ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ অনেকদিন ধরেই আসি আসি করছিল শীত। এখন তো মনে হচ্ছে এসেই গেছে। পৌষ অনেক দূরে। তাতে কী? শীত বসে নেই। ঢাকায়ও ঢুকেছে। এখানে যন্ত্রপাতি-কারখানা-চুল্লি। এসবের গরমে শীত গলে যায়। দৌড়ে পালায়। হয়ত তাই এতদিন তেমন সুবিধে করতে পারেনি। বুধ ও বৃহস্পতিবার থেকে অন্য ছবি। রাজধানীবাসী শীতটা টের পাচ্ছেন। দিন যেমন তেমন, রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ঠা-া। গরম কাপড় গায়ে তুলতে যাদের আলসেমি, তারা ইতোমধ্যে সোয়েটারে চাদর খুঁজে বের করেছেন। বিশেষ করে রাতে ও সকালে যারা বাইরে যাতায়াত করেন তারা টের পাচ্ছেন শীতের প্রকোপ। আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে, বুধবার ঢাকার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার একটু বেড়ে হয়েছে ১৯.১ ডিগ্রী। তাতেই এত শীত? ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বৃহস্পতিবার ঢাকার আকাশে মেঘ ছিল। সূর্যের মুখ তেমন দেখা যায়নি। এ কারণেই বেশি ঠা-া অনুভূত হয়েছে। তবে আরও তিন চার দিন কম থাকার পর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। পৌষে দেখা মিলবে প্রকৃত শীতের। এখন তাহলে নকল শীত? এমন প্রশ্নে আবহাওয়া অফিসের জবাব- নকলও বলতে পারেন। ক্রমে আসল চেহারা দেখতে পাবেন। ইতোমধ্যে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে ঠা-ার প্রকোপ স্পষ্ট হয়েছে। উদাহরণ হতে পারে টাঙ্গাইল। বৃহস্পতিবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আরও কমতে কমতে রাজধানীকেও ছুঁয়ে দেবে শীত। তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে আবহাওয়া অফিস। প্রস্তুত আছেন তো? ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ প্রসঙ্গে আসা যাক। না, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়নি। মেয়েদের ভাল ফল করা নিয়ে কথা হচ্ছে না এবার। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন শিক্ষকরা। অধ্যক্ষ ও শ্রেণী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরও আন্দোলন যেন থামতে চায় না। ছোট ছোট মেয়েরা বৃহস্পতিবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ করেছে। কারণটি এখন সবার জানা। হ্যাঁ, অরিত্রী নামের এক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অসদোপায় অবলম্বন করেছিল। আরও সহজ করে বললে, নকলের আশ্রয় নিয়েছিল। অভিযোগটি পরীক্ষা করে দেখা যেত। এইটুকুন মেয়ে। ভুল শুদ্ধ বোঝার বয়স হয়নি। শিক্ষকরা তাকে শুধরে দিতে পারতেন। সেটাই ছিল কাম্য। অথচ এরা এত শিক্ষিত যে, মেয়েটিকে মেরে ফেলাই সমাধান মনে করল! জীবনের আরও কত পরীক্ষা বাকি! তারও আগে কিশোরীটিকে মেরে ফেলা হলো। শিক্ষার্থীর সঙ্গে নির্মম ব্যবহার করা হলো। পিতা মাতাকে ডেকে তারই সামনে অপদস্ত করা হলো। সইতে পারল না মেয়ে। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করল! ভাবা যায়? এমন নিষ্ঠুর আক্রমণ করে একটি বাচ্চা মেয়েকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। একে আর আত্মহত্যা বলা যায়? তাই বিচারের দাবিতে উত্তাল সহপাঠীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হচ্ছে। কিন্তু হায়! মেয়েটি আর ফিরে আসবে না! কে নেবে এই দায়? ভাল রেজাল্ট, নামকরা স্কুল ধুয়ে জল কে খাবে আর? নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। রাজনীতিও জমে উঠেছে। একটার পর একটা ইস্যু। এখন কার মনোনয়নপত্র বাতিল হলো, সেই আলোচনা তুঙ্গে। চলছে আপীল নিষ্পত্তির কাজ। এরটা টিকে যাচ্ছে। ওরটা চূড়ান্তভাবে বাতিল। ক্ষণে ক্ষণে আসছে খবর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরও নানা ঘটনাবলী। ঢাকার মানুষও যোগ দিয়েছেন গাল গল্পে। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে, বিএনপি আওয়ামী লীগকে উড়িয়ে দিচ্ছে। চায়ের স্টলে, পাবলিক বাসে নিজ নিজ দলে প্রচার। বাকযুদ্ধ। এভাবে শীতের দিনে উত্তাপ খোঁজার চেষ্টা। মন্দ নয় কিন্তু!
×