ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ন্যায়বিচারে সকলের অভিগম্যতা’ শীর্ষক সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১১ মার্চ ২০১৮

 ‘ন্যায়বিচারে সকলের অভিগম্যতা’ শীর্ষক সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইনকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ন্যায়বিচারে সাধারণ মানুষের অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে না পারলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। নাগরিকদের ন্যায়বিচারে অভিগম্যতা শক্তিশালী করার প্রত্যয়ে বিভিন্ন অংশীজনদের মতামত ও পরামর্শ আহরণের উদ্দেশ্যে ২৮টি আইনগত সহায়তা প্রদানকারী ও মানবাধিকার সংস্থাসমূহের উদ্যোগে বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রে দু’দিন ব্যাপী শুরু হওয়া ‘ন্যায়বিচারে সকলের অভিগম্যতা’ শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। এছাড়া তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ নিজেদের দেশের মালিক ভাবতে পারছে না। এ রকম পরিবেশ আমাদের কাম্য নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিচার চাইতে হবে, তা না হলে ন্যায়বিচার পাবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব জাকির হোসেন। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ। সম্মেলনে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমাদের আইনী কাঠামোর অনেক দুর্বলতা আছে। তিনি বলেন, আমাদের একটি শেয়ারড্ কালচারাল বিলিফ গড়ে তুলতে হবে। আদালতে ভুক্তভোগীর পক্ষে দুর্বলভাবে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়। এতে করে প্রকৃত ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার পাবার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এছাড়া আমাদের আইনজীবীদের প্রতিষ্ঠান বার কাউন্সিল রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নয়। ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তিনি একে একটি বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসীন আলী তার বক্তব্যে বলেন, ‘ন্যায়বিচারে অভিগম্যতা বাড়ানোর জন্য আমাদের সক্রিয় নাগরিক হতে হবে। তিনি আরও বলেন, ন্যায়বিচার প্রাপ্তি সহজ করতে বাংলাদেশ সরকার তৃণমূল গ্রাম আদালত, সালিশি পরিষদ প্রতিষ্ঠাসহ বেশ কিছু দৃশ্যমান ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সাধারণ জনগণকে এই প্রতিষ্ঠানসমূহের সুফল গ্রহণ করার জন্য আরও সক্রিয় হতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাসমূহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন। ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকার মনে করে আইন-শৃঙ্খলা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আইন সহায়তা এবং মানবাধিকার সংস্থাসমূহ সব সময় নেতিবাচক কথা বলে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতিবাচক কথা বলার জন্য ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বর্তমানে ন্যায়বিচারে অভিগম্যতার হার শতকরা ২ ভাগ। ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের এই হারকে ১০ ভাগে এবং ভবিষ্যতে শতভাগে উন্নীত করতে হবে। এ জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে সরকারী ও বেসরকারী আইন সহায়তা কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে পারলে ন্যায়বিচারে সাধারণ জনগণের অভিগম্যতা বাড়ানো সম্ভব হবে। আয়োজনের সভাপতি ফাওজিয়া করিম বলেন, সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনী দলিল। সুতরাং সংবিধান সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে অধিকারের যোগসূত্র থাকতে হবে। অন্যথায় সেই উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আইনী জটিলতার কারণে বাংলাদেশে অসংখ্য মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এই জটিলতাসমূহ দূর করার প্রতি তিনি মনোযোগী হবার আহ্বান জানান। এ প্রসঙ্গে আরও ইউএনেইচসিআর এর এ্যাসিটেন্ট প্রোটেকশন অফিসার ফাহমিদা করিম বলেন, ‘আমি রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ করছি। ন্যায়বিচার পাবার সমস্যা কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেটা এখানে কাজ করে দেখেছি। মামলা নিয়ে আপোস করার প্রবণতা, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন আইনে তথ্য আড়াল করা, সাক্ষীদের আদালতে অনুপস্থিতি এবং যেটা সম্ভব নয় এ রকম কঠোর আইনে মামলা করাও অনিবন্ধিত বিয়েসহ নানান জটিলার সম্মুখীন হতে দেখেছি রোহিঙ্গা আশ্রিত মেয়েদের। আমাদের কিছু আইন সংসদনের অভাবে ওদের ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে। সেজন্য আমি মনে করি আইনজীবীদের সঙ্গে মানবাধিকার আইনজীবী এক সঙ্গে কাজ করলে অনেক সমস্যা দূর করা সম্ভব।’ ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সকলের অভিগম্যতা শীর্ষক জাতীয় সম্মেলনে সমান্তরাল অধিবেশন-২ অনুষ্ঠিত হয় দুপুর ১২টায়। ‘আদালত পর্যায়ে ন্যায়বিচারে সাধারণের অভিগম্যতায় প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়’ শীর্ষক অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্লাস্টের বোড অব ট্রাস্টেও সদস্য এ্যাডভোকেট জেড আই খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্লাস্টের রিসার্স ফেলো এ্যাড. রেজাউল করিম সিদ্দিকী ও প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ্যাড. সারাবান তাহুরা জামান।
×