ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ আজ অদম্য গতিতে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে পথ চলছে। আর এই পথ চলায় সমানতালে পা মেলাচ্ছেন আমাদের তরুণরা। তারা অবদান রাখছে বিভিন্নভাবে। দিন দিন আমাদের দেশে নিজ উদ্যোগে অনেক তরুণ গড়ে তুলেছে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। আজ আমরা এমনই একজন উদ্যোক্তার বেড়ে ওঠার গল্প শুনব

অদম্য তূর্যর এগিয়ে চলা

প্রকাশিত: ১২:৩০, ১৯ মার্চ ২০১৯

অদম্য তূর্যর এগিয়ে চলা

ডিপ্রজন্ম : প্রথমেই নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন তূর্র্য : নিজের সম্পর্কে বলার তেমন কিছু নেই। খুবই সাদামাটা জীবন কাটাতে পছন্দ করি। ফরিদপুর জেলার সদর থানায় আমার বেড়ে ওঠা। ছেলেবেলা থেকেই চিন্তা ছিল এমন কিছু করব, যাতে নিজের পাশাপাশি আরও লোকজনের কর্মসংস্থান হয়। ডিপ্রজন্ম : আজকে উদ্যোক্তাদের মাঝে আপনি একটি অনুপ্রেরণার নাম। কীভাবে এই জায়গায় এলেন। উঠে আসার গল্পটি বলুন। তূর্য : আমি খুব চঞ্চল ও দুরন্ত ছিলাম ছোটবেলা থেকে। সবকিছুর প্রতি আমার তীব্র কৌতূহল ছিল। ছাত্রজীবন থেকেই চাকরি করার পক্ষপাতী ছিলাম না। চেষ্টা ছিল নিজে কিছু করার। তার পরও পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছি প্রায় ৪ বছর। চাকরির পাশাপাশি নিজেও চেষ্টা করেছি কিছু করার। তারপর নিজেই প্রচুর চেষ্টা করে কম্পিউটারে আয়ত্ত করি। সফটওয়্যার বানানো শিখি। আস্তে আস্তে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার করে সাফল্যের মুখ দেখতে পাই। চিন্তা করেছি যদি পরিশ্রম করে যাই আর লক্ষ্য ঠিক রাখি তাহলে সফলতা একদিন আসবেই। কঠোর পরিশ্রম করার কারণে সফলতা আসতে বেশি দিন লাগেনি। ডিপ্রজন্ম : এ ধরনের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কারণ ও প্রতিবন্ধকতাগুলো... তূর্য : সফটওয়্যার বা সল্যুশন টুলসকে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে একটি খুচরা প্রোডাক্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেই সকল জায়গায় অটোমেশনের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও বেশি কর্মদক্ষতার সঙ্গে উন্নত করা সম্ভব। প্রায় আট বছর ধরে কাজ করছি সিস্টেম ডিজিটালাইজেশন বা অটোমেশন নিয়ে। চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যদি কোন প্রতিষ্ঠানে ম্যানুয়াল কাজের জায়গাটা সফটওয়্যার বা কোন ইফিশিয়েন্ট টুল দিয়ে রিপ্লেস করা যায় তাহলে কর্মদক্ষতা ৪০ থেকে ৫০ গুণ বেড়ে যায়। বিশ্বের প্রথম সারির প্রায় সব দেশেই ১০০% অটোমেটেড টুলস বা সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আমাদের দেশে কেন যেন আমরা সেই গতানুগতিক ম্যানুয়াল প্রসেসটাকেই বেশি পছন্দ করি। কেন আমাদের অটোমেশনে এতো অনীহা? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি দুটো উত্তর পেয়েছি : ১। আমরা যে সব দেশী বা বিদেশী টুলস ব্যবহার করি তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ২। এসব সিস্টেমের মেইন্টেনেন্সও অনেক খরচের ব্যাপার। সাধারণ ইউজারদের এই সমস্যা দূর করতেই একদিন চাকরি ছেড়ে শুরু করেছিলাম আমার স্বপ্নের টেক্সট্রিম সল্যুশনস। এটি একটি সফটওয়্যার সল্যুশন প্রোভাইডার কোম্পানি। যারা মূলত ফোকাস করে যাচ্ছে সফটওয়্যার বা সল্যুশন টুলসকে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে একটি খুচরা প্রোডাক্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। আমার এই কোম্পানিটি গড়ে তুলতে আমাকে অনেক বাধাবিপত্তি পেরুতে হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল সমস্যা। পারিপার্শি¦ক অবস্থা সব মিলিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতা পেয়েছি। আবার অনেক ক্ষেত্রে কোন সাপোর্ট পাইনি। তার পরেও থেমে থাকিনি। এগিয়ে চলেছি নিজ উদ্যোমে। চেষ্টা চালিয়ে গেছি আর লক্ষ্য সব সময় ঠিক রেখেছি। ডিপ্রজন্ম : উদ্যোক্তা হলেন যেভাবে। তূর্য : উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি আমার আগ্রহটা এত বেশি ছিল যে, আমি এ সম্পর্কে প্রচুর খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলাম। এই ঢাকা শহরে বিভিন্ন অফিস ভিজিট করা শুরু করলাম। আসলে মানুষের মধ্যে কাজের ক্ষুধা থাকতে হয়। সেই ক্ষুধাটা আমার ছিল। নিয়ম মেনে প্রচুর পরিশ্রম করতাম। এরপর ধীরে ধীরে আমার সবকিছু গড়ে তুলি। ডিপ্রজন্ম : উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে প্রতিবন্ধকতা কী? তূর্য : প্রতিবন্ধকতা তো থাকবেই। সবচেয়ে বড় যেটা তা হলো, আমাদের দেশে নতুন কিছু করতে গিয়ে তেমন একটা সাপোর্ট পাওয়া যায় না। আমি ভাগ্যবান যে আমার পরিবার আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট করেছে। পাশাপাশি কাছের বন্ধু ও বড় ভাইদের কাছ থেকেও সাপোর্ট পেয়েছি। আমি পারব সেটা সব সময় দৃঢ়তার সঙ্গে ধরে রেখেছি। ডিপ্রজন্ম : আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট একজন উদ্যোক্তার জন্য কতটা উপযোগী? তূর্য : তেমন একটা সন্তোষজনক না। তবুও আমাদের এর মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। সুযোগ পেলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। তবে আগের তুলনায় এখন সরকারের প্রচেষ্টায় প্রেক্ষাপট অনেকটা ভাল হয়েছে। ডিপ্রজন্ম : উদ্যোক্তা হতে চাইলে যে বিষয়গুলো প্রয়োজনীয়... তূর্য : একজন উদ্যোক্তা এত সহজে হওয়া যায় না। নানা ধরনের জটিলতা তাকে প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হয়। আমি মূলত এ বিষয়গুলো নিয়ে অনেক পরামর্শ নিয়েছি। তৃণমূল উদ্যোক্তাদের নানা কথা শুনেছি। সব সময় নিজ লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গিয়েছি। আর কোথাও সমস্যা পড়লে অবশ্যই চক্ষুলজ্জার চিন্তা না করে যারা এই বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের পরামর্শ নিতে হবে। ডিপ্রজন্ম : তরুণদের প্রতি আপনার বলার কিছু আছে? তূর্য : হ্যাঁ অবশ্যই। তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যত। তরুণরা চাইলেই ভবিষ্যতে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। তাই তাদের বলব অলস সময় না কাটিয়ে দেশের এবং নিজের জন্য চিন্তা করতে। কীভাবে দেশকে ভাল কিছু উপহার দেয়া যায় সেটা মাথায় রাখতে হবে। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে বলব উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করতে। কেননা এর মাধ্যমে নিজের পাশাপাশি আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। ডিপ্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? তূর্য : খুব সুন্দর একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই। যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই ভাতৃত্ব বন্ধনে থাকতে পারব। এবং নেশা ও মাদকমুক্ত একটি পরিবেশ দেখতে চাই। আমাদের এই মাতৃভূমি বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক সেটাই প্রত্যাশা।
×