ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিএনপির ভারতবিরোধিতা ও ভারতপ্রীতি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৪ জুন ২০১৮

সিডনির মেলব্যাগ ॥ বিএনপির ভারতবিরোধিতা ও ভারতপ্রীতি

প্রয়োজনে ভারতপ্রীতি আর সবসময় ভারতবিরোধিতা এটাই বিএনপির নীতি। সেটাই প্রমাণ করল তারা। খুব বেশিদিনের কথা না, প্রণব বাবুর সঙ্গে দেখা করেননি বেগম জিয়া। তখনও তাঁর বিশ্বাস ছিল এ জাতীয় কাজে বিএনপি আরও বেশি পপুলার এবং শক্তিশালী হবে। দেশের মানুষের যে অংশ নানা কারণে পিছিয়ে যাদের লেখাপড়া কম বা মনোজাগতিক কারণে যারা ভারতবিরোধী তাদের সঙ্গে নিয়ে চলার ব্যাপারে বিএনপির আগ্রহ সবসময় বেশি। একসময় এটা কাজ করত। ভোটের বাক্সে ধানের শীষে ভোট দেয়া মানুষেরা ভাবতেন দেশ একদিন ভারত হয়ে গেলেও হয়ে যেতে পারে। সে ধারণা থেকে অনেকদূরে সরে এসেছে বাংলাদেশ। এমন না তাদের অন্তরে অকারণে ভারতপ্রেম জাগ্রত হয়েছে বা তারা ভারত ভারত করে মুখে ফেনা তুলছে। আসলে বাস্তবতাই তাদের সত্য ও আসল বিষয়ে আগ্রহী করে তুলেছে। মানুষ বিশেষত মধ্যবিত্ত ও কম আয়ের মানুষ অসুখ হলে কথায় কথায় সিঙ্গাপুর বা ব্যাংকক দৌড়াতে পারে না। তাদের সে টাকা বা সামর্থ্য নেই। অথচ দেশে তারা অনিরাপদ। সবাই জানেন বাংলাদেশে কোনকালে মেধার অভাব ছিল না। মেধা সম্পন্ন মানুষে ভর্তি আমাদের সমাজ। কিন্তু সিস্টেম বা ব্যবস্থা এখানে অচল। ঢাকা চট্টগ্রাম সিলেট খুলনা বা বড় বড় শহরে হাসপাতালের নামে যেসব সেন্টার বা নার্সিং হোমের নামে যেসব দোকান সেগুলো মূলত পাঁচতারকা হোটেল। থাকা খাওয়ার সুবন্দোবস্ত থাকলেও চিকিৎসা নেই। চিকিৎসাহীন মানুষ নিজেদের জীবন বাঁচাতে চলে যায় চেন্নাই ব্যাঙ্গালুরু কিংবা আর কোথাও। ঘরে ঘরে দেবতাতুল্য ভারতীয় ডাক্তাররা কি ব্যবসা করেন না? তাঁরাও করেন। বাংলাদেশ তাদের নিরাপদ বাণিজ্যকেন্দ্র। কিন্তু তাঁরা এটাও জানেন যদি চিকিৎসা আর সেবা না হয় দিতে পারা না যায় রোগী আসবে না। এই বাণিজ্যিক সফলতা ভারতকে আমাদের জনমনে প্রিয় করে তুলেছে। সঙ্গে আছে শপিং। অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবার ঈদের আগে কলকাতা থেকে লিখেছিলেন যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই গিজগিজ করছে বাংলাদেশীরা। লিখেছেন কোন তারকাখচিত হোটেলেও জায়গা মিলছে না। তিনি একজন লেখক। স্বভাবতই তিনি এর জবাব জানতে চেয়েছিলেন। স্বদেশীরা তাঁকে জানিয়েছে সেখানকার বিক্রেতাদের ব্যবহার দাম আর পণ্যের মান ও বহুমাত্রিকতার কারণেই তারা ঢাকার বদলে কলকাতাকে বেছে নিয়েছে। বিএনপির লোকেরা কি এ স্রোতে নেই? হাজার হাজার বিএনপির মানুষ ও যায় চিকিৎসা নিতে। যায় বাজার করতে। এই আসা যাওয়ার ফাঁকে তাদেরও জানা হয়ে গেছে রাজনৈতিক বিরোধিতা মূলত রাজনীতির বিরোধিতা। ভোটের কারসাজি। এর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গৌণ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কৃতজ্ঞতার সম্পর্কের কথা প্রায়ই বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মিত্র ও আত্মদানকারী দেশ। এ সম্পর্ক ঐতিহাসিক। ফের এটাও জানি ভারত বড়দেশ বলে অনেকসময় আমাদের ওপর তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। আমাদের সীমান্তে মানুষ মারা ফেলানী হত্যা কিংবা গরু নিয়ে বাড়াবাড়ির ঘটনা আছে। আছে পানি সমস্যা। ফারাক্কা থেকে তিস্তা অবদি জটিল এই সম্পর্ক এখন মীমাংসা ছাড়া আর কিছু ডিমান্ড করে না। কিন্তু ভাসানী থেকে জিয়া, জিয়া থেকে বেগম জিয়া কেবলই বিরোধিতা আর কথার রাজনীতি। কাজ তো করে দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। দুনিয়ার কোন দেশে এমন বাধাহীন ও সহজ ছিটমহল বিনিময় হয়েছে? কোনদেশের সঙ্গে নদী সমুদ্র সীমান্তের মীমাংসা হয়েছে এভাবে? আন্তর্জাতিক নৌ-আদালতেও গিয়েছি আমরা। ফলে একথা বলা যাবে না ভারতকে যা খুশি তা করতে দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে। তারপরও সমস্যা আছে। সেটা সমাধান করার জন্য চাই শক্তিশালী সরকারের সদিচ্ছা। বিএনপির কি তা আছে? থাকলে তারা সরকারে থাকার সময় কেন এগুলোর সমাধান করেনি? বা তাদের আসলে এজেন্ডা কি? খেয়াল করবেন অকারণ বিরোধিতা আর জনমনে উত্তেজনা ছড়ানোই তাদের কাজ। কিছুদিন আগেও তারা এই সরকারকে হটানোর নামে মারদাঙ্গা আর আগুনের রাজনীতি বেছে নিয়েছিল। তখন তাদের তুরুপের তাস ভারত বিরোধিতা। তারা প্রমাণ করতে চেয়েছিল ভারতই এই সরকারের মদদদাতা। আর তারাই টিকিয়ে রেখেছে। তাই খালেদা জিয়া ভারতের শীর্ষ নেতার সঙ্গে দেখা না করার আপোসকামী নেত্রী হতে চেয়েছিলেন। আর আজ? প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে ভারতের বিজেপি সরকারের হাতে পায়ে ধরে কোনরকমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাচ্ছেন। ভারত কি করবে বা কি তাদের নীতি হবে সেটা তাঁরাই ভাল জানেন। তবে একথা বলতে পারি কাজটা সহজ না। মোদি সরকার এতটা বোকা না যে বিএনপি বললেই তারা তাদের ভূমিকা থেকে সরে আসবে। বিএনপির মুশকিল এটাই তারা সময়ের কাজ সময়ে করতে পারে না। পাকপ্রীতি আর পাকিস্তানমুখী রাজনীতি যে এখন আর কাজ করে না এটা বুঝতেও অনেক সময় লেগেছে তাদের। আসলে বুঝেওনি। ফাঁদে পড়ে সময় ও সুযোগের ব্যবহার করতে চাইছে। আপাতত পাকিস্তানও তাদের আইএস বিপাকে আছে। কিন্তু সময় সুযোগ মিললেই তারা তাদের আসল চেহারায় বেরিবে আসবে। সে সুযোগ বিএনপিকে ভারত দেবে না। দেশের মানুষের ওপর বিশ্বাস আর আস্থার অভাবে বিএনপি যা করছে তার আরেক নাম দালালি। আর এরাই কিনা আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীলদের ভারতের দালাল বলে গাল দেয়। ভারতকে বশে আনার চাইতে জরুরী দেশের মানুষের মনোভাব বোঝা তাদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করা। জনবিচ্ছিন্ন রাজনীতি সেটাও বুঝতে পারছে না। বিএনপি বাংলাদেশের একটি বড় দল। তাদের সমর্থনও প্রচুর। কিন্তু মূলত আদর্শহীন আর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বলেই আজ এই হাল। খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতার যে উগ্রতা ভারতের সঙ্গে গুলিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান বা প্রগতিশীল মুসলমানদের সঙ্গে যে অন্যায় তার উত্তর কোথায়? আজ দুশমন কার স্বার্থের জন্য দোস্ত এসব নীতি এখন অচল। দুনিয়া পাল্টে গেছে। বদলে গেছে সময়। এখন মানুষকে প্রলোভন বা মিথ্যা বলে পার পাওয়া যায় না। মিডিয়া তাদের হাতের মুঠোয়। তারা সব দেখতে পায় সব জানে। আপনারা মুখে ভারতের বিরোধিতা করেন আর পেটব্যথা হলেই কলকাতা বা চেন্নাই চলে যান। মানুষ দেখছে আর জানছে কাকে বলে ভ-ামি। ভোট নেবেন ভারতবিরোধী হয়ে আর ভারতকে বলবেন সে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঠিক করে দিতে এই মামা বাড়ির আবদার এখন আর চলে না বিএনপি। জনগণের রাজনীতিতে কারও সঙ্গে দাসত্বের দরকার পড়ে না। জনগণ সঙ্গে থাকলে বঙ্গবন্ধুর মতো সদ্য স্বাধীন দেশের নেতাও হতে পারেন ইন্দিরা গান্ধীর বন্ধু। পেতে পারেন বড় দেশের শ্রদ্ধা ও সম্মান। ইতিহাস তাই বলে। জাতীয়তাবাদীরা এসব বুঝলেও মানে না কারণ তাদের রাজনীতির মূলকথাই হলো হিপোক্রেসি। কিন্তু আর কতদিন? [email protected]
×