ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খন্দকার মাহবুবুল আলম

পরিবারের দায়িত্ব

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৫ জুন ২০১৭

পরিবারের দায়িত্ব

একদিন নগরীর সড়ক পথে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় সুরেলা কণ্ঠ কানে ভেসে এলো। গানের কথা ‘বাড়ছে দেশে জনসংখ্যা, মানুষ বাড়ল না’। চোখ ফিরে তাকাতে গিয়ে দেখি এক অখ্যাত শিল্পী নগরীর রাস্তার ফুটপাথে দাঁড়িয়ে গানটি গেয়ে যাচ্ছিলেন। ভাবলাম আসলেই তাই। আমরা জনসংখ্যা হয়েই রইলাম, কিন্তু মানুষ হলাম না। জনসংখ্যা শুধু সংখ্যাই নয় বড় ধরনের একটি শঙ্কা। এটি অভিশাপ! একটি সমস্যা। এ সমস্যা বিশ্বের এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও বিরাজমান। সব সমস্যার মূলে রয়েছে এই জনসংখ্যা সমস্যা। এটিকে কেন্দ্র করেই বাকি সব সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ রকম জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে অনেকে সমস্যা হিসেবে বিবেচনায় আনতে চায় না। এটি হচ্ছে এক ধরনের অজ্ঞতা। অজ্ঞতার সঙ্গে দরিদ্রতার মেলবন্ধন রয়েছে। তাহলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ হবে কোত্থেকে? এক পরিসংখ্যান তথ্যে জানা যায় বিশ্বের জনসংখ্যা ৭১০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। ক্ষুদ্র পরিসর ভূখ- বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি বা তারও অধিক। স্মর্তব্য যে, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। যা আজ তৎকালীন সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে অষ্টম পর্যায়ে। ১৯৭০-৭১ এর তুলনায় এ দেশের জনসংখ্যা বর্তমানে দ্বিগুণের বেশি হওয়া সত্ত্বেও সে সময়ের চাইতে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তি নির্ভরতা ও জাতীয় অর্থনৈতিক আপাত সুষ্ঠু নীতিমালার কারণে। তাই বলে জনসংখ্যা সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়া না হলে আগামী পরিস্থিতিও যে সুখকর থাকবে তা কিন্তু ঠিক নয়। অফুরন্ত সম্পদ বা অর্থ-বিত্তশালী দেশের জন্য কখনও-কখনও জনসংখ্যা আশীর্বাদ হলেও আমাদের মতো দেশের জন্য কখনও আশীর্বাদ হতে পারে না। যে পরিবার নিয়েই সমাজ-দেশ বা রাষ্ট্র, সেই পরিবারের উপরই মূল দায়িত্ব থাকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের। সে দায়িত্ব কি পরিবারগুলো পালন করে সঠিকভাবে? একটি পরিবারে লোক সংখ্যা বাড়লে এই পরিবারের মধ্যে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। যেমন পরিবারের লোকসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় ভুসম্পত্তি কম হলে স্থান সঙ্কুলানের অভাব, আর্থিক সমস্যাজনিত অভাব-অনটন, অশিক্ষা-স্বাস্থ্যহীনতা, বেকারত্ব, ভিক্ষাবৃত্তি, নীতিবিবর্জিত কর্মকা- সংঘটিত হয়ে চলে। এসব হচ্ছে মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধিরই কুফল। যার প্রভাব পরিবারের গ-ি পেরিয়ে সমাজ-দেশ বা রাষ্ট্রে গিয়ে পড়ে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ‘ম্যালথাস’ বহুকাল আগে তার ‘ম্যালথাসবাদ’ থিওরীতে বলেছিলেন, জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যার দরুন ভবিষ্যতে মানুষের মধ্যে নানা রোগ-জরা-ব্যাধি থেকে শুরু করে বহুদিন জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা আজ আমাদের জন্য সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অশিক্ষা-মূর্খতা ইত্যাদি কারণে মানুষ জন্ম নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সচেতন নয়। এখনও অনেক মানুষ মনে করে থাকেনÑ ‘মুখ দিচ্ছেন যিনি (সৃষ্টিকর্তা) খাওয়াবেনও তিনি। অজ্ঞতাবশত এমন মনে করলেও বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। বাজারে মুদির দোকানে এক সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিশেষ উপকরণ দেখা যেত। মানুষকে জন্ম নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধ করতে এমন উপকরণ খোলা বাজারে আনা হলেও মানুষ তা সহজে গ্রহণ করত না। এক শ্রেণীর লোক ধর্মের ভুল দোহাই পেড়ে এসব ব্যবহারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করত। এই ফাঁকে জনসংখ্যা হু-হু করে বাড়ল। আর এসব জন্ম নিয়ন্ত্রণ উপকরণ যে সময় শিশুদের খেলার সামগ্রীতে পরিণত হলো। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেই সচেতনতা এখনও ফিরে আসেনি। সর্বোপরি জনসংখ্যা সমস্যার সমাধানে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে নানা কর্মসূচি গ্রহণে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। কারণ সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। আনন্দ বাজার, চট্টগ্রাম থেকে
×