ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাবউদ্দিন মাহমুদ

সমৃদ্ধির নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সমৃদ্ধির নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ

(গতকালের পর) মধ্যম আয়ের দেশের শর্ত পূরণ বিশ্বব্যাংকের মাপকাঠিতে এরই মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। দেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ও স্বীকৃতি এটি। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি বড় অর্জন ও মাইলফলক। সরকারের ১০ বছরের প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার প্রচেষ্টার কথা বলা আছে। এর আগেই মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য খাতে সাফল্য সরকারের ৯ বছরে একগুচ্ছ সাফল্য স্বাস্থ্য খাতকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। সাড়ে ৯ হাজার নার্স নিয়োগ, মন্ত্রিসভায় নতুন ওষুধনীতির খসড়া অনুমোদন, শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন, হেলথ কার্ড বিতরণ, ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণে চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, মডেল ফার্মেসির যাত্রা, ধনুষ্টঙ্কার নির্মূল, শিশুমৃত্যু হ্রাস, জিকা ভাইরাসসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। জাতীয় ওষুধনীতি অনুমোদন জাতীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন, খাদ্যে ভেজাল নিরূপণের জন্য ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরি স্থাপন, গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স এ্যান্ড ইম্যুনাইজেমন (এঅঠও) শ্রেষ্ঠ এওয়ার্ড লাভ ইত্যাদি স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য। মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে সরকারের যে অঙ্গীকার, তা বাস্তবায়িত হচ্ছে অনেকাংশে। বিদ্যুত খাতে সাফল্য ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুত খাতে ৯ বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সরকার বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এ খাতের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। একই সঙ্গে বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার এনার্জিভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার হতে বিদ্যুত আমদানির উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বর্তমানে সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ৮৩% এবং সর্বমোট গ্রাহক ২ কোটি ৮৩ লাখ। সমৃদ্ধির নতুন দুয়ার অর্থনৈতিক অঞ্চল সরকারী ও বেসরকারী খাতে দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। নতুন করে ৯টি যোগ হলে স্থান নির্বাচন হওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংখ্যা দাঁড়াবে ৮৮ সালে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন ২০১০- এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রতিষ্ঠা করে সরকার। এ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে সম্প্রতি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এগুলো প্রতিষ্ঠা হলে এর মধ্যে শিল্প স্থাপন হবে। এতে ১ কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বৃদ্ধি পাবে আয়। এতে বাড়বে জীবনযাত্রার মান। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকগুলোরও উন্নয়ন হবে, যা বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। যোগাযোগ খাতে সাফল্য গত নয় বছরে দেশের যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। প্রতিবন্ধকতাহীন ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে বর্তমান সরকারের নয় বছরে দেশের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প। পদ্মা সেতু আজ স্বপ্ন নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে নির্মাণ করা হচ্ছে টানেল যা চট্টগ্রামের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পের কাজ, উত্তরা থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফেনীতে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ, গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প গ্রহণ, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ, মেট্রোরেলের কাজ শুরু করাসহ অনেকগুলো উন্নয়ন কাজ এ যাবতকালে সরকারের বড় সাফল্য। শিক্ষাখাতে সরকারের অর্জন প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ শিক্ষাখাতে বিরাজমান অস্থিরতা সত্ত্বেও শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো, ১ জানুয়ারি শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তির ব্যবস্থা। সারাদেশের একত্রিশ হাজার বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ। বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭ ভাগে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অর্জন ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা নিয়ে বর্তমান সরকারের যাত্রা শুরু ২০০৯ সাল থেকে। বিগত ৯ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটেছে। ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েবপোর্টাল চালু করা হয়েছে। এভাবেই প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য ও সেবা পৌঁছে গেছে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়। বিশেষজ্ঞরা তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক এই অবিস্মরণীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে আখ্যায়িত করছেন ডিজিটাল রেনেসাঁ বা ডিজিটাল নবজাগরণ হিসেবে। সেই রকম আরও উল্লেখযোগ্য সেবা কার্যক্রম হলো মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে লেনদেন এবং অনলাইন ব্যাংকিং। বিশ্বায়নের সব সুবিধা গ্রহণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে। এতে করে ২০২১ সালের অনেক আগেই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনয়ন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছবিযুক্ত পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেইজ তৈরি করে ওই ডাটাবেজের বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহকে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার আওতায় আনয়ন, অনলাইনে ভর্তি আবেদন, শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয় প্রবেশপত্র, প্রশংসাপত্র, ডিজিটাল আইডি কার্ড, ছাড়পত্র প্রিন্ট, প্রতিষ্ঠানের সব অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফলাফল তৈরি ও অনলাইনে ডাউনলোড, পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, গ্রেডিং সিস্টেমে ফলাফল প্রকাশ, পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয় প্রশংসাপত্র, শিক্ষক/শিক্ষার্থীর বায়োমেট্টিক অনলাইন হাজিরা ব্যবস্থাপনা, উপস্থিত/অনুপস্থিতির এসএমএস, শিক্ষার্থীদের পেমেন্ট নিশ্চিত করার জন্য এসএমএস, শিক্ষক/কর্মচারীদের ছুটি ব্যবস্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের স্বয়ংক্রিয় হিসাব ব্যবস্থাপনা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি প্রদান ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরার সাহায্যে অনলাইন নজরদারি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে এসএমএস নোটিফিকেশন প্রেরণ। সরকারের আইসিটি ইন এডুকেশন মাস্টার প্ল্যান (২০১২-২০২১) ও ই-লার্নিং কার্যক্রমের আওতায় ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের কার্যক্রম এগুচ্ছে দ্রুতগতিতে। চলবে... লেখক : গবেষক
×