ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কার্গো ব্যবস্থাপনায় সাফল্য

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৪ আগস্ট ২০১৮

 কার্গো ব্যবস্থাপনায় সাফল্য

যাত্রী হয়রানি, লাগেজ পরিবহন, সোনা ও মাদক চোরাচালানে কিছু দুর্নাম থাকলেও কার্গো ব্যবস্থাপনায় শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যুক্তরাজ্যের বিএফটি ও সিভিল এ্যাভিয়েশন যৌথভাবে তিন দফা পর্যবেক্ষণ করে এহেন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো হাউসের অটোমেশন সিস্টেমে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে বলে স্বীকৃতি দিয়েছে বিএফটি। যুক্তরাজ্য আশা করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কার্গো ব্যবস্থাপনা আরও নির্ভরযোগ্য হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম বয়ে আসবে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নিরাপত্তার অজুহাতে কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যার মধ্যে এ যাবত বাংলাদেশ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় স্বল্প সময়ে অর্জন করে ক্যাটাগরি-১, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও সর্বোচ্চ মানদন্ড প্রতিফলিত করে থাকে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের মার্চে নিরাপত্তার অজুহাতে ব্রিটেনের তৎকালীন ক্যামেরন সরকার ঢাকা-লন্ডন সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছিল। পরে অস্ট্রেলিয়াও যুক্ত হয় তালিকায়। এতে সমূহ বিপদের মুখোমুখি হতে হয় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের। ইতোমধ্যে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বসানো হয়েছে ইডিডির মাধ্যমে কার্গো স্ক্যানিংসহ এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম বা ইডিএস মেশিন ও আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, এই যন্ত্রের মাধ্যমে সহজেই বোমা, বিস্ফোরক ও অস্ত্রশস্ত্র শনাক্ত করা সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও নির্ভরযোগ্য মেশিন বসানো হয়েছে শাহজালালে। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ঘাটতির অজুহাতে কার্গো ফ্লাইটের পাশাপাশি তখন এমনকি ঢাকা-লন্ডন যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচলেও আরোপিত হয়েছিল সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। সে সময় যুক্তরাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল যে, ঢাকা বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ পরীক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানসম্মত নয়। ফলে তখন সমূহ বিপাকে পড়তে হয় বাংলাদেশের যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে, যাদের গন্তব্য ছিল লন্ডন। পরে ঢাকার আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে তদন্ত দল প্রেরণ করে। এ নিয়ে দু’দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনাও হয়। পরে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দুটো ব্রিটিশ কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয় শাহজালালে যাত্রীদের লাগেজ পরীক্ষা, তল্লাশি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রায় শত কোটি টাকার বিনিময়ে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ভাল ও হৃদ্যপূর্ণ, ঐতিহাসিকও বটে। সেক্ষেত্রে নিছক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন অন্তরায় হতে পারে না। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতি বরং বিশ্বব্যাপী একটি বহুল আলোচিত বিষয়। সম্প্রতি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ত্রুটি পাওয়া গেছে বলে খবর এসেছে গণমাধ্যমে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলা শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং সারাবিশ্বের জন্যই একটি অব্যাহত হুমকি। লন্ডন, নিউইয়র্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়ামে বরং জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার প্রকোপ বেশি। ব্রিটেনে ৭/১১-এর মতো ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে ভুল বোঝার কোন অবকাশ নেই। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষ করে আইএস এই হুমকি ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ সরকার বরং বরাবরই দেশে আইএসের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে এবং স্থানীয় যে সব সন্ত্রাসী ও জঙ্গীগোষ্ঠী জেএমবি, নব্য জেএমবি নামে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, সে সব মোকাবেলা ও নির্মূল করেছে দক্ষতার সঙ্গে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের এহেন তৎপরতা হয়েছে প্রশংসিত। বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে কোন জঙ্গী হামলার উদাহরণ নেই। সে অবস্থায় নিছক নিরাপত্তার অজুহাতে কার্গো ফ্লাইট চলাচলের সাময়িক নিষেধাজ্ঞাটি প্রত্যাহার করাই ছিল যুক্তিসঙ্গত ও সময়োচিত পদক্ষেপ। ব্রিটেনকে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে হলে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে হবে এবং বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অবশ্যই পছন্দনীয় হতে পারে। সে দেশে বাংলাদেশীরা দীর্ঘদিন থেকে সততা ও সুনামের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছে। উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সে দেশে বাংলাদেশের সব রকম পণ্যকে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। শাহজালালের এই সাফল্য তাতে সংযুক্ত করবে বাড়তি মাত্রা।
×