না ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ‘সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এ্যান্ড রেসপন্স’ প্রকল্পের মাধ্যমে সাইবার জগত নিরাপদ রাখার কাজ চলছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ঠিক রেখে নারী, শিশু, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখতে সাইবার জগত নিরাপদ করতেই হবে। যাতে নারী, শিশু, সমাজ, রাষ্ট্র কোনভাবেই বিপন্ন হতে না পারে তার জন্যÑ যে কোন মূল্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে ডিজিটালাইজড করার পাশাপাশি দেশের নাগরিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্বও আমাদের। ইতোমধ্যে ২২ হাজার পর্নোসাইট বন্ধ করা হয়েছে। ‘টিকটক’ নামের ২ লাখ ভিডিও অপসারণ ও ২ লাখ গ্যাম্বলিং সাইট বন্ধ করেছে সাইবার থ্রেট প্রকল্প। কয়েকটি সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে সাইবার জগত নিরাপদ রাখতে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ তথ্য জানিয়েছেন। সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, দেশে ইন্টারনেট দেয়া হয়েছে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত। এখন ইন্টারনেট নিরাপদ রাখতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হযেছে। দেশের প্রায় প্রতি ইউনিয়নে ইন্টারনেটের ব্রডব্যান্ড সংযোগ পৌঁছে যাওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের উপজেলা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। স্থাপন করা হবে ডিজিটাল নিরাপত্তা ইউনিট। ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব কিংবা আগামীদিনের বিস্ময়কর ফাইভ-জি প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রযুক্তি উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে নিরাপদ ইন্টারনেট অপরিহার্য। এ জন্য লাগসই করণীয় নির্ধারণ করে সমন্বিত উদ্যোগে কাজ করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজটি একক কোন বিভাগ ও সংস্থার কাজ নয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই একযোগে কাজ করলে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হবে। টেলিকম অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য ১৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এ্যান্ড রেসপন্স প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ এ বছরের ১৯ ডিসেম্বর শেষ হবে। সাইবার থ্রেট প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সাইবার জগত অনেকটা নিরাপদ করা সম্ভব হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে সব ধরনের সাইট শনাক্ত করা যাচ্ছে। যেসব সাইট সন্দেহজনক মনে হচ্ছে তা সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আগে এসব সাইট বন্ধ করতে আইআইজির (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) মাধ্যমে বন্ধ করা হতো। এখন সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এ্যান্ড রেসপন্স প্রকল্পের মাধ্যমে বন্ধ করা হচ্ছে। প্রযুক্তি দিয়েই প্রযুক্তি অপরাধ মোকাবেলা করতে হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের বাইরে সাইবার জগতকে নিরাপদ করতে সরকারের তিনটি সংস্থা সর্বক্ষণিক কাজ করছে। সংস্থাগুলো বাড়তি জনবল নিয়োগ কওে সাইবার জগত নিরাপদ রাখার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আর আগের মতো দেশ বিরোধী অপপ্রচার হচ্ছে না। ব্যক্তিপর্যায়েও নোংরামি অনেকাংশে কমে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এ ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার রোধে ‘কন্টেন্ট ফিল্টারিং’ করা হচ্ছে। এ জন্য একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কোন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত হতে দেয়া হবে না। ফেসবুকে আমাদের ফিল্টারিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। ফেসবুক আমেরিকান আইন অনুযায়ী কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলে। কোন কন্টেন্ট বাদ দেয়া বা অন্য বিষয়ে ফেসবুককে শুধু অনুরোধ করা যায়। আমরা কেবল ফেসবুককে অনুরোধ করতে পারি। ফেসবুক তার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী নিজেদের কাজগুলো করে। এখন ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। ফেসবুক আমাদের সব কথা শোনে না, কিন্তু কিছু কথা শোনে। বিটিআরসি জানিয়েছে, অনেক আগে থেকেই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটর করার জন্য সেল গঠন করেছে। ওই সেল কাজ করে যাচ্ছে। এ জন্য তারা নতুন করে কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। এর বাইরে সরকারের আরও দু’টি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা সাইবার জগত মনিটর করার জন্য বেশ কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছে। এই দুটি সংস্থায় আরও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী যে কোন সময়ের জন্য সাইবার জগত নিরাপদ রাখার কাজ করবে এই দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশের পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে সাইবার ক্রাইম মনিটর করার জন্য ‘সাইবার পুলিশ সেন্টার’ গঠন করা হয়েছে। এই সেলটি পরিচালনা করবে সিআইডি। এ জন্য সিআইডিতে নতুন একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এই ইউনিট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও দেশ বিরোধী বিষয়গুলো মনিটর করবে। বিটিআরসি জানিয়েছে, সাইবার জগত নিরাপদ রাখতে নানা বিষয় মনিটর করা হবে। কেউ যেন দস্যুতা করে পার পেয়ে না যায় তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যসুরক্ষা করতে এই সেল সর্বক্ষণিক কাজ করছে। সাইবার সুরক্ষায় প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। আর সচেতনতা তৈরি করার বিষয়েও কাজ করা হবে। সাইবার নিরাপত্তাকে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল নিরাপত্তা বলেছেন। কারণ এখন আর শুধু ইন্টারনেটভিত্তিক এই অপরাধ হচ্ছে না। তথ্যপ্রযুক্তির নানা শাখায় অপরাধ ঘটছে। তাই এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা বলাই সমীচীন। দেশের মানুষ ও রাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখতে যা কিছু করণীয় রয়েছে তার সবকিছু করা হবে। দেশের কোন মানুষকে অনিরাপদ রাখা হবে না। তবে সব কিছুই হবে তথ্যপ্রবাহ ঠিক রেখে।
×