ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দু’দিনে এক ডজন সরকারী নিয়োগ পরীক্ষা, বিপাকে চাকরিপ্রার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

দু’দিনে এক ডজন সরকারী নিয়োগ পরীক্ষা, বিপাকে চাকরিপ্রার্থীরা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ মাত্র দুই দিনে এক ডজন সরকারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের কয়েক লাখ চাকরি প্রার্থী। আগামী ২০ এপ্রিল একই দিনে সোনালী ব্যাংক, জীবন বীমা কর্পোরেশন, জিটিসিএল, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ছাড়াও অর্ধডজন পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একই অবস্থা ২৭ এপ্রিলেও হওয়ায় একটির বেশি পরীক্ষায় অংশ নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রার্থীদের। যাদের অনেকেরই এ পরীক্ষার পর শেষ হয়ে যাবে সরকারী চাকরি প্রাপ্তির বয়স। অনেক বড় নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ায় সঙ্কট আরও বড় হয়েছে বলে উল্লেখ করে পরীক্ষার তারিখ সমন্বয়ের আবেদন জানিয়েছেন উদ্বিগ্ন প্রার্থীরা। গেল বছরেও একই দিনে চাকরি নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের ফলে বঞ্চিত হয়েছিল অসংখ্য চাকরি প্রার্থী। যারা অনেক পরীক্ষায় প্রিলিমিনারিতে পাস করেও লিখিত পরীক্ষায় বসতে পারেননি। এবার ২০ ও ২৭ এপ্রিল আরও বড় সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে কেবল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে। চাকরি প্রার্থীরা দুদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধরণা দিচ্ছেন। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানালেও সমস্যা সমাধানে কোন আশার আলো দেখতে না পেরে গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়েছেন। প্রার্থীরা বলছেন, যে প্রতিষ্ঠানের কাছেই যাওয়া হচ্ছে সেখান থেকে সঙ্গে সঙ্গে বলে দেয়া হচ্ছে অন্য প্রতিষ্ঠানের কবে পরীক্ষা তা তাদের জানার বিষয় নয়। তাদের পরীক্ষার তারিখ অপরিবর্তীত থাকবে। অথচ পরীক্ষার্থীদের অনেকেই আছেন অধিকাংশ পদে আবেদন করেছেন। যার জন্য পরীক্ষার ফি দিয়েছেন। অনেকে অপেক্ষায় আছেন সর্বশেষ সরকারী চাকরির পরীক্ষা দিয়ে পাস করবেন। জানা গেছে, অফিসার পদে ৮১০ জনকে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার সময়সূচী ইতোমধ্যেই প্রকাশ করেছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে। এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৪ হাজার ৪৫৬ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ, তেজগাঁও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, উইলস লিট্ল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এ্যান্ড কলেজ এবং লালমাটিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে আধ ঘণ্টা পূর্বে প্রার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য এমসিকিউ পরীক্ষার প্রবেশপত্র অবশ্যই সঙ্গে আনতে হবে। পরীক্ষার বিধিনিষেধ নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু মাথাব্যথার কারণ কাক্সিক্ষত এ নিয়োগ পরীক্ষার দিনই তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড বা জিটিসিএলের একাধিক পদের নিয়োগ পরীক্ষা, জীবন বীমা কর্পোরেশনের জুনিয়র অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াও আরও বেশ কিছু নিয়োগ পরীক্ষার। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাজস্ব খাতভুক্ত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সময়সূচী প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর বলেছে, আগামী ২০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন প্রথম দফায় দেশের ১২ জেলায় পরীক্ষা নেয়া হবে। জেলাগুলো হলো- মেহেরপুর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও জয়পুরহাট। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে কথা বলেছেন চাকরি প্রার্থীরা অনেকেই। কিন্তু কর্মকর্তারা বলে দিয়েছেন তাদের পরীক্ষা নির্ধারিত দিনেই অনুষ্ঠিত হবে। অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের এসব বিষয়ে কোন সমন্বয় নেই বলে স্বীকার করেছেন কর্মকর্তারাই। তবে সমস্যা সমাধানের কোন পথ তারা দেখাতে পারেননি বলে জনকণ্ঠ অফিসে টেলিফোন করে জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংক, জিটিসিএল ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আবেদন করা প্রার্থী মামুন। তিনি বলছিলেন, আমার সরকারী চাকরি নির্ধারিত বয়স শেষ হয়ে যাবে আগামী এক মাস পরই। এর মধ্যে এ তিনটি পরীক্ষা দিতে পারলে হয়ত কোন চাকরি পাব। কিন্তু একই দিনে একই সময়ে পরীক্ষা হলে একটি পরীক্ষার বেশি দেয়ার সুযোগ পাব না। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাদের বিষয়টি দেখার জন্য। জীবন বীমা কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানানো হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওইদিনে কোন পরীক্ষা আছে বলে তারা জানতেন না। একটি সভায় এ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তবে এখই কোন সমাধান দিতে পারছেন না তারা। এদিকে ভোগান্তির এখানেই শেষ নয়। একই অবস্থার কারণে ২৭ এপ্রিলের বেশ কিছু পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থীরাও বিপাকে পড়েছেন। জানা গেছে, এদিন একাধিক প্রতিষ্ঠানেই আছে ভিন্ন ভিন্ন পদের নিয়োগ পরীক্ষা। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের তিনটি পদের আলাদা নিয়োগ পরীক্ষাও আছে। এদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তিতাস গ্যাসের একাধিক পদে নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে এদিনই। আছে সোনালী ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার পদের পরীক্ষাও। ২০ ও ২৭ তারিখ মিলে অন্তত ১৩টি পদে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী চাকরি প্রার্থীরা। যাদের একজন প্রার্থী হচ্ছেন সোহেল। তিনি বলছিলেন, আমরা কয়েকজন মিলে বাংলাদেশ ব্যাংক, তিতাসে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এসব বিষয় দিয়ে কর্মকর্তারা ভাবতেই রাজি নন। অথচ এটা আমাদের মতো হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর জীবনের প্রশ্ন। ২৭ তারিখ চারটি পদেও নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করেছেন রাব্বি নামের এক চাকরি প্রার্থী। তিনি বলেন, একটি নয়, চার চারটি পরীক্ষায় আবেদন করেছি। একই দিনে চারটি পরীক্ষার কোনটিতে অংশগ্রহণ করব, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। আরেক প্রার্থী আনিসা হামিদ ক্ষোভের সঙ্গে বলছিলেন, সরকারের বিভিন্ন দফতর বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও পরীক্ষার সূচী দিতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আর এসব নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকি। এর মধ্যে অনেকের আবার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপরও যদি একই সময়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে তাহলে হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই বলার থাকে না। এসব পরীক্ষার তারিখ না পেছালে চরম বিপাকে পড়বেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিদ্যায় মাস্টার্স শেষ করে চাকরি জন্য আবেদন করেছিলেন রাজীব। তিনি সোমবার সকালে টেলিফোন করে গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়ে বলেন, আমাদের যাওয়া কোন জায়গা নেই। উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবকেরা এ দেশের সবচেয়ে অসহায় প্রাণী। প্রতিটি চাকরির জন্য আবেদন করতে বেকারদের গড়ে ৩৫০ টাকা করে পরীক্ষা ফি দিতে হয়। এটা কতটা কষ্টকর, সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। পরীক্ষা যদি একই সময় ও একই দিনে হয়, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান তো বেকার যুবকদের সার্কুলার দেয়ার সময়ই তা জানাতে পারত। এখন পরীক্ষাগুলোর তারিখ পরিবর্তন করা না হলে বেকারদের এত কষ্টের টাকা জলে যাবে, চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাও কমবে। আশাকরি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ বিষয়টি ভেবে দেখবে। পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য সচিব মোশারফ হোসেন অবশ্য বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় কোন সমস্যা হবে না। অন্য প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার তারিখের বিষয়টি তো আমরা জানি না।
×