ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব

আলোচনায় তিস্তাসহ দুই দেশের ও আঞ্চলিক ইস্যু প্রাধান্য পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৮ এপ্রিল ২০১৮

আলোচনায় তিস্তাসহ দুই দেশের ও আঞ্চলিক ইস্যু প্রাধান্য পাবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে আজ রবিবার তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। তার এ সফরে তিস্তা চুক্তিসহ দুদেশের দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক ইস্যু প্রাধান্য পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের এ সফরে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সূত্র জানায়, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব আজ রবিবার বিকেল সাড়ে চারটায় ঢাকায় পৌঁছাবেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। আগামীকাল সোমবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। এই বৈঠক শেষে দুদেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিকেলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিজয় কেশব গোখলে। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী প্রধান অতিথি থাকবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। মঙ্গলবার সকালে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন। বিজয় গোখলে গত জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর এটাই তার প্রথম ঢাকা সফর। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করবেন তিনি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরকালে যেসব সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ বেতার ও অল ইন্ডিয়া রেডিও-এর মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক সই। সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের কথা রয়েছে। এই সফর চূড়ান্তের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। আর নরেন্দ্র মোদির সফরে তিস্তা চুক্তিও হতে পারে। ঢাকা সফরে তিস্তা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করবেন বিজয় কেশব গোখলে। এছাড়াও গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশ-চীন-ভারত সম্পর্কের নতুন দিকগুলো। এছাড়া আগামী ১৯-২০ এপ্রিল লন্ডনে কমনওয়েলথ হেড অব গবর্নমেন্ট মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অংশগ্রহণ করছেন। সেখানে ওই সম্মেলনের ফাঁকে দুই প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠকের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আসছে উভয় দেশ। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরকালে লন্ডনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের প্রস্তুতির বিষয়েও আলোচনা করা হবে। বিজয় কেশব গোখলের ঢাকা সফরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। সেই সাক্ষাতে দিল্লীর বার্তা দেবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। এসবের পাশাপাশি ভারতের পাশে বাংলাদেশের সরব সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাবেন গোখলে। সবচেয়ে বড় কথা ঢাকা এবং নয়াদিল্লীর মধ্যে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা তিস্তা ইস্যুতে বিশেষ বার্তা দিতে পারেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভারত তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে চায় বলে এ সফরকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সাম্প্রতিককালের সম্পর্কের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে ভারত। এ অঞ্চলের চালকের আসনটি অন্য কোন দেশের হাতে দিতে চায় না মোদি সরকার। যে কারণে অতি সম্প্রতি সমুদ্র নিরাপত্তা ইস্যুতে ফ্রান্সের সঙ্গে বিশেষ চুক্তি করেছে ভারত। বাংলাদেশকে বিশেষ বন্ধু হিসেবে রেখে আঞ্চলিক রাজনীতিতে ঢাকাকে নয়াদিল্লীর পাশে চায় মোদি সরকার। তবে বেজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক নিয়ে চিন্তিত নয় নয়াদিল্লী। গত দুই বছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং যে সকল সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে সেটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছে নয়াদিল্লী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের গণমাধ্যমকর্মীদের স্পষ্ট করে বলেছেন যে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক শুধু দেশের উন্নয়নের স্বার্থে। এতে ভারতের বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। বিজয় কেশব গোখলের ঢাকা সফর সফল হলে চলতি বছরের মধ্যভাগে কিংবা তার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে আসতে পারেন। সে সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বণ্টনের বিষয়ে ঘোষণা দিতে পারেন। যেমনটি গত ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের ক্ষেত্রে দিয়েছিলেন। ভারতের কূটনীতিকরা বলছেন, যে কোন সময়ের চেয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে সুসম্পর্ক রয়েছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও নয়াদিল্লী ঢাকার পক্ষেই রয়েছে, এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বোঝাতেই বিজয় কেশব গোখলে বাংলাদেশ সফরে আসছেন।
×