ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ অনেকেই প্রতারিত

প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা বানিয়ে’লাখ লাখ টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা বানিয়ে’লাখ লাখ টাকা আত্মসাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৩ অক্টোবর ॥ প্রধানমন্ত্রীর স্কুল এই নাম করে শহরের মুসলিম নগরে অবস্থিত মা মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে চম্পট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কলেজের অধ্যক্ষ শাহীনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করেছেন স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীরা। বর্তমানে স্কুলটিতে তালা ঝুলছে। এলাকাবাসী, শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানায়, জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে যাত্রা শুরু করে স্কুলটি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদুল হক প্রধান (তিনি বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের বাইরে কর্মরত), ওয়ার্ড কমিশনার আল মামুন, মহিলা কমিশনার নাজিরা আক্তার স্বপ্নাসহ অনেকে। শিক্ষক/শিক্ষিকারা জানুয়ারি থেকে তাদের দায়িত্ব শুরু করলেও নিয়োগ পান ২০১৫ সালের মে মাসে। নিয়োগপত্র অনুযায়ী একজন সহকারী শিক্ষক প্রতিমাসে ৪ হাজার সাতশ’ স্কেলে ৯ হাজার সাতশ’ পঁয়তাল্লিশ টাকা হারে বেতনভাতাদি পাবেন। নিয়োগপত্রের ২০ নং শর্ত অনুযায়ী নিয়োগপত্র গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে মা ফাউন্ডেশন পরিচালিত মা মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের নামে মা ফাউন্ডেশনের হিসাব নম্বরে নিয়োগপত্রে উল্লেখিত অনুদানের টাকা জমা দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী শিক্ষকগণ অনুদানের টাকা অধ্যক্ষ শাহীনের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ ৬ মাস গত হলেও কোন বেতন-ভাতাদি না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা। বেতন ভাতা চাইতে গেলে অধ্যক্ষ শাহীন আজ দেব, কাল দেব বলে শিক্ষকদের সঙ্গে টালবাহানা শুরু করেন। অবশেষে ২০১৫ সালের জুন মাসে শাহীন লা-পাত্তা হয়। অনেক যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি বলে জানান শিক্ষকরা। অবশেষে ক্ষোভে স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষকরা। যে তালা আজও ঝুলছে স্কুলটিতে। অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী জমি-জমা বিক্রি এবং ঋণ করে ওই স্কুলে অনুদানের টাকা প্রদান করলে আজও আশার মুখ দেখেননি শিক্ষকসহ অন্য কর্মচারীরা। ওই বছর স্কুলটিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিল প্রায় ৫০ জন। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী ভর্তি ফি ও সেশন ফি বাবদ টাকা দিয়েছিল ৪শ’ টাকা হারে, সে টাকাও আত্মসাত করেছে শাহীন। স্থানীয়রা জানান, শাহীনের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়, তার শ^শুরবাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ডাডুয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায়। সে বর্তমানে তার শ^শুরবাড়িতে অবস্থান করছে। তার ভায়রা রফিকুল ইসলাম খানসামার টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক এমদাদুল হক শরিফ জানান, শাহিন আমাদের বলেছিল এটা প্রধানমন্ত্রীর স্কুল। ওনার মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে এই স্কুলগুলো পরিচালিত হবে। তিনি আরও জানান, উল্লেখ রয়েছে, মা বলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে স্কুলের অধ্যক্ষ শাহীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ওই টাকা আমি গ্রহণ করিনি। ওই টাকা প্রদান করা হয়েছিল মা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপককে। তারা বর্তমানে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জেল হাজতে রয়েছেন। মা মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষিকা রওশন আরা জানান, আমি এই স্কুল পরিচালনার জন্য অনুদান হিসেবে অধ্যক্ষ শাহীনকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে নিয়োগও দিয়েছে, নিয়োগপত্র অনুযায়ী প্রতিমাসে ৯ হাজার সাতশত ৪৫ টাকা হারে বেতন ভাতাদি দেয়ার কথা, কিন্তু ১০ মাস গত হলেও কোন বেতনভাতাদি পরিশোধ করেনি। উল্টো তিনি স্কুলের আসবাবপত্র বের করে ভাড়াটিয়া উঠানোর চেষ্টা করেছে। আমরা সেটা করতে দেইনি। কলেজের অধ্যক্ষ বর্তমানে পলাতক রয়েছে। মা মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন খানসামার টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম রফিক। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই স্কুলের সঙ্গে আমার তেমন কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। আমি শুধু ওই স্কুলে শিক্ষক পদে একজন প্রার্থী দিয়েছিলাম। স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নয়ন জানান. আমাকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য করা হয়েছিল এবং আমি আমার বাড়িভাড়া দিয়েছিলাম স্কুল পরিচালনার জন্য কিন্তু আমি এতো কিছু জানি না। বাড়িভাড়ার চুক্তিপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, চুক্তিপত্রে আমার স্বাক্ষর ছিল কিন্তু শাহীনের কোন স্বাক্ষর নেই। সে জন্য আমিও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না।
×