ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভেনিজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন’

রাশিয়া ও চীনের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 রাশিয়া ও চীনের হুঁশিয়ারি

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে চীন ও রাশিয়াসহ প্রধান মিত্র দেশগুলো। তারা বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়েইদো দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টার সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন চেষ্টা করছে ভেনিজুয়েলার রাজস্ব প্রবাহ কমানোর। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার একদিন পর বোল্টন এ কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্র বৃহস্পতিবার জরুরী নয় দূতাবাসের এমন স্টাফদের ভেনিজুয়েলা ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে, তবে দূতাবাস পুরোপুরি গুটিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। গার্ডিয়ান ও বিবিসি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিফোনে মাদুরোর সঙ্গে কথা বলেন। সে সময় পুতিন রাজনৈতিক সঙ্কটের বিষয়ে মাদুরোর প্রতি তার দৃঢ় সমর্থনের কথা জানান। পুতিন বলেন, সঙ্কটটি বহির্বিশ্বের দেশগুলোর ইন্ধনে সংগঠিত হচ্ছে। পুতিনের উদ্ধৃতি দিয়ে ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাইরের দেশগুলোর ধ্বংসাত্মক হস্তক্ষেপের ফলে গুরুতরভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। যদিও ক্রেমলিনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে রাশিয়ার অপর উর্ধতন কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনকে টার্গেট করে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ গুয়েইদোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনকে আপাতদৃষ্টিতে অভ্যুত্থান মনে হচ্ছে বলে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভ-ামির সমালোচনা করে তিনি প্রশ্ন করেন মার্কিন হাউস স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি যদি নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন তাহলে আমেরিকানরা কি প্রতিক্রিয়া জানাবে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রাইয়াবকোভ বলেন, ভেনিজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ হবে বিপর্যয়মূলক। রাশিয়া জানিয়েছে তারা ভেনিজুয়েলায় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে আলোচনায় মধ্যস্ততা করতে প্রস্তুত রয়েছে। রাইয়াবকোভ বলেন, যদি আপনি আপনার দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে অনাধিকার প্রবেশকারীদের অগ্রাহ্যতা রোধ করতে আমাদের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চান তবে আমরা তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। রাশিয়ান সিনেটর ফ্রানজ কলিসিয়েভিচ বলেন, যদি মাদুরোকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তবে মস্কো সামরিক সহযোগিতা দিতে পারে। অপর এমপিরাও যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির উপপ্রধান আন্দেরি ক্লিমোভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ভেনিজুয়েলায় একটি প্রতিবিপ্লব ঘটাতে অভিযান চালানোর চেষ্টা করছে। চীন জানিয়েছে, তারা ভেনিজুয়েলার সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় দেশটির সরকারের প্রতি সমর্থন অটুট রাখবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আমি এই বিষয়টির ওপর জোর দিতে চাই যে বাইরের হস্তক্ষেপ সাধারণত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে এবং তা প্রকৃত সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়ক হয় না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানও বৃহস্পতিবার টেলিফোনে মাদুরোর প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোগান বলেন, গুয়েইদোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে তিনি মর্মাহত। তিনি বলেন, আপনাকে নির্বাচনের ফলের প্রতি সমর্থন জানাতে হবে। ট্রাম্পে পদক্ষেপে আমি বিস্মিত। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী যেকোন ব্যক্তির জন্য বিষয়টি হতাশাজনক। লাতিন আমেরিকান একমাত্র দেশ উরুগুয়ে মাদুরোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তারা সরকার ও বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। যাতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায়। ইরান মাদুরোর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। তারা বিরোধীদের প্রেসিডেন্সী দাবিকে একটি অভ্যুত্থান ও বৈশ্বিক শক্তিধর দেশগুলোর পদক্ষেপকে পুরোপুরি বেআইনী বলে অভিহিত করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম ঘাসেমি বলেন, ইরান ভেনিজুয়েলার সরকার ও জনগণের প্রতি সমর্থন রয়েছে। তারা ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে বিদেশী শক্তিগুলোর যেকোন হস্তক্ষেপ ও অবৈধ কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। মাদুরোর প্রতি কিউবা তার সমর্থনের কথা জানিয়েছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা গ্রানামায় বলা হয়েছে, গুয়েইদো নিজেকে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট দাবি ট্রাম্পের নির্দেশে একটি অভ্যুত্থান। ব্রিটেন ইউরোপের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ নিয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হানি এক বিবৃতিতে বলেছেন, মাদুরো ভেনিজুয়েলার মানুষের অবর্ণনীয় ক্ষতি করেছেন। দুর্দশা ভোগ করতে থাকা লোকদের মধ্যে দশ শতাংশ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাই ব্রিটেন বিশ্বাস করে হুয়ান গুয়েইদো ভেনিজুয়েলাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক ব্যক্তি। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা যা করেছে তার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। জাতিসংঘ মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগে তা এড়ানোর জন্য ভেনিজুয়েলার আলোচনায় বসা প্রয়োজন। ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামে তিনি বলেন, আমরা আশা করি যে সংলাপ সম্ভব হতে পারে।
×