ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিন্ন এক মিলন

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

ভিন্ন এক মিলন

অভিনয় জগতের পরিচিত মুখ আনিসুর রহমান মিলন। মঞ্চে এক রকম মিলন, টিভি পর্দায় আরেক রকম অভিনেতা এবং বড় পর্দায় একেবারেই নিজেকে বদলে নতুন এক অভিনেতা হিসেবে তার ভক্তরা তাকে আবিষ্কার করেছে। একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছেন, গড়ছেন এবং নতুনভাবে নিজেকে হাজির করছেন। বড়পর্দা ও ছোটপর্দা- দু’জায়গাতেই সমানভাবে অভিনয় করছেন আনিসুর রহমান মিলন। যদিও এর আগেই নিজের নামের শেষে মিলন যোগ করে নিয়েছেন বেশ কিছু আলোচিত ছবি। যার মধ্যে ‘রাজনীতি’ পেয়েছে ব্যবসায়িক সাফল্যও। এই ছবিতে মিলনের অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শক। সাদেক বাচ্চু, আলীরাজ, শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের মতো বড় পর্দার তুমুল জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীদের সঙ্গে পালা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। মিলন অভিনীত ‘বিজলী’ শিরোনামের একটি ছবি মুক্তি পাওয়ার পর সপ্তাহ শেষ হতে না হতেই নতুন খবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে মিলন অভিনীত ‘আলতাবানু’ চলচ্চিত্র। ছবি ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় কথা বলেন আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন রুহুল আমিন ভুঁইয়া আনন্দকণ্ঠ : ‘বিজলী’ ছবিতে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? আনিসুর রহমান মিলন : অনেক সাড়া পাচ্ছি। প্রথমত ‘বিজলী’ সিনেমাটা মানুষের কাছে আলাদা মনে হয়েছে দেখে। টেকনিক্যাল গল্পের জায়গা থেকে আমার চরিত্র পজিটিভ ছিল। আমার গেটআপ একেবারে ভিন্ন ধারার ছিল। সবাই মনে করছে বিজলী টু কি হতে পারে। কেননা, আমাকে দিয়ে ছবিটি শেষ হয়েছে। বিজলী নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে যে মিলন ভাইকে দিয়ে বিজলী টুতে কি দেখতে পাব। সবমিলিয়ে সবকিছু পজিটিভ হয়েছে। আনন্দকণ্ঠ : ‘আলতাবানু’ ছবিটি প্রসঙ্গে বলুন। আনিসুর রহমান মিলন : অরুণ চৌধুরী পরিচালিত ‘আলতাবানু’ একটি মৌলিক গল্পের ছবি। মৌলিক ছবি করতে সবসময় ভাল লাগে। একেবারে মৌলিকতার জায়গা থাকে তখন অনেক বেশি ভাল লাগে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি ছবির মাধ্যমে সমাজে একটা ম্যাসেজ দিতে। আমাদের ছোট একটি দেশে কুসংস্কারে ভরে গেছে। গ্রামে কুসংস্কার প্রচলিত বেশি। সেই কুসংস্কারের একটা পাট আমাদের এই সিনেমায় আছে। ‘আলতাবানুতে’ দর্শক দেখতে পাবে একটি কুসংস্কার মানুষের জীবন কিভাবে ধ্বংস করে দেয়। আমার কাছে মনে হচ্ছে একটি ভাল সিনেমা হিসেবে ‘আলতাবানু’ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হবে। আনন্দকণ্ঠ : ঈদ ব্যস্ততা কেমন? আনিসুর রহমান মিলন : ঈদের ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। ঈদের কাজ করছি। অলরেডি গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। আনন্দকণ্ঠ : ‘শেষ রাতের গল্প’ নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন শুনেছি? আনিসুর রহমান মিলন : হ্যাঁ! ৮ মিনিটের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কাজ শেষ করেছি। এখন পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। এটাও সত্যিকারের সমাজে ঘটে যাওয়া একটি গল্প। আমার কাছে মনে হয়েছে এটি দ্বারাও মানুষ কিছুটা হলেও ম্যাসেজ পাবে এবং সচেতন হওয়ার সুযোগ পাবে। ভাল লাগছে কাজটি করে। আনন্দকণ্ঠ : ধারাবাহিক ‘মধ্যবর্তিনী’ প্রসঙ্গে বলুন। আনিসুর রহমান মিলন : মধ্যবর্তিনী নামে একটি সিরিয়াল করেছি। এটি রাজু খান পরিচালনা করেছেন দীপ্ত চ্যানেলের জন্য। এটা ওদের নিজেদের প্রোডাকশন। আমার কাছে মনে হয় এই প্রোডাকশনটি মানুষের ভাল লাগবে। গল্পতে ভিন্নতা আছে। আনন্দকণ্ঠ : মুক্তি প্রতিক্ষীত রয়েছে কয়টি ছবি? আনিসুর রহমান মিলন : পাঁচটি চলচ্চিত্র রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। ছবিগুলো হচ্ছে- ‘সাদাকালো প্রেম’, ‘রাত্রির যাত্রী’, ‘নাইয়র’, ‘টার্গেট’ ও ‘স্বপ্নবাড়ি’। আনন্দকণ্ঠ : ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ চলচ্চিত্রর কাজ কবে থেকে শুরু করছেন? আনিসুর রহমান মিলন : আগামী ২৬ তারিখ থেকে আমি শুরু করব। আমাকে গহর চরিত্রে দেখা যাবে। এই প্রথম সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে কাজ করছি। আনন্দকণ্ঠ : টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র দু’জায়গাতেই সমানভাবে অভিনয় করছেন। দুই পর্দার মধ্যে পার্থক্যগুলো কেমন মনে হয়? আনিসুর রহমান মিলন : পার্থক্য হচ্ছে ছোট আর বড়। পার্থক্য তো বেশি দেখি না। তবে পারফর্মেন্সের ধরন দুইক্ষেত্রে ভিন্ন। ফিল্মের প্লাটফরম বড়। ঠিকঠাক মতো গল্প না বলা গেলে সে ক্ষেত্রে কিছু হয় না। টেলিভিশনে আপনি ভাল গল্প তৈরি করতে পারেননি। কিন্তু দর্শক আপনাকে খুঁজে পাবে না। তবে ফিল্মে খুঁজে পাবে দর্শক আপনাকে। আমার অভিনীত ইফতেখার চৌধুরীর পরিচালনায় ‘দেহরক্ষী’ ছবিটি যখন রিলিজ হয় তখন বিভিন্ন চ্যানেলে আমার বারোটা ধারাবাহিক প্রচার চলতি ছিল। তারপরও ‘দেহরক্ষী’র অভিনয়টা আলাদাভাবে নিয়েছেন দর্শক। কারণ বারোটা ধারাবাহিক নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনয়ে ভিন্নতা ছিল। ফিল্মের ক্যানভাস আসলে বড়। অনেক টিভি নাটকে নদী দেখাতে গিয়ে দীঘি দেখিয়েই বোঝানো হয় এটা নদী। কিন্তু ফিল্মে দীঘি দেখালে সেটা আর ফিল্ম থাকবেই না। রিয়েল জায়গাটা ফিল্মে লাগবে। এটাই দুটোর মধ্যে পার্থক্য। আরেকটা বিষয় হলো অভিনয়ে ভিন্নতা আনা। আমি এক সময় মঞ্চে নিয়মিত কাজ করতাম। যখন টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করি তখন কিন্তু মঞ্চের সেই অভিনয়টা টিভি মিডিয়ায় করলে চলতো না কিংবা দর্শক তা পছন্দ করতেন না। কেননা টেলিভিশন মিডিয়া ক্লোজ মিডিয়া এবং ইরেজ মিডিয়াও বটে। প্রতিনিয়ত বদলায়। তাই টিভি মিডিয়ায় নিজের অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলাতে হয়েছে। আবার যখন বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করলাম তখনও কিন্তু নিজেকে ভেঙ্গেছি। যেমন নাটকে কোন চিৎকারের দৃশ্য থাকলে সেটা নাটকের পর্দা এবং ড্রয়িং রুমের ব্যাপ্তিকে মাথায় রেখে চিৎকার দিতে হয়। আবার চলচ্চিত্রে যখন চিৎকারের দৃশ্য আসে তখন সিনেমা হলের কথা চিন্তা করেই অনেক জোরে সেই চিৎকারটা দিতে হয়। অর্থাৎ পরিমিত বিষয়টা কোথায় কেমন হবে সেটা একজন অভিনেতা হিসেবে মাথায় রাখতে হয়। আনন্দকণ্ঠ : যেহেতু দুই পর্দায় কাজ করছেন তাই সিডিউল মেইনটেইন করতে সমস্যা হয় না? আনিসুর রহমান মিলন : এই ব্যাপারটা আসলে নিজের কাছে। সিডিউল মেলাতে একটু ঝামেলায় পড়তে হয় বটে। আমি সবসময় অন্যভাবে ভাবি। কিন্তু তবুও চেষ্টা তো করতে হবে। চলচ্চিত্রের শূটিংয়ের সময় বড় বড় সিডিউল থাকে। আর নাটকে ছোটছোট সিডিউল। মাসের ২০ দিন ফিল্মে। আর ১০ দিন নাটকের জন্য রাখি। আনন্দকণ্ঠ : বড় পর্দায় আপনার শুরুটা এন্টি হিরো হিসেবে। এরপর বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে আপনাকে দেখা গেছে। আপনি নিজে কোন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে আনন্দ পান? আনিসুর রহমান মিলন : একটা চরিত্রে যখন পারফর্মেন্স করার সুযোগ থাকে আমি তখন বেশি আনন্দ পাই। আমাদের দেশের ফিল্মে তিনটি শব্দ বেশ প্রচলিত ‘নায়ক’ ‘নায়িকা’ ও ভিলেন। পৃথিবীর কোথাও এ শব্দগুলো প্রচলিত না। নায়ক যে চরিত্রটা করবে সেটা সেন্ট্রাল ক্যারেক্টার। কিন্তু আরও অনেক ধরনের ক্যারেক্টারকে যে সেন্ট্রাল ক্যারেক্টার করা যায় সেই ধারণা বাংলাদেশে নেই। এখানে মূল চরিত্র করা মানে নায়ক হয়ে যাওয়া। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এমন ঘটনা সাধারণত বিরল- যে কেউ এন্টি হিরো হিসেবে শুরু করে পরে আবার হিরোর ক্যারেক্টার করেছে এবং তার চাহিদা বেড়েছে। সেই পয়েন্ট অব ভিউ থেকে যদি বিচার করি দর্শক আমাকে সত্যি ভালবাসেন। আরেকটা কথা না বললেই নয়- আমাদের এখানে পাঁচটি গান, কয়েকটি মারামারির দৃশ্য কিংবা আইটেম সং না থাকলে সেটাকে বাণিজ্যিক ফিল্ম বলা হয় না। আনন্দকণ্ঠ : দর্শক ভক্তদের উদ্দেশে কিছু বলার আছে? আনিসুর রহমান মিলন : দর্শকদের সবসময় মন খারাপ থাকে ভাল একটি সিনেমা দেখার হলে গিয়ে। কিন্তু ভাল গল্পের সিনেমা দেখতে পাই না। তার পাশাপাশি আমাদের মা-বোনদের একটা অভিযোগ আছে সুস্থ ধারার ছবি কোথায়? তবে সবকিছুই দর্শক খুঁজে পাবে আলতাবানু ছবিতে। একটি সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র বলতে যা বোঝায়। সকল দর্শকের দেখার মতো একটি চলচ্চিত্র। আমি বলব আপনাদের জন্য একটি পজিটিভ ভাল গল্পের ছবি আলতাবানু। আপনারা হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখবেন।
×