ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩১ জুলাই ২০১৭

প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সব সময় সুসম্পর্কে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ। এটা স্বাভাবিক যে, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সমস্যা থাকতেই পারে কিন্তু বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতাও চলমান থাকবে এবং যে কোন সমস্যাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার রফিউজ্জামান সিদ্দিকী রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাতকালে আরও বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সীমান্ত এবং সমুদ্রসীমা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছে। ভারতের সংসদ সীমান্ত চুক্তিসংক্রান্ত বিলটি সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করেছে। ভারতের সঙ্গে সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ সমাধান সমগ্র বিশ্বের কাছে একটি উদাহারণ সৃষ্টি করেছে। তিনি মিয়ানমারের সঙ্গেও সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধানের কথা উল্লেখ করে বলেন, একই ভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সমস্যার সামাধান করা হয়েছে। আমরা শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত থেকে ৬২ হাজার শরণার্থী ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দারিদ্র্যকে এ অঞ্চলের প্রধান শত্রু উল্লেখ করে এ অঞ্চলের দেশগুলো থেকে দারিদ্র্যের মুলোৎপাটনে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের নেতৃত্বে গত সাড়ে আট বছরে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের খ-চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পরই কতগুলো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগিয়ে যাই। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষা এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এ কারণে জনগণ এখন এগুলোর সুফল পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসবের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কার্যকর নীতিমালা বিশেষ করে অর্থনৈতিক নীতিমালা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ২০০১ সালে তার সরকার বিএনপি-জামায়াত জোটের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার অংশ হিসেবে জনকল্যাণসম্পর্কিত বিভিন্ন কর্মসূচী যেমন সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা এবং একটি বাড়ি একটি খামারের মতো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে পরিচালিত গ্রেনেড হামলা এবং জঙ্গীদের সাহায্যে দেশের ৬৩টি জেলার ৫শ’ স্থানে একযোগে বোমা হামলার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি সন্ত্রাসবাদের হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, আসলে এতে অস্ত্র ব্যবসায়ীরাই লাভবান হচ্ছে। এ সময় পাকিস্তানের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের ধারায় পুরোপুরি পরিবর্তিত একটি দেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমর্থ হয়েছেন তাতে পাকিস্তানের জনগণও আনন্দিত। গত বছর গুলশানের হলি অর্টিজান রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই হামলার পর আর এ ধরনের কোন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদকে কঠোরহস্তে দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে অনেক সাধারণ বিষয় রয়েছে এবং দু’দেশের সম্পর্কোন্নয়নেই তিনি কাজ করে যেতে চান। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এবং প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহম্মদ জয়নুল আবেদীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ঝরনা রানীর পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের দিন জঙ্গী হামলায় নিহত ঝরনা রানী ভৌমিকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেসরকারী এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সহকারী অফিসার পদে ঝরনা রানীর ছেলে বাসুদেবকে চাকরি দিলেন তিনি। রবিবার প্রধানমন্ত্রী এ নিয়োগপত্র বাসুদেবের হাতে তুলে দেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ব্যাংকটির উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত বছর ঈদুল ফিতরের দিন জঙ্গীদের বুলেট ঝরনা রানীর প্রাণ কেড়ে নেয়। শোয়ার ঘরের ভেতরেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ঝরনা রানী ভৌমিক। তার স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিক শহরের একটি বিড়ি ফ্যাক্টরির অল্প বেতনের কর্মী। এ সময় শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম দিকে প্রায় ১৫০ গজ দূরে আজিমউদ্দিন স্কুলের পাশে সবুজবাগ গলির মুখে জঙ্গী হামলায় দুই পুলিশ সদস্যও নিহত হন।
×