ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রতনপুর স্টিলের দরবৃদ্ধি শেয়ার বিক্রির ফাঁদ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২৬ জুন ২০১৮

রতনপুর স্টিলের দরবৃদ্ধি শেয়ার বিক্রির ফাঁদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দর বাড়ার শীর্ষে উঠে এসেছে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড। শেয়ারটির দর বেড়েছে ৫ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯.৮৯ শতাংশ। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কোম্পানিটির বিক্রেতাশূন্য অবস্থায় লেনদেন হয়েছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটির দরবৃদ্ধির পেছনে বহুল আলোচিত ব্রোকারেজ হাউজ বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার কেনার ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কোম্পানির অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির পেছনে হাউসটির বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদন্ত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। তদন্ত চলা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিডি অটোকারের দরও বেড়েছে সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি। সেক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির গঠনের কোন কার্যকারিতা দেখা যায়নি দুই দিনে। বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রির জন্য দরবৃদ্ধির ফাঁদ পাতা হয়েছে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সোমবার শেয়ারটি সর্বশেষ ৬১ টাকা ১০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। এ দিন কোম্পানিটি ৫২৪ বারে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮২৬টি শেয়ার লেনদেন করে। যার বাজার মূল্য ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। রবিবার ডিএসইতেও দরবৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় অবস্থান করেছে কোম্পানিটি। এই দিনে কোম্পানিটির ৫৫.৬০ টাকা দরে ১৬ লাখ ৬১ হাজার ১৩৯টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। কোম্পানিটির তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১.৯০ টাকা। যা আগে একই সময়ে ছিল ২.৪৮ টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহও আগের তুলনায় কমেছে। শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে দশমিক ১৮ টাকা। যা আগে ছিল দশমিক ৭৬ টাকা। অর্থাৎ নগদ প্রবাহের হারও কমেছে। ডিএসইর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, আরএসআরএমের উদ্যোক্তা পরিচালক মোকসেদুর রহমান গত মার্চ মাসে মেয়ের নামে ৫ লাখ শেয়ার উপহার দেন। আরেক উদ্যোক্তা পরিচালক শামসুর নাহার রহমান মেয়েকে ১০ লাখ শেয়ার উপহার দেন। একইভাবে একই পরিচালক দুই বারে ১০ লাখ করে মোট ২০ লাখ শেয়ার মেয়ের নামে হস্তান্তর করেন। যেটি বিক্রি করতে কোন ঘোষণার দরকার পড়বে না। তবে এই শেয়ার হস্তান্তরের সময় শেয়ার দর ছিল ৭০ টাকার ওপরে। সমসাময়িক সময়ে প্রায় ৩০ লাখ শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার বিক্রি করতেই বাজারে প্রভাবশালী একটি পক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যার কারণে গত দুই দিনে কোম্পানিটির অস্বাভাবিক ক্রয়াদেশ দেখা গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। বিশেষ করে সোমবারের কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের মাত্র আধা মিনিটের মধ্যে বিক্রেতাশূন্য পড়ে। দিনশেষেও যা অব্যাহত ছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, গত কিছুদিন ধরে বাজারে এমন একটি ধারা প্রচলিত রয়েছে যে, কোন কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ার বা বোনাস শেয়ার বিক্রির জন্য বড় কোন পার্টিকে বাজারের বাইরে টাকা দিয়ে শেয়ারের দাম উঠানো হয়। পরে বড় সেই শেয়ার উচ্চ দরে বিক্রি করা হয়। অব্যাহত দর বাড়তে দেখলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে থাকলেও এক পর্যায়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আরএসআরএম স্টিলের শেয়ার দর বৃদ্ধির পেছনে বাজারের প্রভাবশালী একটি পক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যার কারণে কোন কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে দর বাড়ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এই ফাঁদ থেকে সর্তক থাকতে হবে।
×