ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পনিরের পুলিৎজার জয়

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২০ এপ্রিল ২০১৮

পনিরের পুলিৎজার জয়

সারা বিশ্বের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং সম্মানজনক পুরস্কার হলো পুলিৎজার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সংবাদপত্র প্রকাশক জোসেফ পুলিৎজারের নামানুসারে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে ১৯১৭ সাল থেকে। অবশ্য সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র জগতের বাইরেও গল্প, উপন্যাস, নাটক, জীবনচরিত, ইতিহাস, কবিতা, সঙ্গীতসহ ১৪টি কাটাগরিতে দেয়া হয়ে থাকে এই পুরস্কার। মার্কিন মুলুকে এই পুরস্কারটি অত্যন্ত সম্মানের এর প্রদত্ত অর্থমূল্যের বাইরেও। এবার আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন ও ছবির জন্য একাধিক পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এর বাইরেও নিউইয়র্ক টাইমস, নিউইয়র্কার ম্যাগাজিন এবং ওয়াশিংটন পোস্ট পুরস্কার জিতেছে অনুসন্ধানী ও বিস্ফোরণমূলক একাধিক প্রতিবেদনের জন্য। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে ‘ফিচার ফটোগ্রাফি’ ক্যাটাগরিতে রয়টার্সের পুরো ফটোগ্রাফি বিভাগের পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্তির খবরটি। এই বিভাগের সাত ফটোগ্রাফারের অন্যতম একজন বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জের ছেলে মোহাম্মদ পনির হোসেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের যে ১৬টি ছবি এবার পুলিৎজার জিতেছে তার মধ্যে তিনটিই তোলা পনির হোসেনের। সবকটি ছবিই মিয়ানমার থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতন-গণধর্ষণ থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্বিষহ জীবনের ভয়াবহ মর্মান্তিক চিত্র। সাবাস মোহাম্মদ পনির হোসেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পনিরের যে ছবিটি বিশ্বব্যাপী এবং একই সঙ্গে পুলিৎজার পুরস্কারের বিচারকম-লীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে, তা সামান্য একজন রোহিঙ্গা নারী হামিদার। মিয়ানমারের রাখাাইন থেকে নৌকায় উঠেছিলেন তিনি। বাংলাদেশের টেকনাফ উপকূলে পৌঁছার আগেই ডুবে যায় নৌকাটি। সমুদ্রে ডুবে মারা যায় হামিদার ৪০ দিনের নবজাতক। সেই শিশুসন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে হামিদার মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক আহাজারি নিশ্চয়ই বিশ্ববাসীর হৃদয় মন স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ছবিটি তোলা হয় টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে। পনিরের ভাষ্য, এ রকম একটি চিরন্তন মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ আলোকচিত্র তোলার জন্য তাকে দিনের পর দিন অপরিসীম ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছে। ছবি তোলার সময় পেশাদারিত্বের দাবিতে খুব একটা মানসিক তাড়না অনুভূত না হলেও ছবি সম্পাদনা করার সময় তিনি অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। বাংলাদেশের তরুণরা যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের জন্য সুনাম ও সম্মান বয়ে আনছেন, পনিরের পুলিৎজার প্রাপ্তি তারই একটি গৌরবদীপ্ত প্রমাণ। ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে গ্রহণের জন্য তাকেও সংগ্রাম করতে হয়েছে পরিবারের সঙ্গে। মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের সায় ও সমর্থন ছিল না ফটোগ্রাফিতে ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে। সেই পনির রীতিমতো সংগ্রাম করে শৌখিন ফটোগ্রাফি থেকে একেবারে উঠে এলেন পেশাদারি আলোকচিত্রী হিসেবে। নাম লেখালেন আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফির অঙ্গনে, একেবারে পুলিৎজার পুরস্কার জিতে। এ বড় কম সম্মানের নয়; নয় কম গৌরবের। পনিরের পাশাপাশি এই সম্মান ও গৌরবের অংশীদার বাংলাদেশও। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আরও কয়েক তরুণ ফটোগ্রাফার, যাদের মধ্যে রয়েছে তরুণীও, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নাম লিখিয়েছেন ফটোগ্রাফার হিসেবে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, টাইম, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, গার্ডিয়ান, ইকোনমিস্ট পত্রিকায় তাদের ছবি ও নাম প্রায় নিয়মিত ছাপা হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে শ্লাঘা ও আনন্দের, গৌরবের তো বটেই। অসির চেয়ে কলম শক্তিশালী নিশ্চয়ই। তবে তার চেয়েও শক্তিশালী নিশ্চয়ই ক্যামেরার চোখ, যা একটি দ্রষ্টব্যকে একই সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন, বাস্তব ও চিরন্তন করে তুলতে সক্ষম।
×