ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রিমিয়ার ব্যাংকের বাড্ডা শাখার ২৩ লাখ টাকা লুট নিয়ে রহস্য

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২৫ আগস্ট ২০১৮

 প্রিমিয়ার ব্যাংকের বাড্ডা শাখার ২৩ লাখ টাকা লুট নিয়ে রহস্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের দু’দিন আগে সোমবার দুপুরে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডের প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুটের ঘটনা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র একজন অস্ত্রধারী কিভাবে ব্যাংকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিম্মি করে টাকা নিয়ে গেল। তা নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি, অস্ত্রধারী যাওয়ার সময় ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রাখার ডিভিআর যন্ত্রটিও নিয়ে গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এককভাবে এমন একটি ঘটনা ঘটানো কঠিন। ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা জড়িত আছে কি না। তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এদিকে লুটের ঘটনার একদিন পর ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার রাতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের জেনারেল সার্ভিস ডিভিশনের সিনিয়র অফিসার রাহাত আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করে বাড্ডা থানায় মামলা (নম্বর-১৮) দায়ের করেন। এ বিষয়ে বাদী রাহাত আলম ঘটনা সম্পর্ক কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা ভাল বলতে পারবেন। আমি অফিসের নির্দেশনা অনুসারে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেছি। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হানিফ বলেন, ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা নিরাপত্তারক্ষীকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান জানান, মাত্র একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সবাইকে জিম্মি করে কিভাবে টাকা নিয়ে গেল তা একটু সন্দেহজনক। ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজও পাওয়া যায়নি। ঘটনার সময় বাইরের কোনও গ্রাহকও ছিল না। এসব ঘটনা মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার সময় ব্যাংকের ভেতরে ছয়জন কর্মকর্তা ও একজন নিরাপত্তারক্ষী উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় মাত্র একজন ব্যক্তি একটি অস্ত্র নিয়ে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। পরে ব্যাংকের ২৩ লাখ টাকা ক্যাশ লুট করে পালিয়ে যায়। তবে ব্যাংক লুটে আগে ও পরে অস্ত্রধারী কোন প্রতিরোধের সম্মুখীন হননি। তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় ব্যাংকের কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না। তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়। প্রিমিয়াম ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ঘটনার দিন সোমবার বিকেল ৪টার দিকে একজন অস্ত্রধারী লোক ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে। এরপর সে সোজা কাঁচে ঘেরা ব্যাংক ম্যানেজারের কক্ষে যায়। সেখানে ম্যানেজারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভল্ট রুমে ঢুকতে বলে। সবাই ভল্ট রুমে ঢোকার পর অস্ত্রধারী ওই সন্ত্রাসী ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় সে ব্যাংকের ভেতর থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিআর খুলে সঙ্গে নিয়ে যায়। অস্ত্রের মুখে কেউই কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, একজন অস্ত্রধারী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ায় কিছুটা সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। ব্যাংকের ভেতর থেকে ফিল্মি স্টাইলে এভাবে ২৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়াটা বিস্ময়কর। এটা দীর্ঘ পরিকল্পনার প্রসূত। কারণ ব্যাংকের ভেতরে সব সময় অস্ত্রধারী নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী থাকে। এছাড়া বিকেল ৪টার দিকে সাধারণত লেনদেন শেষ হওয়ার আগেই মূল দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপরও বাইরে থেকে কিভাবে অস্ত্রধারী ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশ করল। তা নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এছাড়া টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় অস্ত্রধারী ওই ব্যক্তি সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রাখা ভিডিআর নিয়ে গেছে বলে বলা হচ্ছে। এটা নিয়ে যাওয়ার জন্যও সময় প্রয়োজন। একজন ব্যক্তির এত ঝুঁকি নিয়ে লুট করার ঘটনা সাধারণত দেখা যায় না। তবে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে গোপন তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী বা সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের কেউ সরাসরি এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। তাছাড়া দিন-দুপুরে একা একজনের পক্ষে ব্যাংকে এমন লুটপাট ঘটানো সহজ নয়। তদন্ত কর্মকর্তারা আরও জানান, ব্যাংকের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যায়নি। তবে ব্যাংক ভবনের আশপাশের অন্যান্য ভবন ও সড়কের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সময় ব্যাংকে উপস্থিত থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে অস্ত্রধারীর শারীরিক বর্ণনাও নেয়া হয়েছে। এসব পর্যালোচনা করে অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ব্যাংকের স্টাফদের আলাদা আলদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাড্ডা লিংক রোডের গ/৮২ ও ৯০/১ ভবনের নিচতলায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখা। ব্যাংক ভবনের দুই পাশে রয়েছে কয়েকটি ভবন। তবে স্থানীয়রা ঘটনার দিন ওই ব্যাংকে ডাকাতির বিষয়টি টের পায়নি। তবে লোকমুখে শুনেছে, এই ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে। ঘটনার দিন ব্যাংক ভবনে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন নিরাপত্তারক্ষী আলী। ব্যাংক ভবনটির আশপাশের কয়েক বাসিন্দা জানান, আমরা শুনেছি যে এই ব্যাংকে একটি লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনকিছু দেখিনি বা কারও চিৎকার-চেঁচামেচিও শুনতে পাইনি। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে থানায় মামলা করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। ওসি জানান, একজন লোক ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সাতজনকে জিম্মি করে ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেল। ঘটনাটি কেমন কেমন মনে হচ্ছে। তবে সবদিক বিবেচনা করেই তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার পরপরই বাড্ডা লিংক রোডের প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখায় এ দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ব্যাংক চলাকালীন সময় এক ডাকাত ম্যানেজারেরে কক্ষে প্রবেশ করে। পরে তাকে পিস্তল ঠেকিয়ে স্টাফদের ভোল্ট রুমে ঢুকিয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
×