ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম পর্যায়ে এলএনজি পাবে চট্টগ্রামবাসী

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২২ এপ্রিল ২০১৮

প্রথম পর্যায়ে এলএনজি পাবে চট্টগ্রামবাসী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ২৫ এপ্রিল দেশে আসতে যাচ্ছে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। তরল থেকে একে ফের গ্যাসে রূপান্তর করে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে ৫ থেকে ১০ দিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা। সে হিসেবে মে মাসেই এলএনজি পৌঁছে যাবে গ্রাহকের কাছে। প্রথম পর্যায়ে চট্টগ্রামে এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জ্বালানি সঙ্কট দূর করতে দেশে প্রথমবারের মতো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়। তরল আকারের এই গ্যাস আসবে কাতার থেকে। প্রথমে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি) ঘনফুট এলএনজি আসবে। পর্যায়ক্রমে সরবরাহ বাড়িয়ে ৫০০ মিলিয়ন (৫০ কোটি) ঘনফুট করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি এই এলএনজি আমদানি করবে। প্রথমবার এক্সিলারেট এনার্জি তাদের রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিটে এক লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজি বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। পেট্রোবাংলার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে আমদানি করা এলএনজি চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ শুরু করা হলেও এর প্রভাব পড়বে সারাদেশেই। কারণ বর্তমানে চট্টগ্রামে ২৩০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে হয়। এই গ্যাস তখন দেশের অন্য অঞ্চলগুলোতে সরবরাহ করা হবে। এতে সারাদেশেই গ্যাসের ঘাটতি কিছুটা হলেও কমে আসবে। এছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ে সামিটের আমদানি করা এলএনজি আসার কথা অক্টোবরে। সেই আমদানি শুরু হলে তা সরবরাহ করা হবে দেশের মধ্যাঞ্চলে। এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ বলেন, এলএনজি এলে চট্টগ্রামে আর গ্যাস দেয়ার প্রয়োজন হবে না। এলএনজির কিছু অংশ জাতীয় গ্রিডেও সরবরাহ করা যাবে। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তরাঞ্চলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। খনি থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস তুলে চাপ প্রয়োগে সংকুচিত করে তরলে রূপান্তরকে এলএনজি বলা হয়। এই এলএনজি জাহাজে করে দেশে আনা হবে। এরপর রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিটের মাধ্যমে আবার গ্যাসে রূপান্তর করে গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। তরলীকৃত গ্যাসভর্তি জাহাজ বন্দরে পৌঁছানোর পর রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিটের মাধ্যমে তরল এই গ্যাস আবার বায়বীয় আকারে আনা হবে। এরপর সঞ্চালন লাইন হয়ে গ্রাহকের পাইপলাইনে গ্যাস পৌঁছাতে সবমিলিয়ে ১৫ দিনের মতো সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, এলএনজির আমদানি বর্তমান সরকারের একটি বড় উদ্যোগ। এতে দেশের গ্যাস ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে। এখন পর্যন্ত যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে আগামী কয়েক বছরেরর মধ্যে দেশে প্রায় ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি হবে। এতে গ্যাসের ঘাটতি যেমন পূরণ হবে, তেমনি গ্যাসের দামও সমন্বয় করতে হবে সরকারকে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এক্সিলারেটের পর বাংলাদেশে পর্যায়ক্রমে এলএনজি আনবে আরও তিনটি কোম্পানি। সামিট, রিলায়েন্স, হংকং সাংহাই মানজালা। প্রত্যেকেই ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস বাংলাদেশ আনবে। এক্সিলারেটের সঙ্গে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই চুক্তি স্বাক্ষর করে পেট্রোবাংলা। চুক্তি অনুযায়ী, এ মাসেই তাদের এলএনাজি আমদানির কথা ছিল। ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল সামিটের সঙ্গে চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। তাদেরও এ বছরের অক্টোবরে এলএনজি আনার কথা রয়েছে। এছাড়া রিলায়েন্স ও হংকং সাংহাই মানজালার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রিলায়েন্স ২০১৯ সালের জুন মাসে এবং মানজালার ২০২০ সালের জুন মাসে এলএনজি আমদানির সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই এলএনজি সঞ্চালনের কাজও শুরু হয়েছে। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (জিটিসিএল) জানায়, এরই মধ্যে মহেশখালী-আনোয়ারা-১ নামের পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। মহেশখালী থেকে আনোয়ারা (২ নম্বর সঞ্চালন লাইন), আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট, চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, ফেনী থেকে বাখরাবাদ এবং কটুম্বপুর থেকে মেঘনাঘাট সঞ্চালন লাইনগুলো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×