
ছবি: জনকণ্ঠ
অবশেষে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একই স্থানে চাকরিরত কলাপাড়ার ৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুনাইদ হোসেন লেলিনের একটি বদলির আদেশের কপি রাত নয় টার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার চলছে। এ খবরকে ঘিরে কলাপাড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠকেরা আনন্দ মিছিল করেন। তারা একে অপরকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছেন। যেন তারা দীর্ঘদিনের এক বিজয় অর্জন করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পহেলা জুলাইয়ের ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে ডা. জেএইচ লেলিনকে কলাপাড়া থেকে নাটোরের পাহাড়তলীর নলডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে। তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে ওখানকার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারীকে।
চিকিৎসক জেএইচ লেলিনের বদলির আদেশ সংবলিত একটি কপিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে কলাপাড়ার বাসিন্দা বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টির সদস্য সচিব ফাতিমা তাসনিম উল্লেখ করেছেন, ‘অবশেষে মানুষখেঁকো ডাক্তারের হাত থেকে কলাপাড়াবাসী রক্ষা পেলো, এ জয় তারুণ্যের, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অর্জন। এছাড়া তিনি মন্তব্য করেছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে ম্যানেজ করে তিনি দাপটে চলেছেন, কিন্তু এই দুর্নীতির বরপূত্রকে রুখে দিয়েছেন তরুণ সমাজ। তিনি এই চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেছেন। ট্রান্সফার কোন শাস্তি হতে পারে না বলেও তিনি মন্ত্যব্য করেন। আমরা কলাপাড়াবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডা: লেলিন মুক্ত হয়েছে। এমনিভাবে অসংখ্য মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে।
উল্লেখ্য চিকিৎসক লেলিনের অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন চলে আসছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় ছাত্র সংগঠকরা কলাপাড়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান করে আসছেন। আন্দোলকারীরা তাঁকে দ্রুত অপসারণ করে কলাপাড়ায় নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি করে আসছিলেন। তার সকল দুর্নীতির তদন্তপূর্বক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। এর আগে কলাপাড়া শহরের বিভিন্ন সড়কের দেওয়ালে ছাত্রজনতার ব্যানারে পোস্টারিং করা হয়। পোস্টারিংএ তাকে পতিত স্বৈরাচারের দোসর আখ্যায়িত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুলাই আন্দোলন বিরোধী তার দেওয়া পোস্ট ছাপানো ছিল। বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ও পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই চিকিৎসককে বদলি কিংবা অপসারণ করা হয়নি। অবশেষে আজকের বদলির কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়।
ছাত্র সংগঠক আল ইমরান জানান, ডাঃ জে এইচ লেলিন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কলাপাড়া হাসপাতালে চাকরি করছেন। সম্প্রতি বিতর্কিত এই চিকিৎসককে একই স্থানে স্বাস্থ্য প্রশাসকের পদে পদায়ন করা হয়েছিল। অথচ অন্য কোন চিকিৎসক আসলে তিন-ছয় মাসে অন্যত্র বদলী করা হয়। আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তার বদলির আদেশ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি করছি। তারা এই বদলির খবরে স্বস্তিবোধ করেন। ডা. লেলিনের বিরুদ্ধে জখমী হওয়া একই রোগী কে দুই ধরনের সনদ দেওয়াসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ করেন তারা। আমরা কলাপাড়াবাসী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সভাপতি নাজমুস সাকিব বলেন, চিকিৎসক লেলিন সরকারি হাসপাতালকে তার নিয়ন্ত্রিত (প্রাইভেট) ম্যাক্স হাসপাতালে পরিণত করে রেখেছেন। যার অবসান হতে যাচ্ছে। তবে ইতিপূর্বে অভিযুক্ত চিকিৎসক জেএইচ খান লেলিন গণমাধ্যমকে বলে আসছিলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ঠিক নয়। এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।
সাব্বির