ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনেও ব্যবস্থা নেয়নি সোনালী ব্যাংক

ভোগ্যপণ্য ঋণ ও গৃহঋণ প্রকল্পে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৮ মার্চ ২০১৮

ভোগ্যপণ্য ঋণ ও গৃহঋণ প্রকল্পে অনিয়ম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে ভোগ্যপণ্য ঋণ ও গৃহঋণ প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাক্ষরযুক্ত তারিখবিহীন সাদা চেকের মাধ্যমে ব্যাংকটির তৎকালীন জুনিয়র ক্যাশ অফিসার লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে সোনালী ব্যাংক রমনা করপোরেট শাখার এওজি ২ (ক্যাশ) হারুন অর রশিদ ও আবুল বাশারের বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রতিষ্ঠানের গৃহঋণের প্রকল্পে ‘গৃহঋণ বিতরণ’ নিয়ে প্রভাব বিস্তারসহ বিভিন্ন অনিয়মের লিখিত অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকের এসব অসাধু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়েও লিখিতভাবে তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ করা হয়েছে। এরপরও ক্ষমতাধর এসব অসাধু ব্যক্তিরা বেপরোয়া কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চেয়ে দুদক থেকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আবুল বাশারের বাবা মোঃ মোসলেউদ্দিন দীর্ঘদিন দুদকের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার তদারকিতেই মূলত দুদকের তদন্তের কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। এদিকে আরেক অভিযুক্ত লুৎফুর রহমান ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, এমপ্লয়ীজ এ্যাসোসিয়েশনের মাদারীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এমনকি ২০০৩ সালে মাদারীপুর শাখার রেমিট্যান্সের গাড়ি থেকে তার সহযোগী নিয়ে ৫৭ লাখ টাকা ডাকাতির অভিযোগে সে সময় গ্রেফতার হন এবং ৬ মাস জেল খাটেন। তবে বর্তমানে তিনি দল বদল করে আওয়ামী লীগে নাম লিখিয়েছেন। জানা গেছে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে ভোগ্যপণ্য ঋণ বিভাগে দায়িত্বরত ছিলেন লুৎফুর রহমান। অন্তত ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভোগ্যপণ্য ঋণ দেয়ার নামে তাদের নিকট থেকে স্বাক্ষরযুক্ত সাদা চেক দ্বারা পূর্বের বিতরণকৃত ভোগ্যপণ্য ঋণের টাকা সমন্বয় না করে তিনি নিজেই তা আত্মসাত করেন। এসব কর্মচারীর একটা বড় অংশই ছিল বুয়েটের নিরাপত্তা কর্মী, লিফট অপারেটর, ঝাড়ুদার ও পিয়ন। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এসএস ওয়ান ফারুক হোসেন নামে এক কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সোনালী বাংকের রমনা করপোরেট শাখায় কর্মরত এওজি-২ (ক্যাশ) হারুন অর রশিদ এবং আবুল বাশারের চাকরি স্থায়ী হয় ২০১১ সালে। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর তারা রমনা করপোরেট শাখায় যোগদান করেন। রমনা শাখায় ট্রেড ইউনিয়নের নাম ব্যবহার করে শাখার বিভিন্ন বিভাগ থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করত। বিভিন্ন ধরনের ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে বিভিন্ন দিবস উদ্যাপনের নামে অর্থ আদায় করত। তাদের এমন অনৈতিক কর্মকা-ের বিষয় তুলে ধরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে রমনা শাখায় কর্মরত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কামরুল হাসান ও এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন যৌথভাবে অভিযোগে হারুন অর রশিদ ও আবুল বাশারের অপকর্ম তুলে ধরে লিখিতভাবে অভিযোগ করার পরও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি সেই সময়ে থাকা জিএম ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করলে তাদের তো শাস্তি হয়ই নি; বরং ওই জিএমকে অজ্ঞাত কারণে রাজশাহীতে বদলি করা হয়। এদিকে রমনা করপোরেট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিক মূল্যে জমি ক্রয় করতে বাধ্য করেন হারুন অর রশিদ ও আবুল বাশার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ব্যাংক থেকে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় যে ঋণ দেয়া হয়েছে সেখান থেকে ৫ পার্সেন্ট চাঁদা হিসেবে কেটে নিয়েছেন।
×