
ছবি: প্রতীকী
সকালের নাশতায় পাউরুটি আর চা আমাদের সমাজে বহুদিন ধরেই জনপ্রিয় একটি অভ্যাস। বিশেষ করে যারা ব্যস্ত জীবনযাপন করেন, তাদের জন্য এটি একধরনের সহজ ও ঝামেলাবিহীন খাবার। কিন্তু অনেকেই অভিযোগ করেন, এমন নাশতার পর পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক, বুক জ্বালা বা হজমে সমস্যা দেখা দেয়। প্রশ্ন উঠছে, কেন এই সাধারণ নাশতা হজমে ব্যাঘাত ঘটায়?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের বুঝতে হবে পাউরুটি এবং চায়ের পুষ্টিগুণ, উপাদান এবং শরীরে কীভাবে তারা প্রভাব ফেলে। প্রথমেই বলা যায়, পাউরুটি মূলত পরিশোধিত ময়দা দিয়ে তৈরি হয়। এই ময়দা প্রস্তুতের সময় গমের আঁশ ও প্রাকৃতিক ফাইবার সরিয়ে ফেলা হয়, যার ফলে এটি হজমের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো হারিয়ে ফেলে। শরীরে ঢুকলে এটি খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয় এবং ইনসুলিন নিঃসরণে প্রভাব ফেলে, কিন্তু পেট ভরে না দীর্ঘ সময়ের জন্য। আবার, ময়দা জাতীয় খাবার হজম হতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় নেয় এবং অনেকের ক্ষেত্রে এটি পাকস্থলীতে গিয়ে চিটচিটে অবস্থায় জমে গিয়ে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
এদিকে সকালে খালি পেটে চা খাওয়া একপ্রকার হজম ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার মতো কাজ। বেশিরভাগ চা—বিশেষ করে কালো চা বা দুধ-চা—এ ক্যাফেইন এবং ট্যানিন নামক উপাদান থাকে, যা খালি পেটে খেলে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। যার ফলে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গিয়ে গ্যাস্ট্রিক, অম্বল বা গ্যাসের সমস্যা তৈরি হয়। চায়ের ট্যানিন পাকস্থলীর শ্লেষ্মা স্তরে প্রতিক্রিয়া করে হালকা জ্বালা, বমি ভাব এমনকি দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিক আলসার পর্যন্ত তৈরি করতে পারে।
পাউরুটি ও চা একসাথে খাওয়ার ফলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। সাধারণত আমরা পাউরুটি খাই বাটার, জ্যাম বা কখনো ডিমের সাথে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুধ-চা’র সাথে শুধু শুকনো পাউরুটি খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এতে শরীরে কোনো প্রোটিন বা ফাইবার যুক্ত হয় না, ফলে এটি সঠিকভাবে হজম হয় না এবং দীর্ঘসময় পরিপাকতন্ত্রে আটকে থেকে গ্যাস সৃষ্টি করে। অনেক সময় চায়ে থাকা দুধ এবং পাউরুটির গ্লুটেন মিলে খাবারনালিতে ভারি অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা বদহজমের অন্যতম কারণ।
অন্যদিকে, সকালের সময়টি হলো শরীরের হজম প্রক্রিয়া নতুনভাবে শুরু হওয়ার মুহূর্ত। সারা রাত উপবাসের পর পাকস্থলীতে এনজাইমের ঘাটতি দেখা দেয় এবং তখন প্রয়োজন হয় এমন কিছু খাবার যা হালকা, সহজে হজম হয় এবং পুষ্টিকর। কিন্তু পাউরুটি ও চা এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারে না। বরং এটি পাকস্থলীর উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং হজমের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অনেকেই দীর্ঘদিন একই ধরনের নাশতা গ্রহণ করলে শরীর একঘেয়েমিতে পড়ে এবং হজমে সমস্যা বাড়ে। শরীর চায় বৈচিত্র্যময় খাবার—যাতে প্রোটিন, ফাইবার, হালকা ফ্যাট এবং অল্প পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। কিন্তু পাউরুটি ও চা, বিশেষ করে যদি তা পরিশোধিত ময়দার তৈরি হয় ও বেশি চিনি দেওয়া হয়, তাহলে শরীরের পুষ্টিগত চাহিদা পূরণ হয় না এবং হজম ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
সবশেষে, বলা যায় পাউরুটি ও চা খাওয়া একেবারে বাদ দিতে হবে— তা নয়। তবে সচেতনতা দরকার। পাউরুটি যদি হয় গম বা হোল-গ্রেইন জাতের, সঙ্গে যদি প্রোটিন সমৃদ্ধ কিছু যেমন ডিম, বাদাম বা ফল যোগ করা হয়, এবং চা যদি হয় লিকার বা হারবাল, তাহলে হজমে তেমন সমস্যা হবে না। তবে প্রতিদিনের সকালের নাশতা শুধুই পাউরুটি ও চা হলে, বিশেষ করে খালি পেটে, তা শরীরের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। তাই সময় এসেছে আমাদের নাশতার ধরনে সচেতনভাবে পরিবর্তন আনার।
এম.কে.