ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমিক থেকে ক্রিকেটার শাকিল

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২৫ এপ্রিল ২০১৮

শ্রমিক থেকে ক্রিকেটার শাকিল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১২ বছর আগে কাজের সন্ধানে আরব আমিরাতের দুবাই গিয়েছিলেন। সে সময় তার বন্ধুরা এসএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। কিন্তু পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য সালাউদ্দিন সাকিল ৪ বছর দুবাইয়ে এক মরু অঞ্চলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর দেশে ফিরে টেপ টেনিসের ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। ২০১৪ সালে ক্লাব ক্রিকেট খেলার ট্রায়াল দিয়েছিলেন। তবে নেট বোলারের বেশি হতে পারেননি। অবশেষে এ বছর প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক হয় পেসার হিসেবে এবং ৫টি ম্যাচ খেলেন। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও অভিষেক হয় তার। ২৮ বছর বয়সে এখন পেশাদার ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন মুন্সীগঞ্জের এ তরুণ বাঁহাতি পেসার। খুব কষ্টকর সময় কেটেছে শাকিলের। দুবাইয়ের মরুভূমিতে তিনি এক সাপ্লাই কোম্পানিতে কাজ করেন। ৫০ ডিগ্রী তাপমাত্রার মধ্যেও কাজ করতে হয়েছে, ভ্রমণ করতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। এ বিষয়ে শাকিল বলেন, ‘আমি দৈনিক কাজে যাওয়ার জন্য ভোর ৪টায় উঠে যেতাম। পলিথিন ব্যাগে করে খাবার নিতে হতো। আমরা প্লেটে করে খেতে পারতাম না মরু ঝড়ের কারণে। বাতাসে খাবার উড়ে চলে যেতে পারতো। মাঝে মাঝে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রী হয়ে গেলে আমাদের খাবারগুলো গন্ধ হয়ে যেত এবং পুরো বিষয়টি অনেক কঠিন ছিল।’ ৪ বছর পর ভিসার মেয়াদ শেষ হলে তার প্রতিষ্ঠান ছুটি কাটানোর জন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়। মরুভূমিতে ইস্পাত ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতেন আর এটাই প্রত্যাশা করতেন এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন যেন এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ পান। ছুটিতে দেশে আসাটাই তার জন্য আশা পূর্ণ করেছিল এবং তিনি আর ফিরে যাননি। যে চার বছর দুবাইয়ে ছিলেন একটা দিনও সুযোগ হয়নি ব্যাট-বল হাতে নেয়ার। অথচ ছোটবেলায় মুন্সীগঞ্জে তার গ্রামে নিয়মিতই টেপ টেনিস খেলতেন এবং স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেটার হওয়ার। দেশে ফিরে আবারও সেই খেলাটাই শুরু করেন। ২০১২ সালের গোড়ার দিকে তার এক বন্ধু তাকে কোচ গোলাম রসুলের কাছে নিয়ে যান। তিনি ওই সময় নারায়ণগঞ্জে একটি ক্রিকেট অনুশীলন তত্ত্বাবধান করছিলেন। মাত্র ৩ মাসের মধ্যে শাকিল ঢাকা লীগের তৃতীয় বিভাগে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে যান। পরের দুই বছরে প্রথমে দ্বিতীয় বিভাগ এবং পরে প্রথম বিভাগে খেলার সুযোগ হয় তার। ওই বিষয়ে শাকিল বলেন, ‘২০১৪ সালে যখন আমি ক্লাব ট্রায়ালে গিয়েছিলাম সবাই আমাকে দেখে হাসাহাসি করছিল। আমার বন্ধু মেহরাব হোসেন জোশি আমাকে একজোড়া বোলিং বুট ও ব্যাট দিয়েছিল। তাদের বলে কয়ে রাজি করিয়েছিল যেন আমাকে একবার নেটে বোলিং করার সুযোগ দেয়া হয়। তারা সেই সুযোগ দেয়ার পর আমার পারফর্মেন্সে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। পরে সৌভাগ্যক্রমে আমি ওই ক্লাবের হয়ে ভাল পারফর্মেন্স দেখাতে পেরেছি।’ এ বছরের শুরুতে শাকিলের ক্যারিয়ার বড় একটি মোড় নিয়েছে। ফতুল্লা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নেটে বোলিংয়ের সময় কোচ মিজানুর রহমানের চোখে লাগেন তিনি। ২০১৬ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলের এ প্রধান কোচ তার পেস ও উন্নতি দেখে মুগ্ধ হয়েই এ বছর প্রিমিয়ার লীগে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে খেলার সুযোগ করে দেন। ৫ ম্যাচ খেলে ৬ উইকেটও শিকার করেন শাকিল। এই ক্লাবেরও কোচ মিজানুর, তিনি পরে এবার মধ্যাঞ্চল দলে শাকিলকে খেলানোর সুুপারিশ করলে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও অভিষেক হয় তার। এ বিষয়ে শাকিল বলেন, ‘এটা আমাকে অন্যরকম জীবন দিয়েছে। আমি মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভাইকে শুধু টিভিতেই দেখেছিলাম। কিন্তু তিনিই আমার অধিনায়ক ছিলেন এবং সুন্দর করে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। এ বিষয়টি আমার কাছে আশ্চর্য এক ভাললাগা।’ ম্যাচে দক্ষিণাঞ্চলের বিপক্ষে আবু হায়দার রনির সঙ্গে বোলিং উদ্বোধন করেন শাকিল এবং উইকেট তুলে নেন ইমরুল কায়েসের। ম্যাচে সবমিলিয়ে অবশ্য ২ উইকেটের বেশি পাননি শাকিল। কিন্তু কঠিন এক শ্রমিকের কষ্টের জীবন মোড় নিয়েছে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে যে স্বপ্নটা তিনি দেখেছিলেন শৈশবে।
×