ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি পরিবার, সমাজ ও দেশের উপকারে লাগে

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১ অক্টোবর ২০১৮

  প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি পরিবার, সমাজ ও দেশের উপকারে লাগে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অধিকাংশ প্রবীণ শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় অসহায়ত্ব। নিঃসঙ্গ আঁকড়ে ধরে তাদের। আর অসুস্থ হলে তো তাদের কষ্টের সীমা থাকে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবীণ বয়সে অনেকেই পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন। অনেক সময় অঢেল সম্পদ দিয়েও প্রবীণ ব্যক্তির অসহায়ত্ব ও একাকিত্ব দূর করা যায় না। প্রবীণের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব জনমিতি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও সমাজসহ সব ক্ষেত্রে পড়বে। তাই এ বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে জাতিসংঘের নীতিমালার আলোকে নীতিমালা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে পরিবার ও সমাজে প্রবীণদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। প্রবীণদের তাদের কল্যাণের জন্য পরিচালিত কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশে বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শিশু বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি বলে জানায় বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রবীণ দিবস । বাংলাদেশের প্রথম লোক গণনা রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৭৪ সালে এ দেশের ষাটোর্ধ মানুষের সংখ্যা ছিল ৪০,৫৬,৯৫৮। এ সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে ’৯১ সালের লোক গণনায় ৬০,৪৫,০২৩ জনে পৌঁছায়। প্রবীণদের এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৫.৪২ শতাংশ ছিল। ২০১১ সালের লোক গণনায় প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটিতে, যা মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ আর বর্তমানে এ সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোন দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ হতে ১২ ভাগ প্রবীণ হলে ওই দেশকে বার্ধক্য জনসংখ্যার দেশ ধরা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানায়, প্রবীণ নর-নারীরা হলেন একটি সমাজ তথা দেশের অপরিহার্য অংশ। তাদের বাদ দিয়ে সমাজ চলতে পারে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে প্রবীণরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। ফলে তাদের অনেকে সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে কার্যকর ভূমিকা পালনে সক্ষম হচ্ছেন না। একজন প্রবীণ দৈহিক শ্রম দিয়ে না হোক, তার অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি দিয়ে পরিবার, সমাজ তথা দেশের মানুষের উপকার করতে পারেন। কিন্তু প্রবীণেরা যদি শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ না থাকেন তাহলে তাদের কাছ থেকে সঠিক দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ থেকে দেশ ও জাতি বঞ্চিত হবে। তাই প্রবীণ জনগোষ্ঠীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা সমাজের সবার একান্ত কর্তব্য। বয়স্কদের রোগ ও শারীরিক অবস্থা বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, চুল পেকে যাওয়া, ত্বকে বলিরেখা, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়া, শ্রবনশক্তি কমে যাওয়া, সঙ্গে পেশী দুর্বল, হাড়ের ক্ষয়, যকৃৎ ও বৃক্কের কার্যক্ষমতা কমতে থাকা-বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রকম নানা সমস্যা দেখা দেয়। শারীরিক পরিবর্তনের কারণে কিছু কিছু রোগ প্রকৃতিগতভাবে বয়স্কদেরই হয়ে থাকে। যেমন, তাদের রক্তনালি সরু হয়ে যায়। ফলে তাদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ প্রভৃতি হতে পারে। প্রবীণদের মস্তিষ্ক ছোট হয়ে আসে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘ব্রেন এট্রফি’। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কেউ কেউ আলঝেইমার বা ডিমেনসিয়ায় আক্রান্ত হন। এসব রোগে স্মৃতিশক্তি কমে যায়, আবেগ, অনুভূতি, বিচারবুদ্ধি, বিবেচনাশক্তি, চিন্তাক্ষমতা, কাজ করার ক্ষমতা ইত্যাদিতে পরিবর্তন আসে। আচার-আচরণে কেউ কেউ শিশুতে পরিণত হন। এ ছাড়া মাথাঘোরা, হাত-পা কাঁপা যাকে বলে ‘পার্কিনসন্স ডিজিজ’ ইত্যাদি ধরনের মস্তিষ্কের রোগও প্রবীণদের মাঝে দেখা যায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয়ে যায়, যাকে বলা হয় অস্টিওপরোসিস। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা বোধ করেন প্রবীণেরা। মাঝেমধ্যে সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যায় তাদের। চোখে ছানি পড়াটাও বয়স্কদের রোগ। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে প্রস্রাবের জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেক বয়স্ক ব্যক্তির শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে তাদের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে প্রবীণদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭-’৯৮ অর্থবছর থেকে বয়স্ক ভাতা প্রচলন হওয়ার পর থেকে দেশের বহু প্রবীণ নর-নারী কিছুটা আর্থিক নিরাপত্তা বোধ করছেন। দেশের সব ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের ১০ প্রবীণ ব্যক্তি এ ভাতা পেয়ে থাকেন। আওয়ামী লীগ সরকার দরিদ্র, অসহায় প্রবীণ নর-নারীদের আবাসন, ভরণপোষণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কিছু সংখ্যক শান্তিনিবাস চালু করেছে। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ভাতা কার্যক্রম ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত জাতীয় প্রবীণ কমিটি জাতিসংঘের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের প্রবীণদের কল্যাণের জন্য নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদে ‘বাবা-মার ভরণপোষণ আইন, ’১১ নামের একটি বেসরকারী বিল উত্থাপন করা হয়েছে। এই বিলে প্রত্যেক কর্মক্ষম সন্তানকে বাবা-মার ভরণপোষণের নিশ্চয়তা দিতে হবে বলে বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
×