ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান ॥ এগোতে হলে পিছনে ফিরে দেখা প্রয়োজন। পিছনটা দুর্বল হলে সামনে এগোনো সুখকর হওয়ার আশা কম। যার অতীত যত বেশি মজবুত তার সামনে হাঁটাও তত শক্ত ভিতের ওপর। রাজনীতিতে এটি খুব জরুরী। যেমন জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক দল যতখানি ডাইনামিক, মিলি

ফিরে দেখা ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

ফিরে দেখা ইতিহাস

॥ এক ॥ আশির দশকের প্রথম দিকে ফিলিপিন্সের জনপ্রিয় নেতা আততায়ীর গুলিতে নিহত একুইনোর বিধবা স্ত্রী কোরাজন একুইনোর নেতৃত্বে সে দেশে বিপ্লব হয়েছিল এবং স্বৈরাচার ফার্দিনান্দ মার্কোসের পতনের মাধ্যমে তিনি সরকার গঠন করেছিলেন। ইন্টারেস্টিনিং ব্যাপার হলো, সে বিপ্লবের পেছনে অনেক বড় ভূমিকা ছিল চার্চের। ছিল ম্যানিলা থেকে প্রচারিত টেলিফোনে সংবাদের। মেসেজ-ইন্টারনেটের মতো টেলিফোনে প্রচারিত সংবাদও যে আন্দোলনে কার্যকর ফুঁ দিতে পারে তার প্রমাণ ম্যানিলার চার্চের টেলিফোন। সেদিন আমার কর্মস্থল দৈনিক ইত্তেফাক থেকে ম্যানিলায় টেলিফোন করে কোরাজন একুইনোর সঙ্গে এক মিনিটের মতো কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম- : This is Shafiqur Rahman, a Press Reporter from Bangladesh. Madam, can i ask you one question? : Yes, I love to answer. : Are you going to take over? : Yes, I have made up my mind. : Congratulations আমি যখন কথা বলছিলাম তখনও তিনি ম্যানিলার চার্চে জনতার মাঝে অবস্থান করছিলেন। ॥ দুই ॥ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় সেলফোন, ইন্টারনেট ছিল না। হলগুলোতে একটা করে পাবলিক টেলিফোন ছিল। তাও বছরের ৩৬৫ দিনের অধিকাংশ সময়ই খারাপ থাকত। তারপরও ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কি কি কর্মসূচী রয়েছে তা সব আগের রাতে মুখে মুখে সবাই জেনে যেত। দেখা গেছে পরদিন সময়মতো বাংলাদেশ ছাত্রলীগসহ অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা যথাস্থানে হাজির এবং মিছিল নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তোফায়েল আহমেদ, নাজিম কামরান চৌধুরী, শামসুজ্জোহা, আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, দীপা দত্ত, মালেকা বেগম, শেখ হাসিনা, আয়েশা খানম, রাফিয়া আখতার ডলি, মমতাজ বেগম প্রমুখ। এ মুহূর্তে সবার নাম মনে পড়ছে না। কম তো হলো না, ৪৯/৫০ বছর তো হয়ে গেল। সেদিন আজকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া বা সিটিজেন মিডিয়া ছিল না, তবু লড়াই থেমে থাকেনি। মিলিটারি আইয়ুবের মতো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। ॥ তিন ॥ আশির দশকের শেষের দিকে মিলিটারি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক দল ও শক্তির ভূমিকা ছিল মুখ্য। ছাত্র সমাজ ক্যাম্পাসে ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াও ভূমিকা পালন করেছেন। তবে একবার ৪-৫ দিন আত্মগোপন এবং আরেকবার সবার অজান্তে হোটেল পূর্বাণীতে রাতযাপন তার নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। তারপরও বিএনপি নেতৃত্ব তাকে চ্যাম্পিয়ন বানানোর সে কি প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা যা এখনও চলছে। ॥ চার ॥ ১৯৯৬ সালের জনতার মঞ্চের আন্দোলনেও মুখ্য ভূমিকা ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক শক্তি ও রাজনৈতিক সংগঠনের। যে আন্দোলন খালেদা জিয়া সরকারের পতন ঘটিয়েছিল। সেদিনও ছাত্র সমাজের ভূমিকা ছিল, তবে উল্লেখ করার মতো ছিল বড়দের। জনতার মঞ্চ স্থাপিত হয়েছিল ১৯ মার্চ ১৯৯৬ সালে। এর একটি প্রেক্ষাপট রয়েছেÑ ওই বছরই ৭ মার্চ সামনে রেখে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুন, আহাদ চৌধুরী আমরা একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে মিছিল করব। আমাদের যেহেতু সংগঠন নেই তাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরীর শরণাপন্ন হলে তিনি বড় ধরনের জমায়েতের আশ্বাস দেন। আমরা আমন্ত্রণ জানালাম জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, প্রফেসর আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক, রামেন্দু মজুমদার প্রমুখ পেশাজীবী বুদ্ধিজীবীকে। তারা সবাই এলেন। যথারীতি বড় ধরনের একটি সমাবেশ হলো এবং সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শহীদ মিনার থেকে শুরু করে জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে আবার শহীদ মিনারে শেষ হলো। এ সময় আওয়ামী লীগের ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন (বর্তমানে বিএমএ প্রেসিডেন্ট), খ ম জাহাঙ্গীর (এমপি) ও মৃণাল কান্তি দাস (এমপি) আমাদের প্রস্তাব দিলেন এই প্রক্রিয়াটি অব্যাহত রাখতে। তারা আশ্বাস দিলেন লোক সমাগম থেকে শুরু করে যা যা প্রয়োজন তারা যোগান দেবেন। এভাবে একদিন পর পর সমাবেশ-মিছিল হতে লাগল এবং ১৯ মার্চ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্থায়ীভাবে জনতার মঞ্চ স্থাপিত হলো। এর নেপথ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং তিনিই ওই দিন থেকে ঢাকার জনপ্রিয় মেয়র মোহাম্মদ হানিফকে জনতার মঞ্চ পরিচালনার ভার দেন। মেয়র হানিফ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে জনতার মঞ্চ পরিচালনা করলেন। ৩০ মার্চ জনতার রুদ্ররোষ থেকে বাঁচার জন্য বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর আসন থেকে সরে যেতে বাধ্য হলেন। ॥ পাঁচ ॥ ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে এবং ৩ নবেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মাধ্যমে মিলিটারি জিয়া যেভাবে বাংলাদেশকে মূলধারা থেকে বিচ্যুত করে পাকিস্তানী ধারায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যত রকম প্রচেষ্টা তথা মেকানিজম গ্রহণ করেছিলেনÑ বিচারপতি সাত্তার, মিলিটারি এরশাদ এবং জিয়াপতœী খালেদা সেই জিয়ার পথেই অগ্রসর হচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেই পাকিস্তানী ধারার বিপরীতে দাঁড়ালেন এবং বাংলাদেশকে আবার ৩০ লাখ শহীদ ও ৫ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূলধারায় নিয়ে এলেন। আবার বাঙালী প্রাণভরে ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে লাগল, মুক্ত মানুষ হিসেবে নিশ্বাস নিতে লাগল। কিন্তু ২০০১-এর নির্বাচনে মাটির নিচে গ্যাসের ব্যাপারে শেখ হাসিনা শক্ত অবস্থান নেয়ায় বিদেশী চক্রান্তে ও ১ কোটি ২৪ লাখ ভুয়া ভোট ব্যবহারে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা বিচ্ছিন্ন হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের মূলধারার আদর্শিক অবস্থানও বিচ্যুত হয়। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আবারও বাংলাদেশকে পাকিস্তানী পশ্চাৎপদ ধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। কেবল নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নেমে আসে চরম বিভীষিকা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সমর্থকদের ওপরও। তাদের বাড়ি ছাড়া করা, পুকুরের মাছ, গোয়েলের গরু, গাছ, ক্ষেতের ফসল লুট এবং সর্বোপরি নৌকায় ভোট দেয়ায় হাতের কবজি কাটা, চোখ উপড়ানোÑ কিনা অত্যাচার করেছে খালেদা জিয়া, তার সঙ্গে জামায়াত-শিবির। ॥ ছয় ॥ এর মধ্যেও শেখ হাসিনা ঘরে বসে থাকেননি। দলকে নিয়ে খালেদার স্বৈরাচারী শাসনবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন এবং আবারও ১৯৯৬ সালের মতো খালেদার পতন ঘটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৯ থেকে আজ অবধি রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার স্বর্ণযুগ। বিএনপি যতই পথের পাশ দিয়ে ঘেউ কেউ করুক শেখ হাসিনার তাকানোর সময় কোথায়? তিনি তার ডাইনামিক লিডারশিপ আর টার্গেট নিয়ে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পথে এগিয়ে চলেছেন। ॥ সাত ॥ শহীদ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধে বিশ্বাসী মূলধারার জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন, তেমনি একাত্তরের পাকিস্তানী বর্বর মিলিটারি জান্তার সহযোগী জামায়াত-শিবির-মুসলিম লীগ তথা রাজাকার-আলবদর-আলশামস-শান্তি কমিটির বিচার শুরু করলেন। এজন্য আইন করে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করলেন। প্রকাশ্যে বিচার হলো ও জঘন্য খুনীদেরও আত্মপক্ষ সমর্থন এবং আপীলের সুযোগ দেয়া হলো। একে একে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির আদেশ হলো। অনেকের ফাঁসি কার্যকর হলো। এখানে একটা কথা বলা দরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আইন করে কাজ শুরু করেন এবং সে সময় প্রায় ৩৯ হাজার গ্রেফতার হয় এবং তাদের মধ্যে ১১ হাজারের বিরুদ্ধে চার্জশীট ও ৬ শতাধিকের ফাঁসিসহ বিভিন্ন সাজা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মিলিটারি জিয়া আইনটিই বাতিল করে সব যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দেন। জিয়া ছিলেন মূলত পাকিস্তানের এজেন্ট, যেমন খালেদা জিয়া। কেননা তিনি এই বিচার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছিলেন। ॥ আট ॥ আরেকটি গ্রুপ আছে যারা মনে করেন ‘ক-তে কাদের মোল্লা- তুই রাজাকার তুই রাজাকার’ স্লোগান তুলে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ জমিয়েছিল। কথাটা সত্যি; কিন্তু পূর্ণ সত্য নয়। এর পেছনেও ছিলেন শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া তো গণজাগরণ মঞ্চের মেয়েদের সম্পর্কে নোংরা মন্তব্য করেছিলেন। আর একটি গ্রুপ ছিল যারা তোফায়েল আহমেদ ও মাহবুব আলম হানিফকে লক্ষ্য করে পানির বোতল ছুড়ে মেরেছিল। মূর্খেরও একটা জাত আছে! কে এই তোফায়েল আহমেদ? তিনি স্বাধীনতা পূর্ব ঊনসত্তরের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক। যখন বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন, সৈয়দ নজরুল থেকে শুরু করে সব জাতীয়তাবাদী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা মিলিটারি আইয়ুবের কারাগারে তখন তোফায়েল আহমেদ ছাত্র সমাজ তথা জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর গণজাগরণ মঞ্চের নেতা ইমরান এইচ সরকার বা তার সহযোদ্ধারা লড়াই করেছেন যখন শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায়। কোন বৈরী সরকার নয়। প্রসঙ্গক্রমে একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না- নব্বইয়ের প্রথম দিকে গোলাম আযমসহ যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচারের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে গণআদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার নেপথ্যেও ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, সর্বশ্রদ্ধেয় খালাম্মা বেগম সুফিয়া কামাল, জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, প্রফেসর খান সারওয়ার মুরশীদ, আমাদের প্রধান কবি শামসুর রাহমান, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী প্রমুখকে সামনে দিয়ে নিজে সব কিছু করেছেন। এক্ষেত্রে আমার ছোট্ট একটা দায়িত্ব পালন করার সুযোগ হয়েছিল। শেখ হাসিনা তখন বিরোধীদলীয় নেতা। সংসদীয় গণতন্ত্রে ছায়া প্রধানমন্ত্রী। ॥ নয় ॥ কয়েকদিন আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন দেখলাম। গণজাগরণ মঞ্চের মতো এ আন্দোলনেও সোশ্যাল মিডিয়া মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বলা যায় প্রধান ভূমিকা। কিন্তু এ আন্দোলনটি হয়ত কোটা সংস্কারের আন্দোলন দিয়েই শুরু হয়েছিল; কিন্তু কোটায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। টেলিভিশন স্ক্রিনে যতটুকু লক্ষ্য করেছি তাতে কিছুতেই মেনে নিতে পারি না ‘মাস্ক’ পরে ভিসির বাড়ি আক্রমণ ও তাকে হত্যার চেষ্টা করাকে। ঠিক তেমনি মেনে নিতে পারি না বাংলা নববর্ষের জন্য দিনরাত কাজ করে যে সব উপকরণ বানানো হয়েছিল সেগুলো ধ্বংস করার জন্য চারুকলায় আক্রমণকে। এসব কোন ছাত্র সমাজের দাবির আন্দোলন হতে পারে না। থ্যাঙ্কস টু অনারেবল প্রাইম মিনিস্টারকে। তিনি জোঁকের মুখে চুন দিয়ে চক্রান্ত নিঃশেষ করে দিয়েছেন। কোটা নিয়ে অনেক মত থাকতে পারে। কেউ বলছেন কোটা থাকা উচিত নয়, কেউ বলছেন থাকতে হবে। আমার ব্যক্তিগত মত হলো কোটা সংস্কারের সময় এখনও আসেনি। আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। কোটা কারও দয়া নয়। যেমন একজন মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদের সন্তান বা নাতির অধিকার এই কোটা। কেননা, ১৯৭১ সালেও সাড়ে ৭ কোটি জনসংখ্যা ছিল। তার অর্ধেক পৌনে ৪ কোটি। শিশু-কিশোর বাদ দিলে অন্তত ২ কোটি যুদ্ধে যাওয়ার কথা ছিল। গিয়েছে মাত্র ২ লাখ, অর্থাৎ শতকরা একজন। নারী জনসংখ্যার অর্ধেক, রয়েছে প্রতিবন্ধী, পশ্চাৎপদ পাহাড়ী-আদিবাসী। এদের আগে সমান সমান করুন। তারপর কোটা বাতিল করলে কেউ কোন প্রশ্ন তুলবে না। আমার এ লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো সোশ্যাল বা সিটিজেন মিডিয়া যেমন ভাল কাজ করতে পারে তেমনি খারাপ কাজও করতে পারে। সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনে দেখা গেছে হাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি, মুখে জয়বাংলা স্লোগান, অথচ ভিসির বাড়িতে ঢুকে বঙ্গবন্ধুর ছবির অবমাননাÑ এটি বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান নয়। অগ্নিকন্যা বেগম মতিয়া চৌধুরীর একটি বক্তব্যকে বিকৃত করে ‘আমি রাজাকারের বাচ্চা’ বলে যে ছাত্রটি (নাকি অছাত্র) দাঁড়িয়েছিল সে কে? কবির ভাষায় বলতে হয়- ‘সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’ ঢাকা ॥ ২৬ এপ্রিল ২০১৮ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×