ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁপাইয়ে আম সংগ্রহ শুরু

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৭ মে ২০১৮

নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁপাইয়ে আম সংগ্রহ শুরু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কেউ যাতে কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকাতে না পারে, সেজন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগে আম সংগ্রহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন। শুক্রবার থেকে উঠে গেছে সেসব বিধি-নিষেধ। তাই দিনের শুরু থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমবাগানগুলোতে শুরু হয়েছে আম সংগ্রহের কাজ। জানা যায়, গোপালভোগসহ গুটি আম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে আম সংগ্রহের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। তাই ভোর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। চাষীরা জানান, অপরিপক্ব আম পেড়ে কেউ যাতে কেমিক্যাল দিয়ে তা পাকাতে না পারে সেজন্য সবার মতামতের ভিত্তিতে ২৫ মে থেকে গোপালভোগ, ২৮ মে হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত; ১ জুন লক্ষণভোগ বা লখনা; ৫ জুন ল্যাংড়া ও বোম্বাই ক্ষিরসা; ১৫ জুন ফজলি, সুরমা ফজলি ও আম্রপালি এবং ১ জুলাই থেকে আশ্বিনা আম পাড়ার নির্দেশনা জারি করে প্রশাসন। তারা আরও জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় কৃত্রিমভাবে রং বদলে দিয়ে অপুষ্ট আমকে পাকা বলে বিক্রি করেন বাজারে। এ কারণেই প্রশাসন ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে ২৫ মে’র আগে বাগানের আম পাড়া বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করে। এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এরশাদ হোসেন খান বলেন, ‘এ সময়ের আগে কেউ আম পেড়ে বাজারজাত করলে মনিটরিং কমিটি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এ মৌসুমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, পিজিআর, ফরমালিন, ইথোফেনের মাধ্যমে আম পাকানো বন্ধে হাট-বাজারসহ জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশে উদ্বুদ্ধকরণসভা, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান সক্রিয় থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভোক্তাদের কাছে বিষমুক্ত আম পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবেন বলেও আশাবাদ করেছেন জেলা প্রশাসক।’ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা জানান, জেলার আমচাষীদের সুবিধার্থে আম সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রশাসন। এর ফলে আম বিক্রি নিয়ে চাষীদের আর ভাবতে হবে না। আম বাজারজাতকরণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে আমচাষী, গবেষক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে। তাই এতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি আরও জানান, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আম যাতে বাজারে ওঠে সেজন্য প্রশাসনের পাশাপাশি কৃষি বিভাগেরও মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। এদিকে আম সংগ্রহের প্রথম দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরঘাট আমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে তেমন কোন আম আমদানি হয়নি। কারণ হিসেবে আমচাষী ও আড়তদাররা বলছেন, এবার দেরিতে মুকুল আসায় আম পোক্ত হতে ও পাকতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে এবার বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় আবহাওয়া আমের জন্য অনুকূলে ছিল। এতে আমের আকার ও ওজন বেশ ভালো হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই এবার প্রশাসনের ঠিক করে দেয়া সময়ের পরেই আম বাজারজাত হবে এবং আমের বাজার জমে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চুটু ও কানসাট আম আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক জানান, আগামী এক সপ্তাহ পরেই জমে উঠবে আমের বাজার। এই কয়দিন আমের বাজারগুলোতে আম আমদানি কিছুটা কম হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স, কানসাট আম আড়তদার সমিতি, ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশনসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের দাবি, এই জেলায় আমের মৌসুমে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয়ে থাকে। তাই আমের মৌসুমে জেলায় শনিবারের ছুটির দিনও তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলো খোলা রাখার দাবি জানান তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। তবে মৌসুমের শুরুতে কয়েকদফা ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হলেও, এবার বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় আমের আকার ও ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আর আম বিক্রি করে এবার লাভের আশাও করছেন কৃষকরা।
×