ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বস্তিবাসীর জন্য

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৬ আগস্ট ২০১৮

 বস্তিবাসীর জন্য

রাজধানীকেন্দ্রিক সীমিত আয়ের মানুষের দুঃখ-কষ্টের সীমা নেই। তাদের স্থায়ী কোন ঠিকানাও নেই। যারা সামান্য সচ্ছল তারা স্বল্পমূল্যের ভাড়া বাসায় থাকে। যাদের ওই সামর্থ্যটুকুও নেই তারা রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে বসবাস করে। আজ এখানে কাল ওখানে; অনেকটা যাযাবরের মতোই তাদের জীবনযাপন। অনেকের মনে হয়ত স্বপ্ন জাগে এক টুকরা জমি কিংবা একটি ছোট ফ্ল্যাট কেনার। স্বপ্ন আছে কিন্তু সাধ্য নেই। বাস্তবতা থেকে তাদের স্বপ্ন ধরাছোঁয়ার অনেক বাইরে। দুই কোটি জনসংখ্যার এই মহানগরীর প্রায় চল্লিশ লাখ লোক এই শ্রেণীভুক্ত। বর্তমানে ঢাকা শহরে বস্তির সংখ্যা প্রায় চার হাজার সাত শ’ কুড়িটি। এটি সরকারী হিসাব হলেও বেসরকারী হিসাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন কারণে সর্বস্ব হারিয়ে প্রতিদিনই ঢাকামুখী হচ্ছে নিঃস্ব মানুষ। বাধ্য হয়েই ফুটপাথ আর ঝুপড়ি বস্তিতেই তাদের বসবাস করতে হয়। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙ্গে দেয়া হয় তাদের সবকিছু। আবার অগ্নিকান্ডে বস্তি ভস্মীভূত হওয়ার ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের এসব মানুষের জন্য সুখবর দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, রাজধানীর বস্তিগুলো বহুতল ভবনে প্রতিস্থাপিত হবে। বস্তিবাসীরা এখন ঢাকা শহরে যে ভাড়া দিয়ে একটি কামরায় থাকে, সে ভাড়া দিয়ে কুড়িতলা ভবনের ফ্ল্যাটে থাকবেন। যাতে করে তারা উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারা দিনে, সপ্তাহে এবং মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে বসবাস করবেন। সীমিত আয়ের নগরবাসীর কাছে এ সংবাদটি আশার আলো দেখিয়েছে। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা ভাবা হলেও আলাদাভাবে এই মানুষগুলোর মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের বিষয়টি ভাবা হয়নি অতীতে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর সে সময় তিনি বস্তিবাসীদের নিজ গ্রামে পুনর্বাসনে ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচী চালু করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেন, প্রতিদিন নানা প্রয়োজনে দরিদ্র মানুষকে রাজধানীতে আসতে হয়। আবার দৈনন্দিন কাজেও এই শ্রমিক শ্রেণীর প্রয়োজন পড়ে নগরবাসীর। তারা যেন একটু শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সে জন্যই তাদের বসবাসের জন্য একটু ভাল পরিবেশ দরকার। রাজধানীতে প্রতিবছর তিন থেকে চার লাখ নতুন মানুষ যোগ হয় বলে বিশ্বব্যাংকের জরিপে বলা হয়েছে। তারা রিক্সা ও ভ্যান চালিয়ে বা দিন মজুরি করে অর্থ উপার্জনের আশায় আসে। বাসাবাড়ি বা উন্নত স্থাপনায় থাকার সাধ্য না থাকায় অধিকাংশই এসে ওঠেন নগরীর বিভিন্ন বস্তিতে। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে চোখ রাখলেই দেখা যায় পলিথিনের ঝুপড়ি। এগুলো মূলত শহরের আশ্রয়হীন মানুষের ডেরা। প্রতিবছর বাজেটে বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য বিশেষ বরাদ্দ করা হলেও বাস্তবে এর সুফল ওই আশ্রয়হীন মানুষগুলো পায় না। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হচ্ছে। কাজেই বস্তিবাসীও যেন সেই ছোঁয়াটা পায়, সরকারকেই তার পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্ছনীয়। ঢাকা শহর বস্তিমুক্ত হোক, তা সবার কাম্য। মানুষ কেন এই মানবেতর জীবনযাপন করবে, সেটা সকলকেই ভাবায়। শহর যত উন্নত হবে ততই তার কাজের জন্য কর্মী প্রয়োজন। কাজেই তাদের জীবনমান উন্নত করার জন্য সুদৃষ্টি প্রদান সরকারের কর্তব্য। বিশাল সংখ্যক আশ্রয়হীন মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা দরকার। বিশেষ করে বাসস্থানের বিষয়টি। শেখ হাসিনার সরকার সে পথেই এগুচ্ছে। শুধু রাজধানী নয়, ক্রমান্বয়ে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়েও প্রকল্প গ্রহণ করার আশ্বাস মিলেছে। ভবিষ্যতে যে উন্নয়ন হবে তার ছোঁয়া উচ্চবিত্তের পাশাপাশি খেটে খাওয়া নিম্নবিত্তরাও যাতে পায় তা নিশ্চিত করা সঙ্গত। কারণ এই নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নই ছিল জাতির পিতার আরাধ্য। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা অনুযায়ী প্রকৃত বস্তিবাসী যেন ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সময়োপযোগী এই সিদ্ধান্ত কল্যাণকর রাষ্ট্রের জন্য যথাযথ বলে প্রতীয়মান হয়।
×