ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজহার মাহমুদ

আগুনের শেষ কোথায়?

প্রকাশিত: ০৯:২৫, ১১ এপ্রিল ২০১৯

আগুনের শেষ কোথায়?

আগুনে পুড়ে মৃত্যু। কত যন্ত্রণা, কত কষ্টের সেটা নিজে না পুড়লে অনুভব করা যাবে না। কত ভয়ানক আর যন্ত্রণাদায়ক। অথচ অর্থহীন শুধু সাময়িক সমবেদনা জানানো আমাদের কাজ! বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের কারও প্রতি কোন দয়ামায়া নেই যেন। যদি থাকত তাহলে অসহায় মানুষের আগুনে পোড়ার দৃশ্যগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখত না। আর মোবাইলে ভিডিও করে ফেসবুকেও দিত না। কথায় আছে- রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। আসলে, আমরা সবাই লোক দেখানো কর্ম করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। বড় বড় সেলিব্রেটি এসব বেদনাদায়ক ঘটনা নিয়ে সমবেদনা আর শোক জানায়। আর, মিডিয়া এসব ফলাও করে প্রচার করে। প্রকৃতপক্ষে কি করতে হবে এবং কি প্রয়োজন, এসব নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। শুধু সমবেদনা আর শোক প্রকাশ করাই তাদের ধর্ম-কর্ম। আগুন লাগবে এটা অস্বাভাবিক নয়। আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস আসতে অতিরিক্ত দেরি হওয়া অস্বাভাবিক। আগুন লাগার পর মানুষকে জীবিত রাখতে না পারাটা অস্বাভাবিক। কিন্তু কেন এই অস্বাভাবিক ঘটনাগুলো ঘটবে? একেকটি ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করলেই কি শেষ! বহুতল ভবন থেকে মানুষকে কীভাবে বাঁচাতে হবে সেই প্রক্রিয়াও জানা নেই আমাদের দেশে। মানুষ জানালা দিয়ে হাত নেড়ে বলছে বাঁচাও বাঁচাও। ওরা চিৎকার করে বলছে, ওরা বাঁচতে চায়। কিন্তু আমরা ওদের বাঁচাতে পারছি না। এই বাঁচাতে না পারার কারণ কি? কারণ খুব সহজ। প্রথমত, অপরিকল্পিত নগরায়ন। আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ঢাকা শহরের। যার কারণ হলো ঢাকায় তৈরি হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে সকল দালান। দালানের জঙ্গল গড়ে উঠেছে ঢাকায়। ফায়ার সার্ভিস আসার মতো সুযোগও অনেকে রাখে না। যা চকবাজারে ঘটনাটিতে আমরা দেখেছি। যেসব দালান গড়ে উঠছে সেগুলোতেও কোন ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। যার ফলে এসব দালানে আগুন লাগলে মানুষকে বাঁচানো সহজ হয়ে ওঠে না। তাই দালানের মালিকদের সচেতন হতে হবে অনেক বেশি। দেখতে পেলাম মানুষ বাঁচার জন্য নিচের দিকে দালান থেকে লাফ দিয়েছে। এরা তার পরও মৃত্যুবরণ করেছে। উন্নত দেশের অবস্থা তার বিপরীত। উন্নত দেশে আগুন লাগলেও মানুষ দালান থেকে লাফ দিয়ে নিচে সুরক্ষিত থাকে। আমাদের দেশে আজও সে ব্যবস্থা নেই। আমাদের এসব দিকে আরও অনেক বেশি নজর দিতে হবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও তেমন দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কৌশলে তারা দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেনি। তাই, এই সেক্টরকেও আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তা ছাড়া, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছতে না পারার কারণ কি এটাও তদন্ত করার প্রয়োজন আছে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার উপকরণের অভাব থাকলে সরকারের কাছে অনুরোধ সে সব উপকরণসহ ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ান। অন্তত দেশের মানুষকে বাঁচান। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, বাংলাদেশকে যেন অগ্নিকা-ের হাত থেকে রক্ষা করে। ওমর গনি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে
×