ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাহীন রেজা নূর

সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির দলীয় প্রধান থাকা উচিত নয়

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির দলীয় প্রধান থাকা উচিত নয়

জিয়া অরফানেজের অর্থ আত্মসাতের মামলায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া অবশেষে দ-িত হয়ে কারারুদ্ধ হয়েছেন। বেগম জিয়াকে কারাগারে নেয়া হলে সারাদেশে গণবিদ্রোহের অনল জ্বলে উঠবে- এমন হুমকি-ধমকি বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার উচ্চারিত হলেও কর্মক্ষেত্রে এসব যে অসারের তর্জন-গর্জনরূপে প্রতিপন্ন হবে অভিজ্ঞ মহল এমনটাই ধারণা করেছিলেন। হয়েছেও তাই। ‘দেশনেত্রী’ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলেন আর বিএনপির বিদ্রোহ-বিপ্লবের সুর সঙ্গে সঙ্গেই নিচে নামতে শুরু করল। তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ করার কথা ঘোষণা দিলেন এবং দেশবাসীকে একথা জানাতে ভুললেন না যে, এটি বেগম জিয়ারই অভিপ্রায়। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার এই ঘোষণা প্রমাণ করে যে, বিএনপি এখন ঠেকে শিখছে। ইতোপূর্বে জ্বালাও-পোড়াও-ঘেরাও-অবরোধ, পেট্রোলবোমা, গ্রেনেড ইত্যাকার নানাবিধ হিংসাশ্রয়ী পথে ক্ষমতাসীন সরকারকে ধরাশায়ী করতে গিয়ে নিজেরাই ঘায়েল হয়েছে। জনগণ তাদের এই ধরনের হিংসাত্মক তৎপরতাকে কখনই সমর্থন করেনি, করতে পারেনি। বিপ্লব-বিদ্রোহের সঙ্গে সহিংসতার যে এক ঋণাত্মক যোগসূত্র রয়েছে তা তো বলাই বাহুল্য। তাই ফরাসী বা রুশ বিপ্লব থেকে শুরু করে দেশে দেশে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত বিপ্লবকালে অরাজকতা, প্রাণহানি ও হিংসা-হানাহানি কিছুকাল স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হতে দেখা যায়। ‘ধ্বংসের বুকে হাসুক মা তোর সৃষ্টির নব পূর্ণিমা’ কবির এই আশাবাদ বা প্রত্যয়দৃঢ় উচ্চারণ সত্যিকারের গণমুখী বিপ্লবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা সঙ্গতিপূর্ণ বিষয় রূপে দেখা দেয়। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে অবৈধ সরকার, একনায়ক বা স্বৈরতন্ত্রী সরকার ইত্যাকার মিথ্যা অভিধায় ভূষিত করে জনবিক্ষোভ তৈরির মাধ্যমে সরকারকে হঠানোর জন্য বিগত দশ-বারো বছর যাবৎ এহেন রাজনৈতিক অসাধুতা ও দুষ্কর্ম নেই যা কি-না তারা করেনি। সেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে বিএনপি যেসব কর্মসূচী হাতে নিয়েছে তার সবই ছিল হঠকারিতা ও চক্রান্তমূলক। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার সহজ ও মসৃণ পথ ছেড়ে তারা জামায়াত নামক এক ভয়ঙ্কর দানবকে সহযোগী বানিয়ে তাদের দানবীয় শক্তির ওপর নির্ভর করেছে মসনদ ফিরে পাওয়ার জন্য। এর ফল যে ভাল হয়নি তা তো বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ, বদরুদ্দোজা চৌধুরী (সাবেক বিএনপি নেতা), জেনারেল মাহাবুব, ড. মঈন খান, পাপিয়া আশরাফী প্রমুখের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যতেই প্রকাশিত। কিন্তু বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া ও তার পুত্র তারেক জিয়া বরাবরই হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। অবশ্য তাদের ঐ পথ নির্দেশনাটি এসেছে তাদের যারা মেন্টর তাদের মাথা থেকে। অর্থাৎ যারা বেগম জিয়া ও তদীয় পুত্রকে বিএনপির কর্ণধারে পরিণত করেছে এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানবাদী প্রতিক্রিয়াশীল ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য এদেরকে ব্যবহার করছে তাদের পরামর্শ ও নির্দেশ এদের জন্য শিরোধার্য বিধায় বাংলাবাদী রাজনীতি এরা কখনই করবেন না বা করতে পারবেন না। আরও স্পষ্ট করে বললে সেই ধারার রাজনীতি তাদের করতে দেয়া হবে না। পাকিস্তানের আইএসআই এই নেতৃদ্বয় এবং বিএনপির আরও কিছু নেতার মগজ ধোলাইয়ের কাজটি সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে। তারাই এদের বাংলাদেশের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। সবচাইতে বড় কথা যাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এরা ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাদের বিপক্ষে আজ একটি কথা উচ্চারণ করতে গেলেই এদের ভবলীলা সাঙ্গ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বৈকি! সুুতরাং, আজকের বাস্তবতায় বাংলাদেশের তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাস্নাত রাজনৈতিক ধারা অনুসরণ করাটা বিএনপির আগামী দিনের সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারত; কিন্তু এদের দেহ-মন-মস্তিষ্ক সবই যেহেতু বাধা পড়ে আছে পাকিস্তান নামক রাক্ষসপুরীতে, সেহেতু সে রাজনীতি বিএনপি করবে না। ফলে রাষ্ট্রের আদর্শ বা দর্শন নিয়ে খালেদা-তারেকরা মিথ্যার বেসাতি করেই চলবে। যাই হোক, বেগম জিয়া যে অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তাতে তার ভাবমূর্তি আরও দুধাপ নিচে যে নেমেছে এতে কোন সন্দেহই নেই। বিএনপির কলের গান মির্জা ফকরুল, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ যতই বলুন না কেন কারাবন্দী করায় ‘দেশনেত্রীর’ জনসমর্থন হু হু করে বাড়ছে, বাস্তব স্থানে এই দাবি সমর্থন করে না। করে না এ জন্য যে, বিগত বছরগুলোতে বিএনপি রাজনীতির অসারতা, মিথ্যাচার, ভ-ামি, ষড়যন্ত্র আর সহিংসতার বিষয়গুলো জনগণের সামনে এত প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে যে, জনগণের একটি বড় অংশ তাদের ওপর আস্থা হারিয়েছে। এই নেতিবাচক রাজনীতির পরিবর্তে ইতিবাচক রাজনীতি করলে বিএনপি যে অনেক শক্ত অবস্থানে থাকত এতে কোন সন্দেহ আছে কি? যাক, বেগম জিয়া ‘আপোসহীন’ নেত্রী বা ‘দেশনেত্রী’ তা তিনি ওদের ভাষায় যেটাই হোন না কেন আজকের বাস্তবতায় তার মুক্তির জন্য জনগণ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে এটি অক্ষমের কষ্ট-কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের জনগণের অবস্থা এখন ঘরপোড়া গরুর মতো। তাই তারা ঈশান কোণে সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। বিএনপি ও তাদের সারথি জামায়াতের দুর্নিবার হিংসা-হানাহানি জনগণের মনে এদের প্রতি এক প্রকার আস্থাহীনতার জন্ম দিয়েছে। তাই জনগণকে বিএনপি এত ডাকাডাকি করেও কাছে পায় না বা পাচ্ছে না এখন। ছেষট্টিতে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা পেশ করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানবাসীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। বিএনপি যে দাবি তুলছে তা জনগণের নয়, বিএনপি নেতা-কর্মীদের তথা দুর্নীতিবাজ খালেদা-তারেকদের বাঁচানোর উদ্দেশ্য নিয়ে তোলা হচ্ছে। সুতরাং, এই দুই সময়ের আন্দোলনের মধ্যে চরিত্রগত দিক থেকে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে নিশ্চয়ই। সম্প্রতি পাকিস্তানে দুর্নীতির অভিযোগে নওয়াজ শরীফ শুধু প্রধানমন্ত্রিত্বই হারাননি, অতিসম্প্রতি আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদটিও হারাতে বসেছেন। বাংলাদেশের বেগম জিয়ার ক্ষেত্রেও অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে কি? আর দেশের রাজনীতিকে দুর্নীতিবাজদের কবল থেকে উদ্ধার করতে হলে বেগম জিয়ার এই সাজা একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারে যদি ক্ষমতাসীন দল দুর্নীতির বিরুদ্ধে অর্থপূর্ণ জেহাদ ঘোষণা করে। সেই মোতাবেক দলের অভ্যন্তরে ঘাপটিমেরে বসে থাকা বা দম্ভভরে দৌরাত্ম্য করে ফেরা দুর্নীতিগ্রস্তদেরও আইনের আওতায় আনতে পারে। নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দল এবং অঙ্গ সংগঠনসমূহের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, ভূমিগ্রাসী, নীতি-আদর্শ বিবর্জিত ও গণবিরোধী যেসব নেতা-কর্মী স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে নানান অপকর্মের দ্বারা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং দেশের সমূহ ক্ষতিসাধন ও গণতন্ত্রের বিকাশধারাকে বাধাগ্রস্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করাটা আজ অবশ্য করণীয় তথা অপরিহার্র্য একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং সরকার এ ব্যাপারে কঠোর হতে ও দলটি বা সরকার যে দুর্নীতির ব্যাপারে দল-মত-নির্বিশেষে দুর্নীতিবাজদের প্রতি ক্ষমাহীন এই বিষয়টি পরিষ্কার করা একান্তই অপরিহার্য। আরেকটি বিষয় এখানে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসন অভ্যন্তরে যে পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদি চলেছে বা চলছে সেক্ষেত্রে ভেতরে ঘাপটিমেরে বসে থাকা জামায়াত-বিএনপি সমর্থক ও তাদের আশীর্বাদপুষ্টরাই গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জাঁকিয়ে বসে থাকার বন্দোবস্ত পাচ্ছে বলে সম্প্রতি পত্রিকান্তরের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়। কাদের ইশারায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বা সমর্থনপুষ্ট আমলারা পদোন্নতি এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ অধিকার করতে পারছে? সরকার, ক্ষমতাসীন দল এবং প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্বন্ধ কিংবা ব্যক্তিগত সখ্য এই জাতীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে একমাত্র ক্রাইটেরিয়া হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ও হচ্ছে বলে জানা যায়। বিএনপির উর্ধতন মহল থেকে এমন কথা ছড়ানো হচ্ছে যে, নির্বাচন এগিয়ে আসতে দিন, দেখবেন ঠিক সময়মতো প্রশাসনযন্ত্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই সরকারের বিরুদ্ধে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কেও অনুরূপ ধারণা জনমনে প্রবল হচ্ছে ইদানীং। আবার বেতার, বাংলাদেশ টিভি, ইসলামি ফাউন্ডেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তারাই প্রধান পদে আসীন হচ্ছে; প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন পাচ্ছে যাদের অতীতের ভূমিকা অত্যন্ত সন্দেহজনক। কি করে এরা পদোন্নতি পায়? প্রধানমন্ত্রীর কাছে কারা এসব আওয়ামী লীগবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পর্কে প্রকৃত সত্য এবং তথ্য লুকিয়ে রেখে এদের অত্যন্ত স্পর্শকাতর আসনগুলোতে আসীন করার বন্দোবস্ত করছে? বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্ণধার, ব্যাংক-পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে ছেলে ভোলানো ছড়া শোনানো হচ্ছে আর সেই সুবাদে একটি চক্রান্তের জাল অতি সন্তর্পণে গড়ে তোলা হচ্ছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ২০০১-এর মতো এক বিপর্যয় নেমে আসা বিচিত্র নয় বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। আবার বিএনপির কথায় ফেরা যাক। বিএনপি যে একটা আত্মকেন্দ্রিক বা স্বার্থপর দল এতে কোন সন্দেহের অবকাশ আছে কি? আজ বেগম জিয়া যখন কারাগারে নিক্ষিপ্ত তখন বিএনপি তার শরিক দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার আশায় হা-পিত্যেশ করে ফিরছে। কিন্তু তাদের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী যখন বিপদাপন্ন এবং রীতিমতো অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে তখন বিএনপির কাছ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা-সহানুভূতি তারা পায় না বা পাচ্ছে না বলে জামায়াত মহলে কানাঘুষা শোনা যায় বৈকি! আজ যখন বিএনপির অবস্থা বেগতিক তখন তাদের হয়ে শরিকদের রাস্তায় নামানোর জন্য বিএনপি নেতারা এক প্রকার মায়াকান্নাই জুড়ে দিয়েছেন। আজকের এই দুর্দিনে তাই শরিকদের কাঁধে সওয়ার হওয়ার জন্য বড়ই ব্যাকুল তারা। শরিকরা বিপদে পড়লে বিএনপি যে সারস পাখির মতো বালুতে মুখ লুকিয়ে না দেখার ভান করতে পারঙ্গম এমনটাই শরিকদের চোখে প্রতিভাত হয়েছে বরাবর। আজ বিএনপি নেত্রী দুর্নীতি আর অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে, এমন অবস্থায় শরিকরা তার মুক্তির জন্য রাস্তায় নামবে, বিক্ষোভ করবে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধে ফেটে পড়বে এটিই প্রত্যাশিত; কিন্তু এই শরিকদের প্রতি বিএনপি ইতোপূর্বে বিমাতাসুলভ আচরণ করায় তারা বেগম জিয়ার ব্যাপারে আজ মাঠে নামতে আগ্রহী হবে কেন? নিজের বেলায় একরকম আর শরিকদের ব্যাপারে অন্যরকমÑ এহেন মানসিকতা নিশ্চয়ই কোয়ালিশন চেতনার সঙ্গে মেলে না। এটি কোয়ালিশনের ধর্ম হতে পারে না নিশ্চয়ই! কিন্তু বিএনপি তো এটিই করেছে এতকাল। তাই শরিকরা আর আস্থা পায় না বিএনপির ওপর। অন্যদিকে, সম্প্রতি লন্ডনে তারেক রহমানের লোকেরা বাংলাদেশ দূতাবাসের ওপর যে হামলা চালিয়েছে তাতে বিএনপির প্রকৃত স্বরূপটিই বেরিয়ে এসেছে নয় কি? বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের দূতাবাসের ওপর হামলা চালানোর মতো জঘন্য কাজটি তারা করতে পারে এজন্য যে, তারা বর্তমান বাংলাদেশকে বোধ করি নিজ দেশই মনে করে না। তারেক ও তার গু-াপা-ারা যে এখনও যুক্তরাজ্যে বসে বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণ করছে এই হামলায় তা আবার প্রমাণিত হলো। এই জঘন্য হামলা চালিয়ে তারা শুধু নিজ দেশের দূতাবাসের সম্পদ-সম্পত্তিই ধ্বংস করেনি, তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও ভাঙচুর করেছে। এতে তাদের আসল চেহারা অর্থাৎ স্বাধীনতাবিরোধী চেহারাটিই ফুটে উঠেছে আবার। যুক্তরাজ্য সরকার তারেক জিয়া নামক এক মহাদুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত আসামি, লুটেরা, খুনিকে কিভাবে আশ্রয় দেয়? এমন একজন দাঙ্গাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও খুনিকে আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে প্রকারান্তরে যুক্তরাজ্য সরকার যে এক ধরনের অনৈতিক কাজ করে চলেছে এতে কোন সন্দেহ আছে কি? যুক্তরাজ্য তারেকের অপকীর্তি সম্পর্কে জানে না তা তো হতে পারে না। সবকিছু জেনেও এই ধরনের এক দুর্নীতিবাজকে সেখানে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য নিজ ভাবমূর্তির প্রভূত ক্ষতিসাধন করছে বৈ নয়! জনগণের বিপুল টাকা আত্মসাৎ আর কয়েকটি খুনের সঙ্গে জড়িত তারেক বাংলাদেশে আদালত কর্তৃক দ-িত এক আসামি! অথচ যুক্তরাজ্য তাকে কি কারণে এত সাফ-সুতরো ভাবছে তাও তলিয়ে দেখতে হবে নিশ্চয়ই। আজকের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোন দ- বা সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা বা দলে বড় পদে আসীন রাখা কোনক্রমেই উচিত নয়। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোন প্রকার ছাড় দেয়া চলতে পারে না। আর এক্ষেত্রে সকল দল-মতের মানুষের তথা দেশের নাগরিকদের মনে এই চেতনা বদ্ধমূল হতে হবে যে, দুর্নীতিবাজ বা অপরাধী সে যত বড়ই হোক তাকে তোষণ করা চলবে না। এমন ব্যক্তিদের গোষ্ঠীস্বার্থে ক্ষমতাবান করে তোলার হীন প্রক্রিয়া ও প্রচেষ্টা বন্ধ করতেই হবে। যে দুর্নীতিবাজ ও সাজাপ্রাপ্ত তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা দেশ কিংবা দলের কোন পদে তাকে আসীন হতে দেয়া যেতে পারে না এমন দৃষ্টান্ত আজ স্থাপন করা গেলে ভবিষ্যতে যে কোন দলের দুর্নীতিবাজরা নির্বাচনে দাঁড়ানো বা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করার সাহস পাবে না আর তা যে সবার জন্যই বেহতর হবে এতে কোন সন্দেহ নেই নিশ্চয়ই। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
×